ইসরায়েলের সংবাদ সংস্থা হারেটজ সোমবার জানিয়েছে যে, ভারত ইসরায়েলের স্পাইওয়্যার প্রতিষ্ঠান এনএসও’র মাধ্যমে তাদের হ্যাকিং সফটওয়্যারের ‘পেগাসাস’ দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ব্যবহৃত একটি ফোনকে টার্গেট করেছিল। এতে আরও বলা হয়েছে যে, বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা, কাশ্মীরি মুক্তিযোদ্ধা, ভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ অনেককেই টার্গেট হিসাবে দেয়া হয় পেগাসসাকে।
এর আগে, ফরাসি সংবাদপত্র লে মনডে রবিবার দাবি করেছে যে, ভারতের টার্গেটের তালিকায় ভারতে নিযুক্ত চীন এবং ইরানের কূটনীতিবিদদের নামও। তাছাড়া ভারতে নিযুক্ত বহু সৌদি, নেপাল, আফগান কূটনীতিবিদদের ফোনও হ্যাক হয়ে থাকতে পারে বলে দাবি করে। একই সাথে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, দিল্লিতে অবস্থিত মার্কিন সিডিসির দুই কর্মকর্তা এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ভারতীয় প্রধান হরি মেননের নামও রয়েছে তালিকায়। সংবাদ সংস্থাটি দাবি করে যে, পেগাসাসের ক্লায়েন্ট হিসাবে তালিকাভুক্ত ১০টি দেশের মধ্যে ভারত ছিল।
এরপর পাকিস্তানের একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল দাবি করে যে, স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে পাকিস্তানের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের ফোনালাপ এবং বার্তাগুলিতে আড়িপাতার চেষ্টা করেছে, যা পাকিস্তানকে তার মন্ত্রীদের জন্য নতুন সফটওয়্যার তৈরি করতে প্ররোচিত করেছে। দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মোদি সরকারের অনৈতিক নীতিগুলি ভারত ও এ অঞ্চলকে বিপজ্জনকভাবে মেরুকৃত করেছে।’
তদন্তভিত্তিক সংবাদ ভারতীয় ওয়েবসাইট ‘দ্য ওয়্যার’ জানায় যে, মোদি সরকারে এই আড়িপাতার তালিকায় ভারতের সরকারী মন্ত্রী, বিরোধী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, বিজ্ঞানী এবং আন্দোলন কর্মীরা সহ ভারতে ব্যবহৃত ৩ শ’ এরও বেশি মোবাইল ফোন নম্বরও রয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান বলেছে যে, তদন্তে পেগাসাসের ‘ব্যাপক এবং অব্যাহত অপব্যবহার’ করে মেসেজ, ফটো, ইমেলগুলি এবং কল রেকর্ড নিষ্কাশন সক্ষম করতে স্মার্টফোনগুলিকে সংক্রমিত করে। এবং গোপনে মাইক্রোফোনগুলি সক্রিয় করে। ভারতের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয় ওয়াশিংটন পোস্টের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সাফাই গেয়ে বলেছে, ‘যে কোনও কম্পিউটার রিসোর্সের মাধ্যমে যে কোনও তথ্যের নিষ্কাশন, পর্যবেক্ষণ বা ডিক্রিপশনে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে করা হয়।’
প্যারিসের নন-প্রফিট সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিস এবং অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশানালের উদ্যোগে একটি তদন্ত সংগঠিত করা হয়। সেই তদন্তে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে অংশগ্রহণ করে ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান এবং লে মনডে-এর মতো ১৬টি আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থা। তারা সবাই একযোগে রিপোর্টটি প্রকাশ করে। ফরবিডেন স্টোরির তরফে জানানো হয়েছে, ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের তালিকা সামনে এসেছে। ফোন নম্বরগুলি এনএসও-র ক্রেতাদের টার্গেট হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তবে এনএসও’র তরফে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেও এনএসও’র বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফোন হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল যে, মোদি সরকার সমাজকর্মী, সাংবাদিক ও আমলা-সহ ১৪ শ’ এরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রাহককে নিশানা করেছিল ইজরায়েলি এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, পেগাসাসের তালিকায় থাকা ৩৭ টি স্মার্টফোনের একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, সেখানে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি জীবিত থাকাকালীন তার ঘনিষ্ঠ দুই মহিলার ডিভাইসগুলির সফলভাবে হ্যাক করার হয়। এই তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন রাজপরিবারের বহু সদস্য, কমপক্ষে ৬৫ সিইও, ৮৫ মানবাধিকার কর্মী, ১ শ’ ৮৯ সাংবাদিক এবং ৬ শ’ এরও বেশি রাজনীতিবিদ ও সরকারী কর্মকর্তা-সহ রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে যে, তালিকায় রয়েছেন এজেন্সী ফ্রান্স-প্রেস, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সিএনএন, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, আল জাজিরা, এল পাইস, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, লে ম্যান্ডে, ব্লুমবার্গ, দ্য ইকোনমিস্ট এবং রয়টার্সের সাংবাদিকরাও। সূত্র: দ্য ট্রিবিউন, দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন