কেবল নেটওয়ার্কের চ্যানেলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা বলে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন তিনি। বিজ্ঞাপন দেখে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সমস্যা সমাধানের নামে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের এক ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জিনের বাদশা পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তিসহ তিনজনকে আটক করেছে সিআইডি।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর। তিনি বলেন, জিনের বাদশা পরিচয়দানকারী মো. আল আমিন জয়যাত্রা টিভিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ও কেবল নেটওয়ার্কের চ্যানেলে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা, বিদেশে যাওয়ার সুব্যবস্থা করা, দাম্পত্য কলহ দূর করাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিজ্ঞাপন দিতেন। সমস্যা সমাধানের জন্য কেউ যোগাযোগ করলে নারী কণ্ঠে কথা বলে ফাঁদে ফেলতেন তিনি। পরবর্তীতে কথা অনুযায়ী কাজ না করলে প্রিয়জনের ক্ষতির ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনে দেয়া নম্বরে কেউ যোগাযোগ করলে বিস্তারিত তথ্য নিতেন জিনের বাদশা। পরে এলাকার গরিব মানুষকে খাওয়ানোর নাম করে ৯৯৯ কিংবা ১১১১ টাকা দাবি করতেন। টাকা পাঠানোর পর জিনের বাদশা রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ফোনে কথা বলে সমস্যা সমাধান করবেন বলে ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দিতেন।
মুক্তা ধর বলেন, বিজ্ঞাপনে নম্বর দেখে জিনের বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করেন চট্টগ্রামের এক নারী। এ সময় চক্রের সদস্যরা ওই নারীকে বলেন, তার বাসার নিচে আড়াই কেজি স্বর্ণ লুকায়িত আছে, সেটা পাহারা দিচ্ছে একটি অজগর। ওই স্বর্ণ আনতে পারলে একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে দিতে হবে। পরে তাকে বলা হয়, অজগরকে খাওয়ানোর জন্য আড়াই মণ দুধ ও ১০ কেজি আতর লাগবে। ধাপে ধাপে ওই নারীর কাছ থেকে চক্রটি ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, গত ছয় মাসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের জব্দ করা ব্যাংক হিসাবে ১২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এখানে আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছে থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এসএসপি মুক্তা ধর বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত সোমবার ভোলায় অভিযান চালিয়ে জিনের বাদশা মো. আল আমিনকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ঢাকার ডেমরায় অভিযান চালিয়ে বাকি দুই সহযোগী মো. রাসেল ও মো. সোহাগকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের খুলশি থানায় মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খায়রুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এবং সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন