কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে প্রতিদিন লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার। আশ-পাশের প্রায় ৬টি থানার মুল বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার দোকানের মালিক-কর্মচারী মিলে ৯ থেকে ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, সৃষ্টি হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। এতে করে যেমন ভোগান্তি হচ্ছে, তেমনি বিক্রেতাদের গচ্ছা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শুধুমাত্র অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারনেই বিগত ১৫ বছর যাবত এ জনদুর্ভোগ লেগেই আছে।
সম্প্রতি ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দিনের পর দিন পানির নীচে শতাধিক দোকান। চলতি মাসের শুরু থেকে ভারী বর্ষণে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভারি বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে পেঁয়াজ বাজার, কাঁচা বাজার, শুটকি বাজার, মুরগী বাজার, চাল বাজার, কাঁপড় পট্টি, কামার পট্টি, একতা মার্কেট, সততা মার্কেট ও মেইন গলির ফুটপাতে থাকা সব রকমের দোকানপাট। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল থাকায় পানি সরতে পারে না। বৃষ্টি শেষে কাঁদা আর আবর্জনা পঁচে দুর্গন্ধে সৃষ্টি হয় আরেক দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ ক্রেতা বাজারে আসে না। এতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের চরম ধস ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী দৈনিক ইনকিলাবকে জানায়, দেড় দশকের আগেও পানি নিষ্কাশনের জন্য নবীনগর রোডের পাশ দিয়ে একটি খাল ছিল। যা দিয়ে বাজারের সকল পানি ও ময়লা নিষ্কাশন হতো। তৎকালীন সরকারের আমলে স্থায়ী ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করেই ওই খাল ভরাট করে মার্কেট করা হয়েছে। তাছাড়াও আশ-পাশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা তা দখল করে দোকানঘর তৈরি করেছে, যার দরুন আজ আমাদের এ করুণ অবস্থা।
৮/১০জন ক্রেতা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে আসার পরিবেশ নাই। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে হাটা চলা করে বাজার করা খুব কষ্টসাধ্য, তাই আসি না। আর ১০ টাকার রিকশা ভাড়া চল্লিশ টাকা লাগে, তবুও রিকশাওয়ালা আসতে চায় না। সে কারণে এলাকার দোকান থেকে বেশি দামে বাজার সদাই করে ফেলি। গত বছর আমরা নৌকা দিয়ে এই বাজার থেকে সদাই কিনেছিলাম।
কোম্পানীগঞ্জ বাজার জুয়েলারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি চন্দন বনিক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বাজারের প্রায় শতাধিক দোকানের ভিতর পানি ঢুকছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এ ভয়াবহ অবস্থা দেখা দেয়। বাজারের ভিতর অনেক দোকানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। মুরগী ব্যবসায়ী ঈমান উদ্দিন বলেন, আমার দোকানসহ আশ-পাশের সব দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজার এলাকায় কোন ড্রেন না থাকায় আমরা অনেক দিন ধরেই এভাবে বৃষ্টি আসলেই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার হই। ভাসমান কাঁচামাল বিক্রেতারা জানায়, চলতি বছরে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি আসায় আমার কয়েক মন আলু নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কারণে পাইকারি বিক্রেতারা মোকামে আসতে চায় না। আরেক পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী জানায়, দোকানে পানি ঢুকে আমার থান কাপড়ের গাইট কালো ময়লা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য মেশিন লাগানো আছে। বাজারের জলবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। আমি বিষয়টি এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন সাহেবকে জানিয়েছি। তিনি সম্প্রতি বাজার পরিদর্শন করেছেন। আশা করি এবার বিষয়টির একটি সুরাহা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জ বাজারের জলাবদ্ধতা স্থায়ী ভাবে নিরসনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রাক্কলন তৈরী করা হয়েছে। চলতি অর্থ-বছরে উপজেলা পরিষদ থেকে ব্যয়বহুল বাজেটের মাধ্যমে আগামী মাসে কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন