শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পি কে’র সহযোগীর দেশত্যাগে দুদকের নিষেধাজ্ঞা

ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশের পর হাজিরা দিলেন ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটিতে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাতের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মো. মাহমুদ মালিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যেকোনো মুহূর্তে তিনি দেশত্যাগ করছেন-সোমবার এমন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি এ উদ্যোগ নেয়। সংস্থার সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গতকাল মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, মো. মাহমুদ মালিক নামক এক ব্যক্তির বিদেশযাত্রায় ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক এসএম সাহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমোদন নেয়া হবে। দুদক সচিব আরো জানান, মাহমুদ মালিক সংস্থাটির এজাহারভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) এবং ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ (ইডকল)র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ মালিক। ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনসহ তিনিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করে। মামলাগুলোতে (মামলা নং-১০ ও ১১) আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ৪৩ কোটি ১৫ লাখ ২ হাজার ২৯৪ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-২-এর উপ-পরিচালক এস এম সাহিদুর রহমান বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলা ২টি তদন্তও করছেন তিনি। একটি মামলার আসামিরা হলেন, বিআইএফসি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম.এ.মান্নান, ডি আফরোজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম জিলানী দিদার, বিআইএফসি’র আরেক সাবেক এমডি ইনামুর রহমান, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব বিজনেস সৈয়দ ফকরে ফয়সাল, সাবেক এভিপি অ্যান্ড ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র অফিসার (বিজনেস) মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন, সাবেক অফিসার মো. সৈকত আজাদ, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার তানিজা মাজেদ, সাবেক অফিসার মাসুদ-উল-রেজা চৌধুরী ও সাবেক সিনিয়র অফিসার ও রিজিওনাল ম্যানেজার আফ্রিদা আহসান।

আরেক মামলায় মাহমুদ মালিক ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বিআইএফসির তৎকালিন চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম এ মান্নান ‘ক্লিক টু ডিজাইন’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল বাশার, বিআইএফসি’র আরেক সাবেক এমডি ইনামুর রহমান, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রিসিডেন্ট ও হেড অব বিজনেস সৈয়দ ফকরে ফয়সাল, সাবেক এভিপি অ্যান্ড ইউনিট হেড আহমেদ করিম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র অফিসার (বিজনেস) মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন ও সাবেক অফিসার মো. সৈকত আজাদ। দুটি এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৬/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)র নেতৃত্বে ডুবতে বসা তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড) অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হাইকোর্ট যে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন সেই কমিটি পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে মো.মাহমুদ মালিক এবং তার স্ত্রী হাফসা আলম ওরফে হাফসা মালিককে। হাফসা মালিক পি কে হালদারের বেনামী প্রতিষ্ঠান ‘সুকুজা ভেঞ্চার লি:র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠিত হলে ঈদের পর দেশ ছাড়েন হাফসা মালিক। সাত সদস্যের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি তাদের দু’জনকেই তলব করে। গতকাল মঙ্গলবার তাদের হাজির হওয়ার কথা থাকলেও শুধু মাহমুদ মালিক কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত: আর্থিক খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের থেকে ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা লোপাটের হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)র অন্যতম সহযোগী হাফসা আলম (ওরফে হাফসা মালিক) দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যে কোনো মুহূর্তে উড়াল দেয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন পি কে’র আরেক সহযোগী মো. মাহমুদ মালিক। হাফসা আলম এবং মাহমুদ মালিক সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। হাফসা মালিকই পরিচয় গোপন করে ‘হাফসা আলম’ নামে ‘সুকুজা ভেঞ্চার লি:’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিযুক্ত হন। এটি পি কে হালদারেরই একটি বেনামী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগলাভের ক্ষেত্রে হাফসা আলম স্বামীর নাম গোপন করেন। ব্যবহার করেন পিতার নাম-ঠিকানা। এই দম্পতিকে দিয়ে তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

এদিকে এ মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি অংশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাহমুদ মালিক। গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো এক প্রতিবাদে তিনি দাবি করেন, পি কে হালদারের কোনো দুর্নীতির সঙ্গেই তিনি সংশ্লিষ্ট নন। তার স্ত্রী হাফসা আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটি ডাকার আগেই মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন মর্মে স্বীকার করেন তিনি। মাহমুদ মালিকের মতে, যা কোনোভাবেই গোপনে পালিয়ে যাওয়া বোঝায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
কাওসার ৪ আগস্ট, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
এদের প্রত্যেকের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বায়েজাপ্ত করা হোক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন