মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লিবিয়ার নেতৃত্ব দিতে চান গাদ্দাফি-পুত্র

বেঁচে আছেন সাইফ আল-ইসলাম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

বেঁচে আছেন লিবিয়ার তৎকালীন শাসক মুয়াম্মর গাদ্দাফির পুত্র সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফি। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিবিয়া এবং নিজের বিষয়ে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি। ২০১১ সালের ফেব্রæয়ারিতে লিবিয়ার অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর থেকে গত এক দশকে এটা তার প্রথম সাক্ষাতকার। এখানে সাইফ আল-ইসলাম তার অন্তরাল জীবনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সাইফ লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেছেন এবং গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলতেন। তিনি সম্মানিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সাহচর্য গ্রহণ করেছিলেন এবং তরুণ লিবিয়ানদের নাগরিক বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন। তার কিছু পশ্চিমা বন্ধু এমনকি তাকে লিবিয়ার সম্ভাব্য ত্রাণকর্তা বলেও আখ্যায়িত করেছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে লিবিয়ার সাবেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আজমি আল-আতিরি সাইফ গাদ্দাফিকে আটক করে এবং তখন থেকে সাইফ এ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত কারাগারে আটক ছিলেন। এ যুদ্ধে সাইফ সবকিছু হারিয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে দেখেছেন। বছরের পর বছর নির্জন কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি এখনও বন্দী কিনা জিজ্ঞেস করা হলে সাইফ বলেন, তিনি বর্তমানে একজন মুক্ত মানুষ এবং রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন যে, এক দশক আগে যেসব বিদ্রোহীরা তাকে গ্রেফতার করেছিল, পরে তারা হতাশ হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে যে, সে তাদের জন্য একজন শক্তিশালী মিত্র হতে পারে। সাইফ বলেন, আপনি কল্পনা করতে পারেন? যাদের আমাকে বন্দী হিসেবে পাহারা দিয়ে রাখার কথা ছিল, তারা এখন আমার ভালো বন্ধু।

নিউইয়র্ক টাইমসকে সাইফ জানিয়েছেন, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান। তিনি বলেন, ‘আমি দশ বছর ধরে লিবিয়ার জনগণ থেকে দূরে রয়েছি। ধীরে ধীরে ফিরে আসতে হবে। জনগণের মন জয় করতে হবে।’ বাবা গাদ্দাফি হত্যার পর তাকেই লিবিয়ার পরবর্তী উত্তরসূরি ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। গাদ্দাফির ৭ সন্তানের মধ্যে হত্যাকান্ডের শিকার হন ৩ জন।

লিবিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধরত জঙ্গীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসীরা দেশের অস্ত্রের মজুদ লুট করেছে এবং উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিদ্রোহ ও যুদ্ধের ইন্ধন যোগাচ্ছে। ভ‚মধ্যসাগর পেরিয়ে অভিবাসীদের ইউরোপে পাঠানোর মাধ্যমে দেশটিতে মানব পাচার শক্তিশালী হয়েছে। আইএসআইএস লিবিয়ার উপক‚লে একটি খেলাফত স্থাপন করেছে। এর ফলে ধীরে ধীরে লিবিয়ানরা গাদ্দাফি পুত্র সাইফ আল-ইসলামকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করেছে, যিনি ২০১১ সালে বিদ্রোহের প্রাথমিক দিনগুলোতে লিবিয়ার পরিণতি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

সাইফ ডিসেম্বরের নির্বাচনে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন কিনা, তা নিশ্চিত না হলেও তিনি বিশ্বাস করেন যে, তার আন্দোলন দেশের হারানো ঐক্য পুনরুদ্ধার করতে পারে। তিনি এটি বক্তৃতায় বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদরা আপনাদের জন্য দুঃখ ছাড়া আর কিছুই আনেননি। এটি অতীতে ফিরে যাওয়ার সময়। তারা যে দেশকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করেছে। টাকা নেই, নিরাপত্তা নেই, এখানে কোন জীবন নেই। গ্যাস স্টেশনে যান সেখানে কোন ডিজেল নেই। আমরা ইতালিতে তেল ও গ্যাস রপ্তানি করি, আমরা অর্ধেক ইতালি আলোকিত করছি এবং আমাদের এখানে অন্ধকার। এটি ব্যর্থতার চেয়েও বেশি। এটি একটি কলঙ্ক।’

লিবিয়ার বিদ্রোহীরা তাদের বিপ্লবের সাফল্য উদযাপনের ১০ বছর পর, বেশিরভাগ লিবিয়ান সম্ভবত সাইফের মূল্যায়নের সাথে একমত হবেন। বিদেশি সমর্থকরা অস্থিতিশীল এবং যুদ্ধপ্রবণ লিবিয়াতে এক কানা কড়িও খরচ করার ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। দেশটির সর্বোচ্চ ধনী হয়ে ওঠা কিছু যুদ্ধবাজ লিবিয়ায় প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। কিন্তু অন্যদিকে দেশটির অসংখ্য মানুষ দৈনিক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগে যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থায়ী এবং তারা পর্যাপ্ত খাবার পানি পেতেও সংগ্রাম করে। গুলিতে ঝাঁঝরা ত্রিপোলি এবং অন্যান্য প্রধান শহর একটি যুদ্ধের স্মারক যা এক দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে চলছে।

আপাতত লিবিয়ায় যুদ্ধ বিরতি চলছে। ডিসেম্বরে দেশটিতে নতুন সংসদ ও প্রেসিডেন্টে নির্বাচন হওয়ার কথা। অনেক লিবিয়ান আশঙ্কা করছে, এ যুদ্ধবিরতি টিকবে না। লিবিয়া কার্যকরভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশ জাতিসংঘ স্বীকৃত প্রেসিডেন্ট এবং পূর্বাঞ্চলের অর্ধেকটি মূলত স্বৈরাচারী সামরিক কমান্ডার খলিফা হাফতার নিয়ন্ত্রিত।

সাইফের আকাক্সক্ষাগুলোকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে। লিবিয়ার বর্তমান সরকার গঠনের আলোচনার সময় তার সমর্থকদের অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং তারা এখন পর্যন্ত নির্বাচনী বিধিগুলোকে টপকে সাইফকে ক্ষমতায় আনতে কৌশলের সাথে কাজ করেছেন। তবে, লিবিয়ায় ভোটের সীমিত পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, একটি অঞ্চলে ৫৭ শতাংশের বেশি লিবিয়ান তার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে।

সাইফের জয় অবশ্যই আরব বসন্তের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী আরব স্বৈরশাসকদের জন্য একটি প্রতীকী বিজয় হবে। তবে, ক্রেমলিনও তাকে স্বাগত জানাবে, যা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে শক্তিশালীদের শক্তিশালী করেছে এবং লিবিয়ায় তার নিজস্ব সৈন্য এবং প্রায় ২ হাজার ভাড়াটে সৈন্য নিয়ে এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক খেলোয়াড় হিসেবে রয়ে গেছে। ‘লিবিয়ায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন ইউরোপীয় ক‚টনীতিক বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা মনে করে সাইফ জিততে পারে।’

সাইফের প্রতি অন্যান্য বিদেশির সমর্থন আছে বলে মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিসর, রাশিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তির জন্য লিবিয়া একটি প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র। কিন্তু নির্বাচনে তাদের কতটা প্রভাব থাকতে পারে তা জানা মুশকিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, যা ন্যাটো অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল যা সাইফের বাবাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাহায্য করেছিল, গাদ্দাফি বংশের পুনরুজ্জীবন খুব কমই বিব্রতকর হবে।

সাইফ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, লিবিয়া মিসর এবং তিউনিশিয়ার মতো নয়। এর উপজাতীয় শিকড়ের কারণে এটি সহজেই ক্ষুদ্র-রাজ্য এবং আমিরাতগুলোতে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। তিনি লিবিয়াতে গৃহযুদ্ধ, অরক্ষিত সীমানা, ব্যাপক অভিবাসন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অভয়ারণ্যের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘পুরো লিবিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।’ সাইফ দাবি করেন, লিবিয়ার ধ্বংসের দায় শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের, তার বাবার নয়।

সাইফই হয়তো সঠিক। যখন লিবিয়ার বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, আমেরিকানরা একই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিল। তারা পরে সিরিয়ার সাথে মুখোমুখি হবে, ‘যদি আপনি একটি রাষ্ট্রকে পুনর্র্নির্মাণের বোঝা বহন করতে ইচ্ছুক না হন তবে আপনার কি তা ধ্বংস করা উচিত? সিরিয়ায় উত্তর হবে ‘না’। মার্র্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ কার্যকালে বারাক ওবামা ঘোষণা করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল লিবিয়াকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয়া। অনেক লিবিয়ানদের হতাশার এত বছর পর তারা একটি ত্রাণকর্তার জন্য মরিয়া। এবং সাইফ তাদের উদ্ধারকারী হিসেবে এখন স্বপ্ন দেখেন।

সাইফ ভন্ডামির বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলেন, প্যান-আরব মিডিয়া গাদ্দাফির শাসনকে এতটাই বিকৃত করে উপস্থাপন করেছিল যে, দুই পক্ষের কথা বলার কোনো উপায় ছিল না। তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় যা ঘটেছে তা বিপ্লব ছিল না। আপনি এটাকে গৃহযুদ্ধ বা ক্রুড় সময় বলতে পারেন। এটা কোনো বিপ্লব নয়।’ সাইফ বলেন, ‘এরদোগান বিদ্রোহগুলোকে একটি বিদেশি চক্রান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন যা অনেক আগে থেকেই পরিকল্পিত হয়েছিল।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ত্রিপোলির একটি আদালত সাইফসহ গাদ্দাফির শাসনামলের প্রায় ৩০ জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে ২০১১ সালের অভ্যুত্থানের সময়কার অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে। ওই অভুত্থানে গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হন। পরে ২০১৫ সালে সাইফসহ আটজনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Istiaqe Hassan Sumon ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪০ এএম says : 0
Long live legend
Total Reply(0)
ali alasheri ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪১ এএম says : 0
i'm praying for this man may almighty Allah gives him long life and protect him from the enemise and let him wins the election insha Allah
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪২ এএম says : 0
libyan this your chance put gaddafi back to power your country will be unity and rebuild.
Total Reply(0)
হিমালয় হিমু ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪২ এএম says : 0
Saif i hope you will be leader of Libya. I pray you take up your fathers reins.
Total Reply(0)
সম্রাট রায় ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪৩ এএম says : 0
i am with you Saif al-Gaddafi is the choice of the Lybyn majority of the people so let them vote him in!!! Every other nation should support him as long as he is anti Isis.
Total Reply(0)
Noman Modabbir ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
আশা করি অবশ্যই পারবেন।তাঁর একটা দক্ষতা,এবং তীব্র দেশ প্রেম রয়েছে।
Total Reply(0)
Mahfuzul Alam ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
মনে হচ্ছে পারবেন, কারণ তার বাবা যেহেতু রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন।তার অনেক অভিজ্ঞতা আছে।
Total Reply(0)
Salma Sultana ১ আগস্ট, ২০২১, ৪:৪৫ এএম says : 0
লৌহ মানব গাদ্দাফী ছিল আমার খুব প্রিয় একজন রাষ্ট্রপ্রধান। উনার ছেলে লিবিয়ার হাল অবশ্যই ধরতে পারবে।
Total Reply(0)
Anamul Hasan ১ আগস্ট, ২০২১, ৮:৩৬ এএম says : 0
Mr Saif, We are preying to Allah for you and your families ❤️❤️❤️
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন