বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

দিক দর্শন : আহলে বাইতের পরিচয় ও ফজিলত

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মাদ খায়রুল বাশার
এ কথা সর্বজন বিদিত যে, ‘আহলে বাইত’ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রক্ত সম্ভূত বংশ ধারা দুজনের মাধ্যমে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। তাদের একজন হলেন সাইয়্যেদেনা হযরত হাসান ইবনে আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। তার উপনাম আবু মুহাম্মদ। তিনি রাসূলে কারীম (সা.)-এর কনিষ্ঠা কন্যা খাতুনে জান্নাত ফাতিমা (রা.)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার পিতা হলেন আসাদুল্লাহ হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)। হযরত হাসান (রা.) ১৬ রমজান মোতাবেক ৩/১ এপ্রিল ৬২৫ খ্রি. মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম যাহাবীর মতে, তার জন্ম হয়েছিল শাবান মাসে। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩ : ১৬৬)।
তিনি তার মাতামহ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ আদরের পাত্র ছিলেন। হযরত আবু বকর ছাকাফী (রা.) বলেছেন : একদা আমি দেখলাম রাসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের ওপর উপবিষ্ট। তাঁর পাশে রয়েছেন হযরত হাসান (রা.)। তখন রাসূলে কারীম (সা.) একবার উপস্থিত লোকদের দিকে ও একবার হযরত হাসানের দিকে তাকাতে ছিলেন এবং বলতে ছিলেন- “আমার এই সন্তান একজন বড় নেতা। আশা করা যায়, আল্লাহপাক তার দ্বারা মুসলিমদের দুটি দলের পারস্পরিক বিরোধ দূর করে মিলন ঘটাবেন।” (সহিহ বুখারী : কিতাবুস সুলহ) হযরত আনাস (রা.) বলেছেন : হযরত হাসান (রা.) অপেক্ষা রাসূলে কারীম (সা.)-এর সঙ্গে আকৃতিতে এত অধিক সাদৃশ্য আর কারোও ছিল না। (সহিহ বুখারি : ফাযায়িলু আসহাবিন নাবিয়্যি)।
হযরত হাসান (রা.)-এর শৈশবকাল পিতামাতা ও মাতামহ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ¯েœহছায়ায় অতিবাহিত হয়। তিনি প্রায়ই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। রাসূলে কারীম (সা.) মসজিদে নববীতে যা কিছু বলতেন, তিনি ঘরে এসে স্বীয় মাতা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.)-কে সেসব কথা শুনাতেন। তার আট বছর বয়সে রাসূলে কারীম (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়। মুসলিম জাহানের প্রথম তিনজন খলিফাও তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকালে বায়তুল মাল হতে ভাতা প্রদানের জন্য ভাতাপ্রাপ্তদের নামের তালিকা একটি দফতরে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। এতে হযরত হাসান (রা.)-এর নাম ছিল তৃতীয়। হযরত আব্বাস (রা.) ও হযরত আলী (রা.)-এর নাম ছিল যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। তাকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের সমান ভাতা (বছরে ৫০০০ দিরহাম) প্রদান করা হয়েছিল (আল বালাযুরী : ফুতুহুল বুলদান, যিকরুন আলা আল্ আতায়া ফী খিলাফাতি উমার)। হযরত ওসমান গনি (রা.)-এর খিলাফতকালে হযরত হাসান (রা.) তাবারিস্তানের অভিযানে (হিজরি : ৩০) অংশগ্রহণ করেছিলেন (ইবনুল আছির : আল্্ কামিল, ৩:৮৪)। হযরত ওসমান গনি (রা.)-এর বাসগৃহ বিদ্রোহীগণ অবরোধ করলে হযরত আলী (রা.) হযরত হাসান (রা.)-কে বিদ্রোহীদের বাধা প্রদান করতে প্রেরণ করেন। তিনি বাসগৃহের ফটকে আরও কয়েকজন যুবকসহ প্রহরায় মোতায়েন ছিলেন। বিদ্রোহীগণ ভিতরে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে আক্রমণ করে ও হযরত হাসান (রা.) বাধা দিতে গিয়ে আহত হন। কিন্তু তারা এতদসত্ত্বেও ফটক ছেড়ে দেননি। বিদ্রোহীরা তখন প্রাচীর টপকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছিল।
হযরত উসমান গনি (রা.)-এর শাহাদাতের পর হযরত আলী (রা.) খিলাফতের জন্য অনুরুদ্ধ হলে হযরত হাসান (রা.) পিতাকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, মুসলিম সা¤্রাজ্যের সকল অংশের লোক না চাইলে আপনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। হযরত আলী (রা.) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ‘উষ্ট্রযুদ্ধ’ সংঘটিত হয়েছিল। পিতার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা ও সক্রিয় সাহায্য আদায় করার জন্য হযরত হাসান (রা.) কুফায় গমন করেছিলেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি কুফার জামে মসজিদে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তার প্রচেষ্টায় কুফাবাসীরা হযরত আলী (রা.)-এর পক্ষে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয় এবং ৯৬৫০ ব্যক্তির একটি দল হযরত হাসান (রা.)-এর সঙ্গে ‘যীকার’ নামক স্থানে গমন করে হযরত আলী-(রা.)-এর সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। (আখবারুত্্ তিওয়াল : পৃ. ১৫৪)। সিফফীন যুদ্ধে হযরত হাসান (রা.) মুয়াবিয়া (রা.)-এর বিরুদ্ধে অদম্য সিংহের মতো লড়াই করেছিলেন এবং যুদ্ধ বিরতির চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন। হযরত আলী (রা.) গুপ্তঘাতক ইবনে মূলজাম কর্তৃক আহত হয়ে শাহাদাতবরণ করলে হযরত হাসান (রা.) ইরাক প্রদেশে খলিফা (হিজরি : ৪০) নির্বাচিত হন। খলিফা হওয়ার চার মাস পর সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া (রা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে খলিফা হযরত হাসান (রা.) সসৈন্যে বের হয়েছিলেন। ওদিকে মুয়াবিয়া (রা.)ও প্রস্তুত ছিলেন। দুই দল মাসকান নামক স্থানে সামনাসামনি হলে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। এই দুই দলের যুদ্ধ পরিণামে মুসলিম মিল্লাতের জন্য ধ্বংস আনয়ন করতে পারে আশঙ্কায় খলিফা হযরত হাসান (রা.) সন্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলেন (আল ইসতিয়াব : ১:৪০)। কারো মতে সন্ধির প্রস্তাব মুয়াবিয়া (রা.)-এর পক্ষ হতেই প্রথম দেয়া হয়েছিল (আল কামিল : ৩:৩৪২)। তারপর মুয়াবিয়া (রা.)-এর প্রতিনিধি দল খলিফা হযরত হাসান (রা.)-এর নিকট গমন করে সন্ধির শর্তগুলো চূড়ান্ত করেন। (চলবে)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন