যশোরে করোনা আতঙ্কের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী। জেলায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ২০ জনকে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। এদের মধ্যে গত জুলাই মাসেই ৭ রোগী শনাক্ত হয়েছে। অভয়নগর ও শার্শা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এসব রোগী ঢাকা ও স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা হাসপাতাগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। গত বছরে আগস্ট থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি হলেও এ বছর এক মাস আগেই জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগে যশোরবাসী। এদিকে, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও করোনার কারনে জেলার পৌরসভাগুলোতে মশক নিধনে কার্যক্রম শুরু করেছে ১ই আগস্ট থেকে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর মশার উৎপাত বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই করোনার এমন দুর্যোগের সময় ডেঙ্গুর প্রকোপে দুর্ভোগে পড়ার আশংকায় যশোরবাসী।
জানা গেছে, যশোরে করোনার মধ্যেই নতুন সমস্যা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে এডিস মশার উৎপাত। মশারি, কয়েলে ও মশার স্প্রেতেও নিস্তার পাচ্ছেন না যশোরবাসী। তাই করোনার এমন দুর্যোগের সময় ডেঙ্গুর প্রকোপে আতঙ্কিত মানুষ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী গত বছর যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ১০৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছিল ৬ জনের। আর এই বছরে ১ই আগস্ট পর্যন্ত যশোরে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে আক্রান্তের এক তৃতীয়ংশ সুস্থ রয়েছে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের। এখন পর্যন্ত কেউ এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার উপজেলাতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত বেশি। যদি যশোর শহরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত বাড়তে থাকে তাহলে করোনা রোগীর সাথে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে মনে করছে স্বাস্থবিভাগ। তাই ডেঙ্গু ও করোনা রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।
নতুন খয়েরতলা (এল,জি,ডি ভবনের পাশে) এলাকায় বসাবসকারী মুশফিকুর রহমান বলেন, মশার উৎপাত এত বাড়ছে যে ঘরে রীতিমতো তাদের সব সময় মশারি দিয়ে রাখতে হয়। সকাল ও বিকেলে মশার উপদ্রব অনেক বেশি। গনমাধ্যমে দেখেছি সারাদেশে করোনার মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। কিন্তু যশোরের খবর কি সেটা জানতে পারিনি। তবে পৌরসভা থেকে প্রতি বছর গুলোতে মশক নিধন করলেও এবার তা এখনও চোখে পড়েনি। যশোর বেজপাড়া কাকন নামে এক বাসিন্দা জানান, সারাদেশে গত দুই বছর ধরে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর আগে যশোরেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাই আগেভাগেই দায়িত্ব প্রাপ্তদের এডিস মশার জন্ম ও বংশ বৃদ্ধির কোনো সুযোগ না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ বলে মত দেন তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, যশোর পৌরসভার ওয়ার্ড ভিত্তিক মশক নিধন অভিযানের বিষয়ে রোববার মিটিং হয়েছে। আমরা ১ই আগস্ট থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতন বিষয়ক প্রচার-প্রচারণায় নেমেছি। একই সাথে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এই বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোরে গেল জুলাই মাসে বেশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগর ও শার্শা উপজেলাতে বেশি। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ডেঙ্গু প্রকোপও বেড়েছে। এ জ্বরের কারণে আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের মনে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বরং শুরু থেকে সচেতন থাকলে এই রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে অবহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিসহ যে সভাগুলো হয়ে থাকে সেখানে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। সপ্তাহে একদিন নিজ নিজ বাড়ি ও অফিস আঙিনায় পরিস্কার করার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের এই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন