ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২ লাখ লাখ মানুষ। কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গত দুইদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে পাহাড় ধসের পাশাপাশি জেলার নিম্নাঅঞ্চলগুলো ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ২ লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি।
বুধবার (২৮ জুলাই) ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে টেকনাফে একই পরিবারের ৫ জন, উখিয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে ৩ জন, মহেশখালীতে পাহাড় ধসে ১ জন ও ঈদগাঁওতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার পাশ্ববর্তী পার্বত্য উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমে মারা গেছে ২ জন। এ নিয়ে গত দুইদিনে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, ঈদগাও, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ২০টি ইউনিয়নের ৭০ টি গ্রাম। এসব গ্রামের ২ লাখেরও বেশি মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ে বসবাসরত লক্ষাধিক পরিবার। এসব পরিবার গুলোতে দ্রুত সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা ভারী বর্ষণে জেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫১ হাজার ১৫০টি পরিবার।
তিনি আরও জানান, কক্সবাজারে টানা ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, রাডার স্টেশন ও সার্কিট হাউজের পাহাড়ের নিচের এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সচেতনতা অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা পর্যায়েও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে যেতে সচেতনতা মূলক মাইকিং করা হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, বুধবারও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার সদরে ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে। গত ২৪ ঘণ্টায় টেকনাফে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত কয়েক বছরেও হয়নি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানিয়েছেন, টানাবৃষ্টিতে ও মাতামুহুরির নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পাহাড়ে বসবাসরতদের সরিয়ে আনার জন্যও কাজ করছি।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারের পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। রাতে রামুর অফিসেরচর গ্রামে রামু-মরিচ্যা সড়কের পাশে বেড়িবাঁধ বিচ্ছিন্ন থাকায় নদীর পানিতে এলাকাটি প্লাবিত হতে থাকে। এসময় তিনি সড়ক প্রশস্থকরণ কাজের ঠিকাদারকে জরুরি ভিত্তিতে বিচ্ছিন্ন করা বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে, কক্সবাজারে টানা ভারী বর্ষণে পৃথক পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে মারা গেছে ১২ জন। এর মধ্যে টেকনাফে একই পরিবারের ৫ জন। নিহতরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ভিলেজার পাড়া এলাকায় সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দু শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবাইর (১২), আবদুর রহিম (৫), মেয়ে কহিনুর আক্তার (৯) ও জয়নবা আক্তার (৭)।
একই রাতে পাহাড় পড়ে মারা যান জেলার মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ারঘোনা বৃদ্ধ আলী হোসেন। সে ওই এলাকার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে। একইদিন পানিতে ডুবে উখিয়া উপজেলায় পৃথক ৩জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃতরা হলো- উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আবদুর রহমান (৪৫), একই উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ধইল্যাঘোনা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আলী আকবর (৪০) ও একই ইউনিয়নের মালিয়ারকুল এলাকার মোঃ ইসলামের ছেলে মোঃ রুবেল (২২)।
কক্সবাজারের ঈদগাও উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ৩ যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল।
রামু ফায়ার সার্ভিসের রামু স্টেশনের প্রধান সোমেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঈদগাও খাল থেকে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলো হলো ঈদগাও উপজেলার দরগাহপাড়ার মোহাম্মদ শাহজাহান শাহ'র পুত্র ফারুখ (২৮), দেলোয়ার (১৫) ও অপরজন মোর্শেদ (৭)।
এছাড়াও কক্সবাজার জেলার পার্শ্ববর্তী পার্বত্য উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার ঢলের সময় নদী পারাপার করতে গিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের শীলপাড়া গ্রামের সুভাষ বড়ুয়ার ছেলে আশীষ বড়ুয়া (১৬) পানিতে ভেসে মারা যায়। একইদিন আবদুর রহিম (২৮) নামের এক রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন