মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

খাল এখন ময়লার ভাগাড়

মো. আরিফ হোসেন, দুমকি (পটুয়াখালী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর ও আংগারিয়া ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী দুমকি পীরতলা খালটি দখল আর দূষণে মরতে বসেছে। স্থানীয়রা বলছে, এই খাল দিয়ে এক সময় বড় বড় নৌকা চলতো। চলতো মালবাহী জাহাজ। দুমকি, শ্রীরামপুর ও আংগারিয়ার হাজার হাজার মানুষ গোসলসহ গৃহস্থালি কাজে এই খালের পানি ব্যবহার করতো।
বর্তমানে এই খালটিতে ময়লা ফেলে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক। খালটির দু’পাশে গড়ে ওঠা বাজার ব্যবসায়ী ও খালের আশপাশে বসবাস করা পরিবারগুলোর ফেলা ময়লা ও বর্জ্য খালটির পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে পরিবেশ দূষণসহ দুর্গন্ধে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সৃজনী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। ময়লার দুর্গন্ধে ২০১৯ সালে সৃজনী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালটিতে নির্বিচারে বর্জ্য ফেলায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। দুমকির ঐহিত্যবাহী পীরতলা খালটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যায়না, দুমকি পীরতলা বাজারের তিনমাথা বরাবর অযু-গোসল ও বাজারের পণ্য আনা-নেয়ার জন্য বানানো বিশাল সিঁড়ি থাকলেও সেটার এখন কোন অস্তিত্বই নাই। খালের সেই সিঁড়ির স্থানে এখন সিঁড়ি খুঁজলে পাওয়া যায় ১৫/২০ ফুট উচ্চতার একটি ময়লার পাহাড়। এভাবে চলতে থাকলে দুই-এক বছরে পুরোপুরি ভরাট হয়ে খালটি হারিয়ে যাবে বলে বলছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, গত ২০০৭/২০০৮-এ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে খালটি দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযানে নেমে বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে ও গুড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী। পরে আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট ময়লা আবর্জনা ফেলে খালটি ভরাট করে আবার দখল করে নেয়। এক স্কুল ছাত্র বলেন, খালটির পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না। দুর্গন্ধে অতিষ্ট হতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালের থানা ব্রিজ এলাকা থেকে উত্তরের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে উভয় তীরে চলছে বেপরোয়া দখলদারিত্ব। বাজারের পুরাতন ব্রিজ (থানার পুল) এলাকা থেকে সৃজনী বিদ্যানিকেতন হয়ে উত্তরে আরও দশ মিটারজুড়ে খালের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভিটা মালিকদের দখলে চলে গেছে। বাজারের পুরাতন ব্রিজ থেকে দক্ষিণের ব্রিজ পর্যন্ত খালের উভয় তীর ভরাট করে অস্থায়ী-স্থায়ী দোকান ও বিভিন্ন স্থাপনা তোলা হচ্ছে।
বছরের পর বছর অবাধে দখল চললেও দেখার যেনো কেউ নেই। তদারকি না থাকায় দুই পারের জমি মালিকরা যে যেভাবে পারছে খালের অংশ দখল করে গড়ে তুলছে পাকাভবন, দোকানপাঠ। বাজারের ব্যবসায়ীরাও দখলে পিছিয়ে নেই।
সাধারণ মানুষ বলেন, আমরা চাই খালটি দখল মুক্ত হোক, খালের হারিয়ে যাওয়া যৌবন ফিরে আসুক। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ও বায়ুদূষণে সবাই মারাত্মক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, অবৈধ দখল ও ময়লা আবর্জনায় এটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। কৃষিকাজে পানির অভাব পূরণকারী এক সময়ের এই খালে আর নেই জলধারা। অন্যদিকে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। যদিও আমি ২০১৪ তে যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম তখন খালটি খনন করিয়ে ছিলাম। এখন আবার নতুন করে এলজিইডি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড কে অবহিত করেছি আশাকরি এটি আবার পূর্ণ খনন হবে।
এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভ‚মি)-এর দায়িত্বে থাকা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ বলেন, খালটির ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করার পর তারা খালটি পূণ:খনন করার কথা বলছে। আশাকরি আগামী শুকনো মৌসুমেই খননকাজ শুরু হবে। অবৈধ দখলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন খননকাজ শুরু হলে তখন অবৈধ স্থাপনাগুলোও ভেঙে ফেলা হবে।
উল্লেখ্য, পাতাবুনি খুরমাতলা হয়ে পীরতলা দুমকি, গাবতলী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারের এই ঐতিহ্যবাহী খালটি ১৯৮১ সনের ১৪ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজ হাতে মাটি কেটে উদ্বোধন করে ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন