শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টিকায় কঠোর হচ্ছে সরকার

১৮ বছরের ঊর্ধ্বে টিকা ছাড়া বের হলে ব্যবস্থা টিকা না নিয়ে কেউ অফিস-আদালতে কাজে যোগদান করতে পারবেন না। টিকার সনদ দেখিয়ে গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চে উঠতে হবে। টিকা ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা সঙ্কট কেটে গেছে। গতকালও অ্যান্ট্রাজেনেকার ৬ লাখ ডোজ ১৭ হাজার ডোজ টিকা জাপান থেকে এসেছে। এ নিয়ে টিকার সংগ্রহের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আগামী ৭ আগস্ট থেকে সরকার সর্বস্তরে গ্রাম পর্যায়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করবে। এতো মধ্যেই সরকারের নীতি নির্ধারকরা ঘোষণা দিয়েছেন ১৮ বছর বয়সের কেউ টিকা নেয়া ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। হাট-বাজার যেতে পারবেন না এবং গণপরিহনে উঠতে পারবেন না। টিকা গ্রহণের সনদ দেখিয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চে উঠতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সময় বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যে টিকা গ্রহণের সনদ জমা না দিলে বেতন বন্ধসহ স্টাফদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এদিকে গতকাল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকা নিতে মানুষকে হাসপাতাল বা কেন্দ্রে দৌড়াতে হবে না। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ থেকে ৫টি টিকাকেন্দ্র খোলা হবে। সংশ্লিষ্ট লোকজনই গিয়ে মানুষকে টিকা দেবেন। রেজিস্ট্রেশন করে, এনআইডি কার্ড দেখিয়ে টিকা নেওয়া যাবে। যাদের এনআইডি নেই, তাদেরও বিশেষ পদ্ধতিতে টিকা দেবে সরকার। এমনকি পার্বত্য জেলাগুলোর মানুষ আগে টিকা নেবেন পরে তাদের নিবন্ধন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, আগামী ১ সপ্তাহে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মানুষকে আর টিকা নিতে দৌড়াতে হবে না, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই গ্রামেগঞ্জে যাবেন টিকা দেয়ার জন্য।

আগামী ৮ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বয়সিদের গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। সারা দেশে গ্রামেগঞ্জে টিকার বুথ খুলে টিকা দেয়া হবে। সরকার থেকে জানানো হয়, নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহার ও ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্কদের টিকা গ্রহণে উৎসাহ দিতে পাড়া-মহল্লায় সবার অংশগ্রহণে কমিটি করা হবে। যাদের কাজ হবে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। কমিটিতে জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ছাত্র-শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, কৃষক, যুবককে সম্পৃক্ত করা হবে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, তাহলে অর্ডিন্যান্স জারি করে, তাদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে টিকা নিতে নিজেদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সময় বেঁধে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বলেছে, টিকা গ্রহণের সনদ জমা না দিলে বেতন বন্ধসহ স্টাফদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। টিকা না নিলে তাকে বেতন দেয়া হবে না। গতকাল মঙ্গলবার নোটিশ জারি করে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে বলা হয়েছে, আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে করোনা প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ করে এর সনদ ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রশাসনিক শাখায় জমা দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া টিকা গ্রহণ না করলে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার স্বার্থে নিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধসহ প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টিকা দেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে আগামী ১১ আগস্ট গণপরিবহন চলাচল শুরু করবে। ওই দিনই রাজধানীর মার্কেটগুলো খুলবে। সে সময় সকলকে মাস্ক পড়ে চলাচল করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, যারা করোনা প্রতিরোধে জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, আবেদন-নিবেদনে কাজ না হলে, অর্ডিন্যান্স জারি করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। টিকাও নিতে হবে। এক্ষেত্রে খামখেয়ালির কোনও সুযোগ নেই। সরকার মনে করে, আইন দিয়ে সবকিছু হয় না। সচেতনতা দরকার। সরকার সেই চেষ্টাই করছে।

এদিকে করোনা মহামারির মধ্যে মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে বের হলে তাদের জরিমানা করার ক্ষমতা পুলিশকে দেয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে সঠিকভাবে এনফোর্স করতে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে করে যারা মাস্ক পরবে না তাদের জরিমানা করতে পারে। এ জন্য অধ্যাদেশ লাগবে। আলোচনা হয়েছে, আমরা সেদিকেও যাব।

বাংলাদেশে এখন টিকার সংকট নেই। ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রথম ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য চুক্তি করে সরকার। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রথম ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসে বাংলাদেশে। পরে আরো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেয়। কিন্তু ভারত সরকার সেরামের টিকা বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করে দিলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। অতঃপর সরকার নানা চেষ্টা করে বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী চীন থেকে ২৯ জুলাই সিনোফার্মের ৩০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। ২ জুলাই এসেছে ১০ লাখ ডোজ, ৩ জুলাই ১০ লাখ ডোজ, ১৭ জুলাই ৪০ লাখ ডোজ টিকা। এ ছাড়াও চীন তিন দফায় ২৪ লাখ জোজ টিকা উপহার দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপহার হিসেবে টিকা দিয়েছে। বৈশ্বিক টিকা জোটের কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় জাপান অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। গতকাল জাপান থেকে এসেছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ডোজ টিকা। আগামী ৪ আগস্ট বুধবার অক্সফোর্ডের আরো ১৩ লাখ ডোজ করোনা টিকা আসবে। এ ছাড়াও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয় ও উপহার হিসেবে এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা। এ ছাড়াও চলতি মাসে আরো ৬০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। অতএব, টিকার কোনো সঙ্কট নেই। অন্যদিকে ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে সেই টিকা প্রয়োগ করা হয়। অতঃপর নিবন্ধিতদের টিকা প্রয়োগ শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফা টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারিতে থাকা মানুষরা এবং সাধারণ মানুষের বয়সসীমা ৫৫ বছরের বেশি করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই বয়সসীমা ৪৫ বছর করা হয়। অতঃপর সেটা ৪০ বছর, আবার ৩৫ বছর পরবর্তী সময়ে ২৫ বছর করা হয়। ঘোষণা দেয়া হয় আগামী ৭ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বয়সিরা টিকা নিতে পারবেন।

এদিকে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই ডোজ বা টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে এক শতাংশেরও কম সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায় কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন দেশটির প্রায় অর্ধেক অঙ্গরাজ্যের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই দুই ডোজ টিকা নেওয়াদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার এক শতাংশের কম। কানেকটিকাটে এই হার সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ এবং ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে এই হার সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
সাইফুল ইসলাম ৪ আগস্ট, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
আগে সবার টিকা নিশ্চিত করুন, তার পরে কঠোর হন
Total Reply(0)
হাসান সোহাগ ৪ আগস্ট, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
আল্লাহ আপনি সবাইকে হেফাজত করুন
Total Reply(0)
Ali Akbar ৪ আগস্ট, ২০২১, ৩:০২ এএম says : 0
সরকারকের লকডাউন আর কেউ মানে না। এই জন্য সরকার নিজেই দায়ী। এক দেশে একেক জনের একেক আইন হতে পারে।ক্ষুধার ও পেটের চিন্তা সবাইর আছে তাই আইনও সবার সমান হলে সবাই মানতো।সরকার তো সর্ব সময় সুবিধাবাদীদের পক্ষের মানুষ তারা নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের কথা ভাবে না।সামনে আরো কঠিন সময় আসছে...
Total Reply(0)
Nabil Haydar Chowdhury ৪ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৩ এএম says : 0
লকডাউন যদিও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়,তবে বিভিন্ন কারণে এখন আর এটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।গুরুত্ব হারিয়ে লকডাউন দিনদিন শুধুমাত্র একটি শব্দে পরিনত হয়ে যাচ্ছে।সবমিলিয়ে লকডাউন তার গুরুত্ব ও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে।
Total Reply(0)
Mohammad Chowdhury ৪ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
বাংলাদেশে লকডাউন দিয়ে কোন লাভ নেই গণহারে ভ্যাক্সিন মারতে হবে। দানের টিকা দিয়ে বেশি কি আশা করা যায়না। ভারতের উপর টিকা নির্ভরতার কারনে আজ আমাদের এ অবস্থা ।
Total Reply(0)
বিদ্যুৎ মিয়া ৪ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৫ এএম says : 0
নিরাপদ ভ্যাক্সিন চাই,এটা আমাদের নাগরিক অধিকার। ভ্যাক্সিন নিয়ে কোন দলাদলি নাই। এই প্রচেষ্টা সফল হউক সার্থক হউক। ধন্যবাদ সকলকেই ।
Total Reply(0)
MD ATAUR RAHMAN ৪ আগস্ট, ২০২১, ৪:৫৩ এএম says : 0
Thank,s
Total Reply(0)
Shanto ৪ আগস্ট, ২০২১, ১০:১০ এএম says : 0
এখন যেকোন মানুষ যেকোনো কারণে মৃত্যুবরণ করলে সেটাকে কথিত ভাইরাসের মাধ্যমে মৃত্যু হয়েছে বলে তার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে আতঙ্ক এবং ভয় জাগ্রত করে মিথ্যা লকডাউন প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে নানাভাবে শোষণ জুলুম করা হচ্ছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন