মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলাম সহজ-সরল জীবনবিধান-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

‘যদি কেউ কঠোরভাবে ধর্মের ওপর গালেব (জয়ী) হতে চায় তা কস্মিনকালেও সে পারবে না। বরং ধর্মই তাকে পরাজিত করে ফেলবে।’ হুজুর (সা.) এর এই উক্তি হতে প্রতীয়মান হয় যে, ধর্মের ব্যাপারে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা বা বাড়াবাড়ি করা কিছুতেই উচিত নয়। যে ব্যক্তি শরীয়তের সীমারেখায় থেকে অধিক সাধনা করে থাকে, তার সেই সাধনা আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত পছন্দনীয় এবং উত্তম শ্রেণির সাধনা বলে বিবেচিত হবে। কেননা, এতে তার ধর্মীয় দৃঢ়তা ও মজবুতির পরিচয় পাওয়া যায়। এ সম্বন্ধে হজরত নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মজবুত মুসলমান দুর্বল মুসলমান অপেক্ষা উত্তম। তবে এমনি সকল মুসলমানই উত্তম।’ এতে প্রমাণিত হয় যে, ধর্মের পূর্ণতার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর উন্নতি সাধন ও একে শক্তিশালী করে তোলা। যদি কেউ ধর্মীয় পদমর্যাদার পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়, তবে তাকে আরো একটু নিম্নস্তরে অবতীর্ণ হতে হবে, যদি তার শক্তি ও ক্ষমতার মধ্যে থাকে তাহলে পূর্ণতা অর্জনের ব্যাপারে ধর্মের সীমা অতিক্রম না করে ক্রমশ সাধনা করতে থাকবে, নচেৎ ধর্মই তাকে পরাজিত করে ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হুজুর (সা.) এর নিকট সারা রাত্রি নামাজ পড়া ও প্রত্যেক দিন রোজা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে হুজুর (সা.) তাকে এইরূপ কাজ হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেন এবং বলেন যে, ‘তুমি এরূপ করতে সক্ষম হবে না।’

এটা ধর্মের দুইটি দিকের (নামাজ ও রোজা) অবস্থা। অথচ ধর্মের অন্যান্য বহু দিকও রয়েছে এবং সেগুলো যথাযথভাবে পালন করাও কর্তব্য। কাজেই সেখানে ত্রুটি-বিচ্যুতি হবে না। তাকে ধর্মের নিকট পরাজিত হয়েছে বলতে হবে। তাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই বাঞ্ছনীয়। অতিরঞ্জিত বা বাড়াবাড়ি থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে ‘ঈমান’ ও ‘একীন’ এর সাথে শরীয়ত অনুযায়ী বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং অন্তর হতে সমস্ত সন্দেহ দূর করতে হবে। অতঃপর আল্লাহর একত্ব সম্বন্ধে যুক্তি-তর্ক দ্বারা চিন্তা করবে। ঈমানের পূর্ণতা লাভের জন্য এটাই যথেষ্ট। হজরত রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘একীনের মর্তবা হাসিল করো, কেননা আমরা তা হাসিল করে থাকি।’ যে ব্যক্তি এই সীমা অতিক্রম করবে, ধর্মের নিকট তাকে পরাজয় বরণ করতে হবে।

হজরত আবু বকর সিদ্দীকি (রা.) একদা হুজুর (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রসূলুল্লাহ, আপনি কোন জিনিসের সাথে প্রেরিত হয়েছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘জ্ঞানের সাথে প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ আমি এমন একটি ধর্মপ্রাপ্ত হয়েছি যা জ্ঞান ও যুক্তি সম্মত।’ হজরত আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমাদের কাছে এত জ্ঞান কোথায়?’ হুজুর (সা.) বললেন, ‘জ্ঞানের কোনো সীমা নেই, (পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা সুকঠিন ব্যাপার), কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর হারাম বস্তুসমূহকে হারাম এবং হালালকে হালাল মনে করে তাকে জ্ঞানী বলা হয়।’ এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইসলামী শরীয়ত জ্ঞান ও যুক্তিসম্মত।

বর্ণিত হাদীসের এক অংশে সরল পথে চলা ও মাঝামাঝি পথ অনুসরণ করার যে নির্দেশ হুজুর (সা.) দিয়েছেন তার অর্থ হচ্ছে, মধ্যম পথ অনুসরণ করা বা মধ্যম অবস্থায় থাকা। দৃষ্টান্ত স্বরূপ এখানে আরো একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমরকে হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘রোজা রাখবে, ইফতারও করবে এবং রাত্রে জাগ্রতও থাকবে এবং নিদ্রাযাপনও করবে। কেননা, নিজের আত্মার ওপর তোমার হক রয়েছে। পরিবার-পরিজনের ওপর হক রয়েছে।’ অতঃপর হুজুর (সা.) বললেন, ‘প্রাপককে তার প্রাপ্য আদায় করে দিবে।’ এ হাদীস হতে সরলভাবে চলার অর্থ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আর মাঝামাঝি পথ অনুসরণ করার অর্থ হচ্ছে এই যে, যদি কেউ মধ্যম পথে যে কোনো কারণেই হোক চলতে না পারে তবে, সে যেন এর মধ্যবর্তিতায় থেকে আমল করে এবং এ অবস্থাতেও সে যেন কোনো ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ না করে। এমনিভাবে ফরজ কাজগুলো সমাপ্ত করার পরেই নফল এবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হবে, আর ‘আবেদ’ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হতে চাইলে নফল কাজগুলো সমাধা করা উচিত। কারণ এই সম্বন্ধে আল্লাহর পক্ষ হতে হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘বান্দা নফল কার্য দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে। এমতাবস্থায় আমি তাকে মাহ্বুব বলে গণ্য করব।’ কিন্তু আবেদের স্তরে পৌঁছতে না পারলেও ফরজ ওয়াজেবের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু নফল কাজও সমাধা করা উচিত। কেননা হুজুর (সা.) বলেছেন: কেয়ামতের দিন প্রথমে বান্দার নামাজ পরীক্ষা করে দেখা হবে, যদি তা পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করা হয় তবে বেশ ভালো কথা। নচেৎ আল্লাহতাআলা ফেরেশতাগণকে বলবেন, ‘দেখ, যদি এ বান্দার কাছে কোনো নফল নামাজ থাকে তা দ্বারা অসম্পূর্ণ ফরজগুলি পূরণ করে দাও।’ এইরূপে সকল ফরজই পরীক্ষা করা হবে। কাজেই ফরজ ব্যতীত যার কোনো নফল এবাদত থাকবে না, কেয়ামতের দিন তার ফরজ অসম্পূর্ণ থাকার দরূন আজাব ভোগ করার আশঙ্কাও রয়েছে।

মোট কথা এই যে, আলোচ্য হাদীসটি ধর্মের সরলতা বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা এখানে সম্ভব নয়। তথাপি উপরে যে কিঞ্চিত ব্যাখ্যা দান করা হয়েছে তাতে সহজেই ধর্মের সরলতা অনুধাবন করা যায়। তাই মানুষের কাছে ধর্মকে সহজ ও সরলভাবে প্রচার করা ধর্ম প্রচারকদের কর্তব্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
নোমান মাহমুদ ২ আগস্ট, ২০২১, ৫:৪৭ এএম says : 0
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সব সংঘাত সংঘর্ষের চিরন্তন ও মহাসমন্বয় হচ্ছে ইসলাম। জীবনাদর্শ, জীবন ব্যবস্থা ও জীবন বিধান হিসেবে ইসলামে রয়েছে সব সমস্যার সঠিক সমাধান। এতে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান আর মৃত্যুর পর আখেরাতের অনন্ত জীবনে নিশ্চিত সুখ-শান্তি লাভের উপা
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ২ আগস্ট, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 0
মানুষ যদি সত্যিই শান্তি পেতে চায় তবে তার নিজের ইচ্ছা মতো জীবন যাপন না করে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলতে হবে। তাই আল্লাহ তার প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার নাম রেখেছেন ইসলাম।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ২ আগস্ট, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 0
ইসলামে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত রাখার নির্দেশ রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির আদর্শ।
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ২ আগস্ট, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 0
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়া যে জীবনাদর্শের লক্ষ্য তার-ই নাম ইসলাম। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে, প্রতিস্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিধিনিষেধ পালন করা; তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা এবং এ লক্ষ্যে নিজেকে বিলীন করে দেয়ার নামও ইসলাম।
Total Reply(0)
জান্নাতুল নাঈম মনি ২ আগস্ট, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 0
ইসলামের অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তার নির্দেশ মেনে নেয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি এবং নিরাপত্তা অর্জন করা। ‘ইসলাম’ শব্দটিতে আল্লাহ তাআলার ধর্মের মূলতত্ত্ব নিহীত রয়েছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন