বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্য অপরিবর্তিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

জোর দেয়া হয়েছে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে


করোনা মহামারীর মধ্যে আগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে আগের মতই ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। রেপো আর রিভার্স রেপোর সুদ হারও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ যোগানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বেসরকারি খাতের জন্য ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের সংকুলান রাখা হয়েছে, যাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়বসাইটে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়েছে।
গভর্নর ফজলে কবির এবারের মুদ্রানীতিকে বলছেন ‘সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী’, যেখানে মহামারীর সঙ্কট কাটাতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এবার কিছুটা কমেছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গতবারের মত এবারও কোনো সংবাদ সম্মেলন হয়নি। সেখানে গভর্নরের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে টাকা থাকলেও মহামাীর ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি এখনো সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে দেশীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি মানসম্মত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।’
বাজেটে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যের সঙ্গে মিল রেখেই অভ্যন্তরীণ ঋণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অর্থবছরে রফতানি আয়ে ১৩ শতাংশ ,আমদানি ব্যয়ে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং রেমিটেন্সে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার থাকবে বলে ধরা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে রেপো, রিভার্স রেপো এবং ব্যাংক রেট আগের বছরের সমান রাখা হয়েছে।
এর ব্যাখ্যায় গভর্নর ফজলে কবির বলেন, মহামারীজনিত কারণে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের গতি প্রত্যাশিত মাত্রায় উজ্জীবিত না হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তারল্য বা তরল সম্পদ গড়ে উঠলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো অর্থনীতিতে অনেকটা অনিশ্চয়তাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। এরূপ পরিস্থিতিতে সিআরআর হ্রাসসহ মুদ্রানীতিতে ইতোপূর্বে যেসব শিথিলতা আনয়ন করা হয়েছিল তা পর্যায়ক্রমে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার সময় এখনো আসেনি।
মহামারীর ধাক্কায় সঙ্কটে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থের জোগান বাড়াতে গত মুদ্রানীতিতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার কমিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর তহবিল খরচ কমানোর পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে এক দিন মেয়াদী রেপোর সুদ হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছিল। আর রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস কমিয়ে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৪ শতাংশে। ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। ২০০৩ সালের ৬ নভেম্বর থেকে প্রায় ১৭ বছর ধরে এই সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। গত বছরের মুদ্রানীতিতে তা ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এবার কোনো পরিবর্তন না আনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রেপোর সুদ হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ এবং ব্যাংক রেট ৪ শতাংশ থাকছে।
সুদের হার না বাড়ালেও টাকা যেন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যায় না হয়, সেদিকে জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ফজলে কবির বলেন, প্রণীত মুদ্রানীতিতে অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণের প্রসার না ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল ও কর্মসংস্থান সহায়ক খাত ও উদ্যোগসমূহে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অনুৎপাদন শীল খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা যেন না যায় সেটা ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার একটি তালিকা মুদ্রানীতির বক্তব্যে তুলে ধরেছেন গভর্নর। তিনি বলেছেন, অর্থবছরের সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতিসহ বিশ্ব অর্থনীতি ও আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি ও এর হাতিয়ারসমূহের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষভাবে সদা প্রস্তুত রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন