নওগাঁ জেলা পুলিশের তৎপরতায় সংঘটিত আলোচিত ৩টি ঘটনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনের রহস্য উদঘাটন এবং এসব ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের প্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম তাঁর সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, গত ২৫ জুলাই সকাল ৯টায় নওগাঁ সদর উপজেলার বিলভবানীপুর গ্রামে একটি পাটক্ষেত থেকে উজ্জল হসোনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা মাদকসেবন, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা এবং সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। নিহত উজ্জল হোসেন সহযোগী জনৈক রায়হানের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। পাওনা টাকা চাইলে বিরক্ত হয়ে তার সহযোগীরাই পরিকল্পিত ভাবে এ্যাম্পুল নেয়ার নাম করে একটি নির্জন মাঠে নিয়ে গিয়ে উজ্জলকে গলা কেটে এবং পরে হাত ও পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন এবং মুল হত্যাকারী বিল ভবানীপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সুজন (২৯) এবং সিরাজুল ইসলামের ছেলে শরিফ (২৫) কে গ্রেফতার তরতে সক্ষম হয়। ধৃত আসামীরা বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে গত ২৩ জুলাই’২০২১ রাত ৮টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে পোরশা থানার অন্তর্গত যমুনা বাগান নামক স্থানে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় সমির উদ্দিনকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। সমির উদ্দিনের প্রথম স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর পোরশা উপজেলার নিতপুর দিয়ারাপাড়া গ্রামের মৃত সাদেম আলীর কন্যা মোছাঃ আছিরন বিবির সাথে মোবাইল ফোনে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক এবং পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরে ২ পুত এবং ১ কন্যার জন্ম হয়। প্রায় ৬ মাস পূর্বে উক্ত আছিরন বিবি মোবাইল ফোনে মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর গ্রামের জনৈক জিয়া (৩৫) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রেম চলাকালে ঘটনার ১৫/১৬ দিন পূর্বে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে জিয়ার সাথে পালিয়ে যায়। শুধু বড় সন্তান সিফাত হোসেন (৯) পিতার সাথে থাকে। সমির উদ্দিন বড় ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। ঘটনার দিন রাত ২৩ জুলাই রাত ৮টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে তার স্ত্রী আছিরন বিবি, প্রেমিক স্বামী জিয়া এবং আছিরনের বড় বোন সালেগা বেগম সমিরের বাড়িতে এসে দরজা ধাক্কা দিলে সিফাত দরজা খুলে দেয়। আছিরন ও জিয়া বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সমির উদ্দিনকে হত্যাকরে এবং এই খুনের কথা যাতে কাউকে না বলে সেই জন্য সিফাতকে হত্য্ার হুমকী দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। সিফাত প্রথমে ভয়ে কিছু না বললেও পরদিন ২৪ জুলাই সে প্রতিবেশীদের নিকট সব খুলে বলে। স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ তৎপর হয়। সমির উদ্দিনের পিতা মোঃ আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে পোরশা থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনের মুল আসামী প্রাক্তন স্ত্রী আছিরন বিবিকে গ্রেফতার করে এবং তার দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক আছিরনের বড় বোন সালেহা বেগমকে গ্রেফতার করে। পরে হত্যার স্বীকার সমির উদ্দিনের পুত্র সিফাত বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের নিকট ১৬৪ ধারা মোতাবেক হত্যার সাথে জড়িত আছিরন, মোঃ জিয়া ও মোছাঃ সালেহা বেগমের নাম প্রকাশ করে জবানবন্দী প্রদান করে।
অপরদিকে গত ২৪ জুলাই দুপুরে নিয়ামতপুর উপজেলার বান্দইল গ্রামে জনৈক ইমরানের আম বাগানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে একই গ্রামের মোঃ রফিকুলের পুত্র মোঃ আরিফ (৩৫), মৃত তায়েজ উদ্দিনের পুত্র মোঃ আনারুল (৫০) এবং মৃত রহিমুদ্দিনের পুত্র মোঃ ইউনিুস (৪০) ভয়ভীতি দেখিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে। এ সময় ঐ শিশু প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়ার নাম করে কৌশলে পালিয়ে এসে চিৎকার করে সহযোগিতা কামনা করে। এ সময় প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। বাগানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আনারুলকে আটক করে। এ ব্যপারে নিয়ামতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হলে আটক আনারুলকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে কোর্টে প্রেরন করে এবং অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের প্র্িএয়া অব্যাহত রেখেছে। প্রেস ব্রিফিং এ অথিরিক্ত পুলিশ সুপিার গন, সহকারী পুলিশ সুপার সুরাইয়া আকতারসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন