শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে রোগীর চাপ, বাড়ছে মৃত্যু

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২১, ১২:২৩ পিএম

দেশে সোমবার (২৬ জুলাই) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪৭ জন। গত দেড় বছরের করোনা মহামারিকালে একদিনে এত মৃত্যু আর দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগের দিন ২৫ জুলাই ২২৮ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ঈদের ছুটির আগের দিন ২০ জুলাই ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ঈদের দিন মারা যান ১৭৩ জন, ২২ জুলাই ১৮৭ জন, ২৩ জুলাই ১৬৬ জন এবং ২৪ জুলাই মারা যান ১৯৫ জন। এছাড়া জুলাই মাসের শুরু থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা দুইশ’র বেশি বা দুইশ’র কাছাকাছি ছিল। মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষিত ‘কঠিন’ জুলাই মাস।
মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গত ২৪ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়ায়। আর শেষ এক হাজার মৃত্যু ছাড়াতে অর্থ্যাৎ ১৮ থেকে ১৯ হাজার মৃত্যু ছাড়াতে সময় নেয় মাত্র পাঁচ দিন। তার আগে গত ১৯ জুলাই মৃত্যু ১৮ হাজার ছাড়ায়।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চে প্রথম তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগীর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তার ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়। মার্চে অনিয়মিত হলেও চার এপ্রিল থেকে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়।
বিশ্বে যেসব দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, সেই তালিকায় বর্তমানে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল সরকার। ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধও দেওয়া হয়েছে। তবে বিধিনিষেধ শিথিলে কোরবানির পশুর হাট, শপিং মল, মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মোটেও মানা হয়নি। অনেকেই ঢাকা থেকে বাস, ট্রাক, লঞ্চে গাদাগাদি করে ঈদ করতে গেছেন গ্রামে। ঈদ শেষে ২৩ জুলাই ঢাকায় ফিরেছেনও তারা। এমনকি কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন রবিবার (২৫ জুলাই) ঢাকায় ফিরেছেন অনেকে। ফেরি, বাসে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। গণমাধ্যমের খবর বলছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে এখনও পদ্মা পার হচ্ছে মানুষ। আর এতে করে দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে মৃত্যুও নতুন রেকর্ড গড়ছে।

এদিকে, দেশের আট বিভাগের মধ্যে সাত বিভাগেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা থেকে জিনোম সিকোয়েন্সে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিআইএসএআইডি) অনুযায়ী, দেশের সাতটি বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৫০টি নমুনায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বি-১৬১৭ পাওয়া গেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণে জর্জরিত এখন পুরো দেশ। গত আট দিনে মারা গেছেন এক হাজার ২৮৯ জন এবং শনাক্ত হয়েছেন ৭৫ হাজার ৯৬১ জন। ইতোমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, বর্তমান সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি।
করোনায় শূণ্য মৃত্যু লক্ষ্যমাত্রা রেখে কাজ করা দরকার মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় কেন এবং ঠিক কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যু হচ্ছে তার পর্যালোচনা দরকার, তাতে অন্তত কিছু মৃত্যু কমানো সম্ভব হতো বা হবে। একইসঙ্গে মৃত্যু কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠন করা পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি করোনায় মৃত্যু কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে জানিয়ে বলেছিল, করোনায় শূণ্য মৃত্যুর টার্গেট নিয়ে কাজ করতে হবে। আর এ জন্য গত ১৭ জুন তারা একটি লিখিত প্রতিবেদন দেন, যেখানে কাজটি কীভাবে করতে হবে তার কিছু দিকনির্দেশনা ছিল।

কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না, যদি হতো তাহলে মৃত্যু কমানো যেত বলে জানান পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল।
‘সংক্রমণ বেশি হলে মৃত্যুও বেশি হবে’ এটাই নিয়ম মন্তব্য করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যে ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়াবে বেশি, সেটা যদি অধিক মাত্রায় ক্ষতিকারক হয় তাহলে মৃত্যু বেশি হবে। সেইসঙ্গে রাজধানীর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো করোনায় মৃত্যু ঠেকাতে প্রস্তুত নয়। আমরা গত দেড় বছরেও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বাড়াতে পারিনি, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই। যখন জটিল রোগীদের আইসিইউ দরকার হয় তখন তাদের ঢাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও যারা পাচ্ছেন, কিন্তু সেটা শেষ মুহূর্তে। আর শেষ মুহূর্তে চিকিৎসা দিয়ে আসলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।

তিনি বলেন, সেইসঙ্গে বর্তমানে যে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে সেটা নন-মেডিক্যাল লকডাউন। এই নন-মেডিক্যাল লকডাউন দিয়ে মেডিক্যাল ব্যবস্থায় কোনও উন্নতি করা সম্ভব না। তাতে করে রোগী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু বাড়বে এবং সেটাই হচ্ছে।

লকডাউন না মেনে শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহরে ফিরেছে মানুষ। আর এতে করে শনাক্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু’ জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ও এই হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসক ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বলেন, রোগীরা শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসছে। আর যে রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসবে তার মৃত্যু অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি, যে রোগী ‘আর্লি’ হাসপাতালে আসবে তার চেয়ে। বেশি সময় ধরে শরীরে অক্সিজেনের অভাব থাকলে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা কমে যায়।

অধিক সংক্রমণ এবং টেস্ট না করার প্রবণতার কারণে মৃত্যু বাড়ছে জানিয়ে ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী বলেন, টেস্ট না করালে করোনা শনাক্ত হচ্ছে না। শনাক্ত না হওয়ার কারণে রোগী ধরা পড়ছে না এবং যখন ধরা পরছে তখন আর চিকিৎসার কিছু থাকে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dadhack ২৭ জুলাই, ২০২১, ১২:৪৫ পিএম says : 0
আল্লাহ বলেছে মুসলমানদেরকে তোমরা সারা বিশ্ব আমার কোরআনের আইন দিয়ে শাসন করবে তাহলে সারা বিশ্বের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে আজ আমরা মুসলিম বলে পরিচয় দান করি কিন্তু আমরা কোরআন হাদিস মানে না আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজকে করোনাভাইরাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি Prophet [SAW] mentioned that when 5 bad things happened to my Ummah before Qiyamah: 1. Sexual obscenity will become wide spread from among Muslim. They publicize Zina [Illegal sexual intercourse]. New terminal illness will become wide spread with in the Ummah. 2. Muslim will cheat in their business. Poverty will be pandemic and Dictators and oppressors will rule Ummah. They will use their religion for worldly gain. 3. Muslim will stop paying Zakat. 4. Muslim will betray their promise and loyalty to Allah [SWT] and enemy of Islam will control the money of Muslim. 5. So called Muslim Leader will not apply the Laws of Allah’s Book, except which suits them. O’Misguided Muslim turn back to Allah before it’s too late.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন