মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তিন শহরে তীব্র লড়াই, আফগান দোভাষীরা পালাতে মরিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

আফগানিস্তানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালিয়েছে তালেবান। শহরগুলো হলো হেরাত, লস্করগাহ ও কান্দাহার। আফগানিস্তানের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় এই তিন শহর ঘিরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াই জোরদার হচ্ছে। হেরাত প্রদেশে জাতিসংঘের দফতরে ক্ষেপণাস্ত্র হানায় নিহত হয়েছেন এক নিরাপত্তা কর্মী। এদিকে, জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ায় আফগানিস্তান ছাড়তে মরিয়া হয়ে পড়েছেন বিদেশী সেনাদেও সাহায্য করা দোভাষীরা। তাদেরকে নিয়ে দোটানায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। মার্কিন সৈন্যদের সাহায্য করার জন্য তালেবানের হাতে জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন বেশ কিছু আফগান দোভাষী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর দোভাষী হিসাবে বা অন্যান্য সহকারীর ভূমিকায় যারা কাজ করতো, তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ২৫০০ জনকে জরুরী ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে উড়িয়ে এনে আশ্রয় দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরকম ২২১ জনের একটি দল কাবুল থেকে একটি ভাড়া করা বিমানে শুক্রবার ভোরে ওয়াশিংটনের ডালেস বিমানবন্দরে এসে নামে। সাথে সাথে তাদের সেখান থেকে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় ১৩০ মাইল দূরে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ফোর্ট লি সেনা ঘাঁটিতে। বাসস্থানের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই একটি হোটেলে আপাতত কড়া নিরাপত্তার ভেতরে থাকবে তারা। এই দলে রয়েছে ৫৭ টি শিশু এবং ১৫টি অল্প বয়সী বাচ্চা। জানা গেছে, বাকিদের আনতে প্রতি তিন-চার দিন অন্তর অন্তর কাবুল থেকে একটি করে বিমান আসবে। এবং এই আড়াই হাজার জনের অস্থায়ী জায়গা হবে ফোর্ট লির সেনা ঘাঁটি।নির্ভরযোগ্য সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, বিপন্ন এমন আরো চার হাজার আফগানকে আশ্রয় দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে আপাতত অন্য কয়েকটি দেশে রাখা হতে পারে। জানা গেছে কাতার এবং কুয়েতে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে কয়েক হাজার আফগানকে কয়েক মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া নিয়ে ঐ দুই দেশের সরকারের সাথে দেন-দরবার করা হচ্ছে। জানা গেছে, আমেরিকান কূটনীতিকরা কাজাখস্তান এবং কসোভোর সাথেও কথা বলছেন। তবে তৃতীয় দেশে আশ্রয়ের বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। কাবুলে আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা কদিন আগেই বলছেন দোভাষী বা মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য অন্যান্য নানা সময় কাজ করেছেন এমন ২০ হাজারের বেশি আফগান আমেরিকায় আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের অর্ধেকেরই ভিসার কাগজপত্র এখনও ধরাই হয়নি। কতজনকে শেষ পর্যন্ত ভিসা দেয়া হবে, কতদিনে দেয়া হবে তা অনিশ্চিত। সেইসাথে, পশ্চিমা বিভিন্ন এনজিও এবং মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসাবে যারা কাজ করছেন তারাও দেশ ছাড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ সারির আমেরিকান মিডিয়ার পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে লেখা এক চিঠিতে আফগান ঐ সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তালেবান যেভাবে নতুন নতুন জায়গা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে, তাতে ভয়ে সিটকে রয়েছেন তারা। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, তাদের অনেকে পরিবার নিয়ে লুকিয়ে থাকছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, জীবন বাজি রেখে যারা তাদের জন্য কাজ করেছে তাদের প্রতি আমেরিকার দায়িত্ব রয়েছে। মার্কিন বাহিনীর দোভাষী এবং অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে এসে আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনেট ১০০ কোটি ডলারের একটি জরুরী তহবিল অনুমোদন করেছে। অতিরিক্ত ৮ হাজার আফগান যেন চলে আসতে পারে তার জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করার কথা বলা হয়েছে ঐ বিলে। কিন্তু তারপরও ২০ হাজার আবেদনকারীর কতজনকে বিবেচনা করা হবে তা নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা হচ্ছেনা। কারণ তাদের সবার আবেদন গৃহীত হলে, পরিবারের সদস্য সহ এক লাখের মত আফগানকে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে জায়গা দিতে হবে। তাছাড়া, যে ২০ হাজারের মত আফগান আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন তাদের অনেকে বেশ আগেই হয় কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন, না হয় বিভিন্ন অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন। তাদের নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। নেটো দেশভুক্ত আর যেসব দেশ আফগানিস্তানের সেনা মোতায়েন করেছে তারাও তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করা আফগানদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমেরিকার পর আফগানিস্তানে সবচে বেশি সেনা মোতায়েন ছিল ব্রিটেনের এবং জানা গেছে শুধু দোভাষী হিসাবেই প্রায় ৩০০০ আফগানকে বিভিন্ন সময় নিয়োগ দিয়েছে ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক কজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা, যারা আফগানিস্তানে কমান্ডার হিসাবে কাজ করেছেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে তাদের জন্য কাজ করতো এমন আফগান এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ২২০০ আফগানকে গত কবছরে ব্রিটেনে নিয়ে এসে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরো ৮০০ জনকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, হেরাতে আফগান বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের প্রবল লড়াই চলছে। খবর, সেখানে ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে আফগান সেনাবাহিনী। হামলার পরে জাতিসংঘের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘সরকার-বিরোধী শক্তি হেরাতে জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন ইন আফগানিস্তান’-এর প্রাদেশিক সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে। আমরা এই হামলার প্রবল নিন্দা করছি। এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা এখনও পুরোপুরি জানতে পারিনি।’ হামলার নিন্দা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস-ও। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেবোরা লিয়নস ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, কী ভাবে জাতিসংঘের দফতরে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ল, তা জানতে তালেবান ও আফগান বাহিনী— উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলছেন তারা। তার কথায়, ‘হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ গত কয়েক দিন ধরে ক্রমশ হেরাতের দিকে এগোচ্ছিল তালেবান বাহিনী। শনিবার প্রাদেশিক রাজধানী হেরাত সিটি-র দশ কিলোমিটার দূরে গুজারায় চলে আসে তারা। সেখানে এখনও প্রবল লড়াই চলছে। জাতিসংঘের দফতরে হামলার দায় তো নেয়ইনি তালেবান, উল্টো তাদের দাবি, তালেবানকে লক্ষ্য করে ছোড়া আফগান সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রই গিয়ে পড়েছে সেখানে। হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে বিকালে, তালেবান মুখপাত্র কারি ইউসুফ আহমেদি একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, আমাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে জাতিসংঘের দফতরে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’ বিবিসি বলছে, হেরাত, লস্করগাহ ও কান্দাহারের অংশবিশেষে প্রবেশ করেছে তালেবান। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ আফগানিস্তান থেকে প্রায় সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঘোষণা আসার পরই তালেবান দেশটির সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অভিযান জোরদার করে। ইতিমধ্যে তালেবান বিশেষ করে আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ডন, বিবিসি বাংলা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন