মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাজার হাজার মানুষ হেঁটেই ঢাকার পথে

লকডাউনে যানবাহন বন্ধ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

ঈদুল আযহার ছুটি শেষে গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে সরকারের পূর্বঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধের মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় ফিরেছে। তবে সকাল ৬টার পর ঢাকায় কোনো দূরপাল্লার বাস প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। সে কারণে মহাসড়কে নেমেই পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করেছে হাজার হাজার মানুষ। রাজধানীর গাবতলীর আমিনবাজার, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়রে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে বাস থেকে নেমে হাজার হাজার মানুষকে পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নেমে কোনো যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা করতে বাধ্য হয়েছেন। এই সুযোগে রিকশাভাড়া বেড়েছে শত গুণ। গতকাল সকালে দেখা যায়, রাজধানীর প্রবেশ পথ আমিনবাজার ব্রিজে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। যে কারণে দূরপাল্লার সব যাত্রীদের আমিনবাজারে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় হেঁটে, রিকশা ও ভ্যানে রাজধানীতে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা।

ট্রাফিক বিভাগ পুলিশ জানিয়েছে, দূরপাল্লার কোনো পরিবহনকে রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ব্যক্তিগত গাড়িতে যারা গতকাল রাতে রওনা করেছেন, সেতুর টোল বক্সের টোকেন দেখে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায় কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড়, গাবতলী, মাজার রোড এবং পর্বত এলাকায় যাত্রীরা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তাদের কারো হাতে ব্যাগ, আবার কারো কোলে শিশু বাচ্চা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আমিনবাজার থেকে তাদের হেঁটেই ফিরতে হচ্ছে।

আমিন বাজার ব্রিজে কথা হয়, পঞ্চগড় থেকে আসা শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে গিয়েছিলাম। লকডাউনে আটকা না পড়তে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রওয়ানা দিয়েছিলাম। যানজটের কারণে বাস ঢাকায় ঢুকে সকাল ৯টায়। আমিনবাজার ব্রিজে আসলে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এখন হেঁটেই ফিরতে হচ্ছে মোহাম্মদপুরের বাসায়।

ট্রাফিক বিভাগের চেকপোস্টের কারণে আমিনবাজারে যানবাহনের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা যায়। চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদ বলেন, যারা বিধিনিষেধ শুরুর আগে রওয়ানা দিয়েও ঢাকা ঢুকতে পারেননি, শুধু তাদেরই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে পায়ে হেঁটে। লকডাউনের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো গণপরিবহনকে যাত্রীসহ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে পথচারীদের মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা হচ্ছে।

এদিকে সদরঘাটে ভোর থেকে হাজার হাজার যাত্রীকে পায়ে হেঁটে চলতে দেখা গেছে। সদরঘাটে নেমে কোনো যানবাহন না পেয়ে মানুষ পায়ে হেঁটেই রওনা করতে বাধ্য হয়। ভুক্তভোগিরা জানান, লকডাউনে রাজধানীর রাস্তায় যানবাহন কম। কিছু রিকশা চলাচল কররেও রিকশাচালকরা ভাড়া হাঁকছে আকাশছোঁয়া। এমতবস্থায় রাতের বাস বা লঞ্চে যারা সকালে ঢাকায় এসেছেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। যাদের শারিরিক সামর্থ আছে তারা পায়ে হেঁটেই রওনা করছেন। তবে এক্ষেত্রে বৃদ্ধ, বয়স্ক, মহিলা ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অকেনেই। বাধ্য হয়ে তখন আকাশছোঁয়া ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করছেন।

রাজধানীর মিরপুরের লোডেস্টার ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টসের ফিনিশিং বিভাগের অপারেটর লিজা আক্তার। ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বরিশালে যান। লকডাউনের কারণে গতকাল ভোর ছয়টায় লঞ্চ থেকে সদরঘাটে নামেন। সদরঘাটে নেমে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে দেখেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু যানবাহন হাতেগোনা। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে মিরপুরে যাওয়ার জন্য তিনি ও তার এক সহকর্মী রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরদাম শুরু করেন। রিকশাচালক ভাড়া দেড় হাজার টাকা দাবি করেন।
লিজা আক্তার বলেন, সারা মাস হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বেতন পাই ৮ হাজার টাকা। ঈদে বাড়ি গিয়ে টাকা শেষ। আছে মাত্র ৫০০ টাকা। এখন মিরপুরের রিকশা ভাড়া দেড় হাজার টাকা কোথায় পাব? রিকশাচালকের কাছে এমন ভাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এখান থেকে মিরপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। সেগুলো ইঞ্জিনে চলে। আর এত দূরের পথ প্যাডেল করে নিয়ে যেতে হবে। তাই ভাড়া দেড় হাজার টাকা চেয়েছেন। এক পর্যায়ে লিজা ভাড়া ৮০০ টাকা দিতে চাইলেও রিকশাচালক ১১০০ টাকার কমে যাবেন না বলে জানিয়ে দেন। লিজা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন।

শুধু লিজা একা নন, গতকাল ঈদের তৃতীয় দিনে লকডাউন শুরু হওয়ায় গণপরিবহনসহ সকল (রিকশা ও জরুরি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া) প্রকার পরিবহন বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চের হাজার হাজার যাত্রী ঘরে ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েন। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বিভিন্ন রুট থেকে ছেড়ে লঞ্চগুলো ভোর ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে সদরঘাটে এসে পৌঁছায়। যাত্রীর তুলনায় রিকশার সংখ্যা কম হওয়ায় রিকশাচালকরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করেন। ফলে সদরঘাট ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় লাগেজ ও ব্যাগ নিয়ে শত শত যাত্রী যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করেন।

অপেক্ষাকৃত যারা অর্থবিত্তের মালিক তারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারলেও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ বিপাকে পড়ে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাদের বাসা তাদের কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ শেয়ারে ভ্যান ভাড়া করে গন্তব্যে যান। কেউ কেউ আবার পরিবার ও আত্মীয়দের ফোন করে এলাকা থেকে ভ্যান ও রিকশা ভাড়া করে সদরঘাটে পাঠায়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা।

ভুক্তভোগিরা বলেন, তারা লকডাউনের কথা মাথায় রেখে ভোর ৪টায় সদরঘাট পৌঁছান। তাদের ধারণা ছিল, ভোর ছয়টা পর্যন্ত গাবতলী, সাভার ও গাজীপুর রুটে বাস চলবে। রাস্তা খালি থাকায় তারা সহজে পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু ভোর ৪টায় নেমেও দেখেন সব বন্ধ। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ। কেউ লাগেজ ও ব্যাগ থাকায় শিশু ও নারীদের নিয়ে পায়ে হেঁটে আসছেন। কেউ ভ্যান আবার কেউ রিকশায় গাদাগাদি করে ছুটছেন। অসংখ্য পরিবারকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন