বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

করোনায় বেশি বেশি কোরবানি দিন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১৬ এএম, ১৯ জুলাই, ২০২১

কোভিড-১৯ এখন বাংলাদেশে ব্যাপক রূপ নিচ্ছে। গত প্রায় দেড় বছর কমবেশি এই করোনা দেশে ছিল কিন্তু ইদানিং ভারতীয় ধরনের করোনা দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আক্রমণ করে, ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ও রাজধানীতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিমাণ অনেক। এমন সময় আমাদের সামনে ঈদুল আজহা উপস্থিত। পবিত্র হজও গত বছরের মতো এ বছরও সীমিত আকারে পালিত হবে। কেবল সউদী আরবে অবস্থানরত নানাদেশের ৬০ হাজার মানুষ হজ করতে পারবেন। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে এর সংখ্যা হয়ে থাকে ২৫/৩০ লাখ। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। মানুষ চলাফেরা করলেও খুব সতর্ক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে হচ্ছে। হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ ভরে গেছে। নতুন রোগীর জায়গা হচ্ছে না।

এই ঈদ আপনার আমার মতোই কিছু লোকের জন্য হতে পারে জীবনের শেষ কোরবানির ঈদ। অনেকের জন্য হতে পারে জীবনের শেষ কোরবানি। অতএব, আল্লাহকে খুশি করার জন্য খুব নিষ্ঠার সাথে আমাদের এবারের কোরবানি অবশ্যই করা উচিত। যারা নিজেরা কোরবানির কাজটি আন্জাম দেয়ার শক্তি সাহস রাখেন না, তারা ইমাম আলেম বা অন্য কারো সহযোগিতায় বেশি করে পশু কিনে অভাবি মানুষকে দিয়ে দিন। নিজ এলাকায় বা পরিচিত লোকের গ্রামে ২০/৩০ জনের জন্য একটি পশু পাঠিয়ে দিন। নিয়্যত আপনি করবেন কোরবানির। গ্রহিতারা উপহার স্বরূপ গোশত বণ্টন করে নেবে। আর্থিক সঙ্কটের দিনে শত শত পরিবারকে কোরবানির গোশত পৌঁছে দেয়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

নবী করিম (সা.)-কে সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, এই কোরবানির বিনিময়ে আমরা কী পাব হে রাসূল। নবীজি বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে সওয়াব। একজন বললেন, লেজের গোছার কি হবে? নবীজি (সা.) বললেন, লেজের গোছার প্রতিটি চুলেও একটি করে সওয়াব। (তিরমিজি শরিফ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোরবানি হচ্ছে তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নত। কোরবানি করার কথা পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় বলা হয়েছে। সূরা কাওসারে আল্লাহ বলেন, অতএব আপনি আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ুন আর পশু কোরবানি করুন। (আল কোরআন ৩০)।

দোয়া কালাম পড়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে কিংবা অনলাইনে পশু কিনে আল্লাহর ওয়াস্তে কোরবানি করতে হবে। নিজে কেনার ঝামেলায় না গিয়ে আগ্রহী মানুষকে দায়িত্ব দিলেও চলে। তারা পশু কেনা থেকে শুরু করে গোশত তৈরি পর্যন্ত করে দিতে পারে। কোরবানির গোশত নিজে যতটুকু ইচ্ছা রাখা যায়। একভাগ আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী। আরেকভাগ অভাবি মানুষকে প্রদান করা উত্তম। কেউ নিজের ওয়াজিব কোরবানির পর নফল হিসাবে আরো বহু কোরবানি দিতে পারেন। নবী করিম (সা.) একবার নিজ হাতে ৬০টি পশু কোরবানি দেন। তিনি জীবনের প্রতি বছর কোরবানি করতেন।

করোনার এ সময় কোরবানি না করার চিন্তা সঠিক নয়। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কোরবানি করা উচিত। এতে দেশের লাখো মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। সাধারণত দেড় কোটি পশু কোরবানির সময় কেনাবেচা হয়। এবার ৯০ লাখের মতো পশু কোরবানির নিয়তেই পালন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের ব্যাপক উপকার ছাড়াও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। আল্লাহর দেওয়া রিজিক পশুসম্পদের শুকরিয়াও আদায় হবে। যাদের আল্লাহপাক সামর্থ দান করেছেন, তাদের উচিত অভাবি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য পশু কিনে দেওয়া, এলাকার অসহায় মানুষকে কোরবানির পশু দান করা, শ্রমিকদের কোরবানির পশু উপহার প্রদান করা। বিভিন্ন জায়গায় মাদরাসা ও এতিমখানায় একেকটি কোরবানির পশু কিনে দিয়ে দেওয়া। যাদের কোরবানি করার লোক নেই, তারা খোঁজ নিয়ে মাদরাসা ও এতিমখানায় দায়িত্ব দিতে পারেন। পশু কিনে কোরবানি করে আপনার বলে দেয়া অংশ আপনাকে পৌঁছে দিয়ে বাকিটা তারা রেখে দেবেন। কোরবানির পশুর চামড়া মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করে দিন।

কোরবানির চামড়া মাদরাসার এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দিলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। এক. দানের সওয়াব। দুই. দীনি শিক্ষা বিস্তারের সওয়াব। কোরবানির চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা ও সরকার ইসলামী শিক্ষার প্রসারে অংশ নিতে পারে। এতে সবার উপর রহমত বরকত নেমে আসে। আজাব গজব ফিরে যায়। গত কয়েকবছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে এক ধরনের হতাশা চলছে। রফতানির সুব্যবস্থা করে এবং সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার বন্ধ করে সরকার চামড়ার মূল্য যৌক্তিক এবং স্থিতিশীল করবেন এটাই প্রত্যাশা। করোনায় বেশি বেশি কোরবানি করে আসুন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দয়া লাভ করি। কোরবানির ওসিলায় আল্লাহ এই ভয়াবহ করোনা থেকে আমাদের হেফাজত করুন। সারাবিশ্বের মানুষকে হেদায়েত দান করে নিরাপদ রাখুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
মনিরুল ইসলাম ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৪ এএম says : 0
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানির পশু জবাই করতে হবে। আল্লহর কাছে (কুরবানির পশুর) মাংস, রক্ত পৌঁছে না, বরং আল্লাহর কাছে তোমাদের তাকওয়া (তথা একনিষ্ঠভাবে সম্পন্ন আমল) পৌঁছে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৭)
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৪ এএম says : 0
সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর শর্তসাপেক্ষে কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ (সুরা : কাউসার, আয়াত : ২)।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৪ এএম says : 0
নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শুধুমাত্র একটি কোরবানি ওয়াজিব হয়। অনেক সম্পদের মালিক হলেও একটি কোরবানি ওয়াজিব হবে। অবশ্য সে একাধিক পশু কোরবানি করতে চাইলে সওয়াবের অধিকারী হবে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
বছর ঘুরে আবারো এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের জীবনে ঈদুল আজহা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের সামর্থ্য অনুসারে প্রতিটি বছর ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি দিয়ে থাকে
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৬ এএম says : 0
দুঃখজনক হলেও সত্য, হাজার বছর ধরে কোরবানির ধারাবাহিকতা পালন করলেও, এর সঠিক তাৎপর্য মুসলমানরা অনুধাবন করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। একইভাবে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রকৃত মর্ম অনুধাবন এবং তা গ্রহণেও মুসলমানরা ব্যর্থ বলা যায়। আর তাই মুসলিম সমাজে এখনো সত্যিকারের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
Total Reply(0)
কামরুল ইসলাম ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৬ এএম says : 0
সত্যিকারের ঈদুল আজহার শিক্ষা কাজে লাগাতে হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির পাশাপাশি নিজেদের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা পশুত্বকেও কোরবানি দিতে হবে। তাহলেই কেবল ঈদুল আজহার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর এবং শান্তির সমাজ নির্মাণ সম্ভব।
Total Reply(0)
নোমান মাহমুদ ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৬ এএম says : 0
কোরবানি মুসলমানদের জীবনে একটি অত্যন্ত আনন্দের দিন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর নামে পশু কোরবানি দেয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়।
Total Reply(0)
জোবায়ের খাঁন ১৯ জুলাই, ২০২১, ৪:৪৭ এএম says : 0
স্বাভাবিকভাবেই কষ্টে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে কোরবানি দিতে পারায় প্রতিটি মুসলমান আনন্দিত হয়। পশু কোরবানি দেয়ায় আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এটাই প্রতিটি মুসলমান বিশ্বাস করে।
Total Reply(0)
শেখ আল হেলাল ১৯ জুলাই, ২০২১, ৭:৫০ এএম says : 0
পশু কোরবানির মাধ্যমে যেভাবে ত্যাগের দৃষ্টান্ত আমরা দেখাতে পারি, এমনিভাবে আমাদের কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
Total Reply(0)
শোয়াইব আহমাদ ১৯ জুলাই, ২০২১, ৮:৫০ এএম says : 0
করোনার এ সময় কোরবানি না করার চিন্তা সঠিক নয়। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কোরবানি করা উচিত।
Total Reply(0)
mahmud ১৯ জুলাই, ২০২১, ৮:৫২ এএম says : 0
কি পরিমান অর্থ সম্পদ থাকলে কোরবানি করা আবশ্যক?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন