শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফেঁসে যাচ্ছেন পিয়াসা-মৌ-পরীমণিদের প্রশ্রয়দাতারা

গোয়েন্দা নজরদারিতে অনেকেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১১:৫৩ পিএম, ৮ আগস্ট, ২০২১

পিয়াসা-মৌ-পরীমণিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা কারা? কোটি টাকার এ প্রশ্নের উত্তরে ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সংশ্লিষ্ট জায়গায় তাদের নাম প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, চট্টগ্রামের একজন জানিয়েছেন, মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া মডেল মৌ এর ১১ নম্বর স্বামী ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। মৌ এর বিভিন্ন পার্টিতে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই এক পর্যায়ে মৌকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে মৌ’র সিন্ডিকেটের বিভিন্ন মেয়েদের ব্যবহার করে, নজরুল ইসলাম, তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে থাকেন নজরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয়েছে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্র।

সূত্র মতে, যোগদানের পর থেকেই ফার ইস্ট ইসলামী ইনসুরেন্সে খরচের বহর বাড়িয়ে ছিলেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। পরিচালনা পরিষদ থেকে ২০১৭ সালে একটি আইফোন কেনা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে আনা ওই ফোনের দাম তখন দেখানো হয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। বীমা আইন অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের গাড়ির দাম সর্বোচ্চ ৮৫ লাখ টাকা হলেও তিনিও সোয়া কোটি টাকা দামের গাড়ি কিনেছেন। পিয়াসা ও মৌ এর বিভিন্ন ভিআইপি পার্টির তারা নিয়মিত সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের প্রধান সহযোগী সোহেল শাহরিয়ারকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। গত বুধবার রাতে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের তার অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সোহেল শাহরিয়ারসহ কয়েকজন সহযোগীর তথ্য দেন রাজ। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেসব সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সোহেল শাহরিয়ার ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হলেও রাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরে বিভিন্ন নায়ক, নায়িকা, উঠতি মডেলদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সহযোগী সোহেল ফিল্ম ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য; ওই কমিটির পরিচালক রাজ। রাজনৈতিক অঙ্গন ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে সোহেল ‘শটগান সোহেল’ নামে পরিচিত। তিনি কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি।

জানা গেছে, সোহেল দীর্ঘদিন কানাডায় ছিলেন। তিনি সেখানকার গ্রীন কার্ডধারী। রাজের অবৈধ অর্থ সোহেলের মাধ্যমে কানাডায় পাচার হয়েছে। সোহেলের সঙ্গে রাজসহ বিভিন্ন নায়ক-নায়িকার ঘনিষ্ঠতার ছবিও হাতে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, ফিল্ম জগতে সাবেক ছাত্রলী নেতা সোহেল খুবই পরিচিত। বেশ কয়েকজন নায়িকার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। উঠতি মডেলদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে তিনি। এসব কাজে সোহেল একাধিক হত্যা মামলার আসামি আলী রেজা রানাসহ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকেও ব্যবহার করতেন।

সূত্রমতে, গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার কথিত মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ’র ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একটি ব্যাংকের এমডিসহ ১৭ জনের গোপন ভিডিও দৃশ্য পাওয়া গেছে। গত ১ আগস্ট রাত ৮টার দিকে বারিধারায় পিয়াসার বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর গভীর রাতে অভিযান চালানো হয় মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মৌ’র বাসায়। তার বাসাতেও মাদক পাওয়া যায়। পরে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এরপর একের পর এক তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ঘটনা বের হতে থাকে। পিয়াসার প্রধান সহযোগী মিশু হাসানকেও গ্রেফতার করা হয়, যার সঙ্গে তিনি মাদকসহ নানা অবৈধ ব্যবসা করতেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, পিয়াসা ও মৌ দিনের বেলা ঘুমাতেন আর রাতে আসর বসাতেন। সম্প্রতি বেসরকারি একটি ব্যাংকের এমডি মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের চক্করে পড়েন। তার অসতর্ক অবস্থার ছবিকে পুঁজি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। মৌ-পিয়সার চক্কর থেকে বের হতে ওই ব্যাংকের এমডি বিষয়টি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জানিয়ে আইনি প্রতিকার চান। এরপর বেরিয়ে আসে; শুধু ওই ব্যাংকের এমডি নন, এখন পর্যন্ত পিয়াসা ও মৌ’র মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৭টি ভিডিও পাওয়া গেছে। এসব ভিডিওতে কয়েকজন শিল্পপতি-ব্যবসায়ীর বখে যাওয়া সন্তানদের অসতর্ক মুহূর্তের ছবি রয়েছে। তাই এসব গোপন ভিডিও অন্যদের হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। চক্রটির প্রতারণা থেকে ফেঁসে যাওয়া ব্যক্তিদের বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষার জন্য এ অভিযান চালানো হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন