শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বিদায় টোকিও, দেখা হবে প্যারিসে

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

পর্দা নামল ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকের। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও অনেকক্ষণ নেচে-গেয়ে বেড়াল কুশীলবেরা। ১৭ দিনের মিলনমেলা শেষ হয়ে গেছে গতকাল, নিভে গেছে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা অলিম্পিক মশাল। কী যে শূন্য দেখাচ্ছে সেটিকে! তিন বছর পর সেই মশালটিই জ্বলে উঠবে আবার প্যারিসে, ফ্রান্সের রাজধানীতে। অলিম্পিক স্টেডিয়াম যেন ভাঙা মেলা। অলিম্পিক শেষ, কিন্তু তার রেশ যে তখনো বেজে চলেছে সবার প্রাণে। বার্ডস নেস্ট ছেড়ে যেতে তাই মন চাইছে না! সাদা এবং সোনালী রংয়ের আতশবাজিতে ভরে ওঠে টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের চারপাশ। দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন করার কারণেই এই রংকে বেছে নেয়া হয় আতশবাজির জন্য।

জাপানের রাজধানী টোকিওতে ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেটের মিলনমেলায় আরও ছিলেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি। আয়োজক, স¤প্রচারক, স্বেচ্ছাসেবক থেকে শুরু করে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের কর্মযজ্ঞ। বিদায়ী সম্ভাষণে টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মাস্ক পরে অ্যাথলেটরা মার্চপাস্টে অংশ নিলেন।

এবারের টোকিও অলিম্পিক গেমস ছিল সত্যিই স্পেশাল। করোনা মহামারির কারণে একটি বছর পিছিয়ে দেয়া হলো। ২০২০ সালের পরিবর্তে নিয়ে আসা হয় ২০২১ সালে। এবারও গেমস আয়োজন করা যাবে কি না, তা নিয়ে ছিল তুমুল সংশয়। কারণ জাপানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল করোনা সংক্রমণ। ৫০টি ডিসিপ্লিনে মোট ৩৩৯টি স্বর্ণের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে এগিয়ে থেকেই শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় আড়াই ঘন্টার সমাপনী অনুষ্ঠানে বড় পর্দায় একের পর এক ভেসে উঠছে গত ১৬ দিনের সব মানবীয় নাটকের খন্ডচিত্র। অ্যাথলেটদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, ভেঙেচুরে দেওয়া হতাশা, ভাসিয়ে নেওয়ার উচ্ছ্বাস...। কয়েক মিনিটের টুকরো টুকরো ছবি দিয়ে যেন গাঁথা ৩২তম অলিম্পিকের পুরো নাটক। আর অদৃশ্য কোথাও থেকে ভেসে আসছে মন কেমন করা গান। ভাষা জাপানি, কিন্তু সুরটা বিশ্বজনীন। বিদায়ের সুর, হারানোর সুর, যেন কান্নারও! বিদায় টোকিও, দেখা হবে প্যারিসে। তার একটি যোগসূত্রও হয়ে গেল এখান থেকেই।

মহাশূন্যে বিউগল বাজানোর দৃশ্য দেখানো হয়। এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভিডিও বার্তা দেন। এসময় প্যারিসের আইফেল টাওয়ারকে ঘিরে বিমানে তিন রঙা ধোঁয়া উড়িয়ে আঁকা হয় ফ্রান্সের পতাকা। সমাপনী অনুষ্ঠানে টোকিওর মেয়র ইউরিকো কোইকে পতাকা তুলে দেন আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের হাতে। তিনি সেটা তুলে দেন আগামী আসরের আয়োজক শহর প্যারিসের মেয়র আন হিদালগুর হাতে।

জাপানিরা অলিম্পিককে বাহন করে পুরো বিশ্বের কাছে নিজেদের মেলে ধরতে চেয়েছিল। চেয়েছিল নিজেদের নতুন করে চেনাতে। তা চেনালও! আয়োজনে চেনাল, খেলার প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেনাল, চেনাল আতিথেয়তায়। উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান নামের মহাযজ্ঞ দিয়েও। জাপানের সংস্কৃতি, জাপানের ঐতিহ্য তুলে ধরাই তো আসল উদ্দেশ্য হবে স্বাভাবিক। একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উত্থান। আরও দেখানো হয়েছে কিভাবে মারাত্মক সব ভ‚মিকম্প, সুনামি এবং পারমানবিক বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে সে সবের মধ্যেও বেজে গেল ঐক্যের সুর। টোকিও অলিম্পিকের সেøাগানই যে ছিল ‘আবেগ দ্বারা ঐক্যবদ্ধ!’ নানান দেশ, নানান মতের মানুষের মিলনমেলা হলেও সবাইকে এক সুঁতোয় বেঁধে সফলভাবে আয়োজন শেষ করল আয়োজক দেশটি।

সেই আবেগী সুরই যেন বারবার অনুচ্চারে শুনিয়ে গেল গোটা সমাপনী অনুষ্ঠান। সমাপনীতে এমনিতেই সৌহার্দ্যরে সুরটা একটু বেশি বাজে। জয়-পরাজয়ের পালা শেষ, এবার সবার এক হয়ে যাওয়ার সময়। এ কারণেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিটি দেশ যেমন আলাদা আলাদা হয়ে মাঠে ঢোকে, মার্চ পাস্ট করে দাঁড়ায় নিজেদের পতাকার পেছনে; সমাপনীতে তা নয়। এখানে চারপাশ থেকে ইচ্ছেমতো হেঁটে আসে সব দেশের অ্যাথলেটরা, দেশ-জাতি-ভাষা ভুলে মিলেমিশে এক হয়ে যায় সবাই। ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিক গেমস থেকেই এমন হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো এক সুর থাকে, সমাপনীর আরেক। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিকে পুরো বিশ্ব যেমন তাকিয়ে থাকে, সমাপনীর দিকে তেমন নয়। তারপরও এটিও কম মহাযজ্ঞ নয়। যেটির শুরুতে থাকল জাপানি সংস্কৃতিতে সৌহার্দ্য ও পুনর্মিলনের প্রতীক বৃত্তের খেলা। ঝিকিমিকি আলো ছড়ানো বৃত্ততে আরও মূর্ত হলো মানুষের নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চিরন্তন তাড়না। শুরুতেই ছিল বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের আনন্দমুখর উপস্থিতি।

মশাল নেভানোর পর্বে অ্যাথলেটরা চলে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়ালেন। একজন আস্তে আস্তে মেলে ধরলেন হাতে গোল করে ভাঁজ করে রাখা স্মৃতির অ্যালবাম। যা স্টেডিয়ামের ওপরের পর্দায় ফুটে উঠল ছবি হয়ে, মনে করিয়ে দিল গত ১৬ দিনের হিরন্ময় সব স্মৃতি। ওই অ্যাথলেট স্মৃতির অ্যালবাম আবারও ভাঁজ করলেন আর নিভে গেল অলিম্পিক মশাল। অলিম্পিক মশাল যে আসলে নেভে না, সবার হৃদয়ে সেটি জ্বলতেই থাকে- এর অপূর্ব প্রতীকী উপস্থাপনা।

নাচগান হলো, বক্তৃতা হলো, হলো ম্যারাথনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও। টোকিও শেষ, অপেক্ষা এখন প্যারিসের। তিন বছরের অপেক্ষা। ততদিন কি সত্যি ‘আবেগ দ্বারা ঐক্যবদ্ধ’ স্লোগাটা বাস্তবায়ন হবে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Shams Elham ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
ভারত 7 টা মেডেল জিতল , সেন মেরিনো 30 হাজার মানুষের দেশ 3 টা পদক জিতেছে ৷ গড়ে প্রতি 10 হাজারে 1 টা মেডেল ৷ 20 কোটি মানুষের দেশ কোন পদক নাই ৷ প্রত্যকটা বাংগালর লজ্জিত হওয়া উচিত ৷ মিডিয়া আছে শুধু ক্রিকেট নিয়ে ৷ প্রকৃত খলা যেগুলো গৌরব নিয়ে আসে সেগুলোতে কোন গুরুত্ব নাই ৷
Total Reply(0)
জিৎ ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
অবশেষে অলিম্পিক গেমস শেষ হলো সবাই ভেবেছিল হবে না
Total Reply(0)
Masuda Akter ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
এত দ্রুত শেষ হইলো কেন
Total Reply(0)
Marjana Haque ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
এখন টিভিতে আমরা কি দেখবো
Total Reply(0)
Biplob Prasad ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
Good by Tokyo Olymics 2020
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন