দেখতে দেখতে চলে গেছে এক বছরেরও অধিক সময়। আজও দেওভোগ আদর্শনগরবাসীর মুখে মুখে শরীফের নাম। শরীফের কথা মনে করে এলাকাবাসীর চোঁখে আজও অশ্রু ঝরে। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে ওঠে, আসলেই শরীফ হত্যাটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। ছেলেটা খুব হাসি খুশি ও ভালো মানুষ ছিলো। কোন ধরনের অন্যায় কাজের সাথে শরীফ জড়িত ছিলোনা।
আর এ কারণে এলাকাতে তার একটা সুনামও ছিলো। বড়দের সাথে সে কখনোই বেয়াদবি করেনি আর ছোটদের প্রতিও ছিলো তার অনেক আদর স্নেহ। এ ধরনের ছেলেকে মানুষ খুন করবে, এটা ভাবাও যায়না। যারা শরীফের মত নিরিহ ছেলেকে খুন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
মাদক সেবক ও বিক্রিতে বাধাঁ দেওয়ায় গত বছরের ১ এপ্রিল দেওভোগ আর্দশনগর এলাকায় দিনদুপুরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আলাল মাদবরের একমাত্র ছেলে শরীফ মাদবরকে। স্থানীয় কিশোরগ্যাং লিডার ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাকিল ও লালন বাহিনীরা প্রকাশে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে শরীফকে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, স্থানীয় বখাটে ও কিশোর গ্যাং লিডার শাকিল ও লালনসহ কয়েকজন শরীফ হোসেনের মালিকানাধীন বৃষ্টি ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচারের দোকানের সামনে আড্ডা দিতো এবং মাদক সেবন করতো। শরীফ হোসেন তাদের সেখানে আড্ডা ও মাদক সেবন করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মীমাংসা করে দেন।
কিন্তু কিশোর গ্যাং সদস্যরা বিষয়টি মেনে নেয়নি। ওইদিন (বুধবার) সকাল সাড়ে দশটার দিকে ওই গ্যাংয়ের এক সদস্য শরীফ হোসেনকে মোবাইল ফোনে বাসা থেকে ডেকে একটি রিকশার গ্যারেজের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে শাকিল ও লালনসহ ১০-১২ জন তাকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
আদর্শনগর এলাকার স্থানীয় একটি বাড়ির সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, কিশোর গ্যাং সদস্যরা রামদা, বড় ছোরা, লোহার রড ও লাঠি নিয়ে ১০-১২ জনের একটি দল দৌড়ে রিকশার গ্যারেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর এক মিনিটের মধ্যেই আশেপাশের লোকদের ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে দেখা যায়। দুই-তিন মিনিটের মধ্যে কিশোর গ্যাং সদস্যদের আবার পালিয়ে যেতেও দেখা যায়
এদিকে সিসি ফুটেজের দেখে শরীফ হত্যার মিশনে থাকা সকল আসামীদের গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। বর্তমানে মামলাটির চার্টশীট দিলেও একজন আসামী ছাড়া বাকী সব আসামী জামিনে আছেন। আসামীরা জামিনে বের হয়ে এলাকায় আবারও ত্রাস শুরু করেছে। তারা মামলাটি তুলে নিতে বাদী পক্ষকে নানাভাবে ভয়ভীতি ছাড়া হুমকি ধামকি দিয়েই চলেছে।
সম্প্রতি চার্টশীটভুক্ত আসামীরা শরীফ হত্যার বিচার দাবিতে সটানো ব্যানার ছিড়ে ফেলে এবং অকথ্য ভাষায় বাদিকে গালিগালাজসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলে, ‘একটা খুন করলে যে সাজা, দশটা খুন করলেও একই সাজা। মামলা তুলে নিবি নইলে তোকে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেবো। এখনো সময় আছে সাবধান হন। নইলে আপনার অবস্থা শরীফের চেয়ে ভয়ংকর হবে।’
এদিকে শরীফ হত্যা মামলার চার্টশীটভুক্ত আসামীদের এমন প্রাণনাশের হুমকির অনেকটা আতঙ্কে আছেন বাদি আলাল মাদবর। তাই তিনি নিজের ও পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শরীফ হত্যা মামলার চার্টশীটভুক্ত আসামী শাকিল, নূর মোহাম্মদ, গরু শাকিল, সম্রাট ও শাহিনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি জিডি দায়ের করেছেন। জিডি নং ১১১৮। তারিখ ২৪/০৭/২০২১ ইং।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি আলাল মাদবর সাংবাদিকদের বলেন, আমার একটা মাত্র পোলা আছিলো। সেই পোলাডারে শুধু শুধু ওরা মাইরা ফালাইছে। আমি বাপ হিসেবে কি বইয়া থাকতে পারি। আমি কি আমার পোলার হত্যার বিচার চামু না। ওদের বিচারের জন্য আমি থানায় মামলা করছি। পুলিশ ওদেরকে ধরছিলও। কিন্তু ক্যামতে যানি জামিন পাইয়া গেলো।
আলাল মাদবর বলেন, আমি জানিনা খুনিরা ক্যামতে জামিন পায়। এটা জজসাহেবরাই ভালো জানেন। সেদিন শরীফের বিচার দাবি নিয়্যা যে ব্যানারটা করছিলাম, ওই ব্যানারটারে ওরা (আসামীরা) ছিড়া ফালাইছে। যাওয়ার সময় আমার সামনে আইস্যা হুমকি দিয়া কয়, একটা খুন করলে যে সাজা, দশটা খুন করলেও একই সাজা। আমি যদি মামলা তুলে না নেই, তাহলে আমারে নাকি খুন কইরা নদীতে ভাসাইয়া দিবো। শরীফের চাইতে নাকি আমার অবস্থা আরও ভয়ংকর কইরা লাইবো।
তিনি আরও বলেন, আপনারাই (সাংবাদিক) কন আমরা এখন কই যামু। আমাদেরতো জায়গাও নাই। আমি জিডি করছি। জানিনা, ওই আসামীরা আবার কবে এ্যারেষ্ট হবে, কবে আমি আমার বাবার (শরীফ) হত্যার বিচার পামু। আমার এখন একটাই দাবি ‘ওই আসামীদের যেত দ্রুত বিচার হয়। আর আমরা যেন সেই বিচার দেইখ্যা যাইতে পারি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন