বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

তালেবানকে চাপ পাকিস্তান-চীনের

জঙ্গিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম), নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং অন্য সব সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করতে তালেবানকে যৌথভাবে চাপ দিয়েছে পাকিস্তান ও চীন। চীন তিয়ানজিনে বৈঠককালে তালেবানদের কাছ থেকে আশ্বাস চেয়েছে যে, তারা আফগানিস্তানে ইসলামবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী উইঘুর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সরে আসা শুরু করার পর থেকে তালেবানরা একের পর এক শহর দখল করছে। ক্ষমতায় আসার জন্য তারা প্রতিবেশী চীন, পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করছে। তবে দেশগুলোর পক্ষ থেকে তাদের স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথে কেবল সম্পর্ক ছিন্ন করলেই হবে না, তাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলো থেকে উচ্ছেদও করতে হবে।
তালেবান প্রতিনিধিরা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলো পরিদর্শন করেছে এবং বিগত দুই দশক ধরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে গণ্য করা এবং সন্ত্রাসবাদী হিসাবে নিষিদ্ধ হওয়া একটি আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক অবস্থান অর্জন করেছে। সর্বশেষ দুই দিনের চীন সফরে নয় সদস্যের তালেবান প্রতিনিধিদল চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। দুই পক্ষের বৈঠকে আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় আলোচিত হয়েছে। এ বৈঠক নিয়ে বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তালেবানের কাছ থেকে পৃথক বক্তব্য এসেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে বলা হয়, তালেবান প্রতিনিধিদের বেইজিং বলেছে যে তারা আশা করে, সশস্ত্র গোষ্ঠীটি আফগান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানা ও দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আশা করেন, তালেবান ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টকে দমন করবে। এই গোষ্ঠীকে চীনে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি মনে করে। চীনের অভিযোগ, এই গোষ্ঠী তাদের জিনজিয়াং অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত।
বৈঠক নিয়ে তালেবান মুখপাত্র মোহাম্মদ নাইম এক টুইটে বলেন, দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তালেবান প্রতিনিধিদল বেইজিংকে আশ্বস্ত করে বলেছে, তারা কাউকে চীনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না।
চীনও আফগানিস্তানকে সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে চীন বলেছে, তারা আফগানিস্তানের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে আফগান সমস্যার সমাধান ও শান্তি ফেরাতে সহায়তা করবে।
যদিও চীন তালেবানদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছে, তবে এই প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং প্রকাশ্যে তালেবান নেতাদের সাথে দেখা করেছেন। তালেবান প্রতিনিধি দলের এই সফর পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা (আইএসআই) প্রধান লে. জেনারেল ফয়েজ হামেদ চীন সফর করেছেন।
এ সফরের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারী সূত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই কোহিস্তানের দাসুতে সন্ত্রাসী হামলার পর পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করা চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে তালেবানদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে, চীনের শীর্ষস্থানীয় এক কূটনীতিক জানান যে, তার দেশ ‘সর্বদা আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলা এবং পুরো আফগান জনগণের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি অনুসরণ করেছে।’
এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র ন্যাটো বাহিনীর সমালোচনা করেছিলেন যে, তারা কীভাবে এই সঙ্ঘাত এবং সেখান থেকে তাদের প্রত্যাহার উভয়ই পরিচালনা করেছিল। ওয়াং বলেন, ‘আফগানিস্তান আফগান জনগণের, এবং এর ভবিষ্যতটি তার নিজের লোকদের হাতে হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে শিগগিরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার আসলে আফগানিস্তানের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ব্যর্থতা চিহ্নিত করে। আফগান জনগণের জাতীয় স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ রয়েছে।’
তবে এই অস্থিরতার অবসান করতে ওয়াং আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশ ও জাতির স্বার্থকে প্রথমে রেখে, শান্তি আলোচনার ব্যানার ধরে রেখে, শান্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করে, একটি ইতিবাচক চিত্র তৈরি করুন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি অনুসরণ করুন।’
তিনি বলেন, আফগানিস্তানের সকল দল ও জাতিগত গোষ্ঠীকে এক ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত, ‹আফগান-নেতৃত্বাধীন ও আফগান-মালিকানাধীন› নীতিটি সত্যই বাস্তবায়ন করা উচিত, শান্তি ও পুনর্মিলন প্রক্রিয়াতে প্রাথমিক ভিত্তিক ফলাফলের জন্য চাপ দেয়া উচিত এবং স্বতন্ত্রভাবে একটি বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা উচিত যা উপযুক্ত আফগানিস্তানের জাতীয় বাস্তবতা।’
হংকং স্থিত চীনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চাইনা মর্নিং পোস্ট’ সূত্রে খবর, বুধবার উত্তর চীনের তিয়ানজিন শহরে তালেবানের প্রধান মধ্যস্থতাকারী আবদুল গনি বারাদার ও মুখপাত্র সুহেল শাহিনের নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন না ওয়াং ই।
বলে রাখা ভাল, তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আবদুল গনি বারাদার আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। সূত্রের খবর, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তিবৃদ্ধির আশঙ্কা করছে বেইজিং। শি জিনপিং প্রশাসনের আশঙ্কা, চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে পৃথক উইঘুর রাষ্ট্র গঠনের লড়াইয়ে ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) গোষ্ঠীটিকে মদত দিতে পারে তালেবানের একাংশ। তাই উইঘুরদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়া নিয়ে আপত্তির কথা তালিবানের কাছে স্পষ্ট করেছে চীন। গত জুন মাসেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তালেবানকে রাজনীতির মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করার কথা ঘোষণা করে চীন। সূত্র : নিউজউইক, ট্রিবিউন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন