বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে-- বিএসইসি চেয়ারম্যান
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বর্তমান জনসংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বের একটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ কারণে বিগত ১০ বছরে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি দেখেছি ইউনিয়ন পর্যায়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিউটি পার্লার, জিমনেসিয়াম এবং ইভেন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে বিশাল শ্রমবাজার রয়েছে। বেশির ভাগ জনশক্তি তরুণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বোনাসকল চলছে। বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল গণতন্ত্র জরুরি। বাংলাদেশে সেটা রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি নেই। নিম্ন পর্যায়ে দুর্নীতির কথা বলা হলেও ডিজিটালাইজেশনের কারণে তা কমে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা উচিত।
গতকাল সোমবার নিউইয়র্কের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিষয়ক রোড শো-তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে এই সম্ভাবনা। এর মধ্যে রয়েছে-বিশাল বাজার, শ্রমশক্তি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও সরকারের নীতিসহায়তা। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসী ও বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশকে পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে রাখতে পারেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখানে লাভ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাই আপনারাও এই উন্নয়নে সঙ্গী হোন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনীতি। যার অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক বড়, তুলনামূলক সস্তা শ্রম, উপযোগী সমৃদ্ধ বন্দর, দীর্ঘমেয়াদি কর রেয়াত, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধা, ১০০’র বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন এবং আঞ্চলিক বাজারগুলোতে সহজ প্রবেশাধিকারসহ বাংলাদেশ বিনিয়োগের একটি উপযুক্ত স্থান। এখানে বিদেশি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর জিডিপিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে। গত এক দশক ধরে আমাদের গড় জিডিপি গ্রোথ ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুতেই অসাধারণ উন্নতি করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অনেক কারণ রয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম। আমাদের খুব ভালো শ্রমিক রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে শিক্ষার হারও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অপর দিকে শিক্ষিত ও আধাশিক্ষিত শ্রমশক্তি রয়েছে, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য উৎপাদনে খরচ অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পলিসিসহ সব কিছু ব্যবসাবান্ধব। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাসহ সবার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসছে। তারা সবাই ব্যবসায়ীদের ও ব্যবসায়ের পক্ষে কাজ করছেন। এটি ব্যবসায়ের জন্য একটি ভালো দিক। শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বের সবপ্রান্তের মানুষকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। আমাদের ব্যবসাবান্ধব সরকার, পলিসি এবং নিয়মকানুনসহ সব কিছুই ব্যবসার পক্ষে। এ ছাড়া গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়েছে। যার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি কমেছে। এখন কোনো বিদ্যুৎ সমস্য নেই। এ ছাড়া কারখানার গ্যাস চাহিদা মেটানো হয়েছে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এফডিআইতে সরকার অনেক ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। গত দশ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হাইটেক পার্কে ২২ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। হাইটেক পার্কে তাদের ৮০ শতাংশ ভ্যাট ইউটিলিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ইক্যুইটি সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি। তাদের জন্য প্রথম বছর ৫০ শতাংশ ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এক্সপোর্ট অরিয়েনটেড রেভিনিউর জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের প্রচুর লাভ দেয়ার চেষ্টা করে। এর জন্য বাংলাদেশ পুঁজিবাজার অনেক ভালো নিয়ম করেছে। যার ফলাফল পুঁজিবাজারে ইতোমধ্যে দেখা গেছে। হংকংয়ের ফ্রন্টিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চলতি বছরের তৃতীয়প্রান্তিকে বাংলাদেশ এশিয়ার সেরা পুঁজিবাজারে উঠে এসেছে।
এ ছাড়া বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামীতে আইটির হাব হবে বাংলাদেশে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রেসিডেন্ট লরেন্স হেনরি সামার্স, বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কামরুল আনাম খান।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন পর নিয়ন্ত্রকসংস্থার নানামুখী পদক্ষেপে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। তারল্য ও আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েকমাস থেকে উত্থানে রয়েছে বাজার। আর তাই শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে চায় সরকার। বাংলাদেশ ও দেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য আরো আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে তুলে ধরতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও শহরে ধারাবাহিকভাবে রোডশো আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বিএসইসি। এই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বিনিয়োগ বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহর নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস এ্যাঞ্জেলেস ও সিলিকন ভ্যালিতে রোডশো শুরু হয়েছে গতকাল। এতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা, বিনিয়োগের সুযোগ, এনআরবি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজলভ্য সুবিধা, পণ্য ও পরিষেবাদি তুলে ধরা হবে। ‘দি রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক এ রোডশো শেষ হবে আগামী ২ আগস্ট। এর আগে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে গত ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আয়োজিত প্রথম রোডশোটি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। দুবাইয়ে রোডশোর পর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন