শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

অপচয়ের কারণ ও প্রতিকার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

এতে শ্বাসকষ্ট হয়। হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা ও থাকে। ডায়রিয়া ও হয়ে থাকে অতিভোজন ফলে। আর এভাবে মানুষ তার রোগ প্রতিরাগ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মানসিকভাবেও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মানুষ তার অব্যাসবশত অনেক জিনিষ ক্রয় করে থাকে, অথচ এগুলোতে তার কোন কাজ নেই। এর মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় অনেক মানুষ বোিশ দামে লাল আপেল ক্রয় করে অথচ পুষ্টির ক্ষেত্রে লাল আপেলের কোন বিশেষত্ব নেই। আবার বিভিন্ন কোম্পানী তাদের নতুন পণ্য বিক্রির জন্য বিভিন্ন ধোঁকার ও আশ্রয় নেয়, আর মানুষ ও বেশি দাম দিয়ে ক্রয় করে। এর মাধ্যমে ও অপচয় ও অপব্যয় হয়। বিভিন্ন বানিজ্যিক ঘোষনার মাধ্যমে ও মানুষকে ধোঁকায় নিমজ্জিত করা হয়। যেমন ১০টি পন্য একসাথে কিনলে ২০০ টাকার প্রাইজবন্ড। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির দশটি পণ্যের প্রয়োজন নেই সেও দশটি পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে অপচয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈনন্দিন ফ্যাশনের পনিবর্তন ও বিভিন্ন পণ্যের উদ্ভোবনের মাধ্যমে মানুষ সবচেয়ে বেশি অপচয়ে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব দৈনন্দিন পরিবর্তন ফ্যাশন তাদের মনে কোন বিরূপ প্রতিক্রয়া সৃষ্টি করছে না। বরং ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা অংশগ্রহন করে যাচ্ছে। আর তাদের মনে এই বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই সব অত্যাধুনিক আসবাপত্র গ্রহন না করাটা আধুনিকায়ন ওপ্রগতিশীলতায় বিরোধিতা করে পিছনের দিবে ফিরে যাওয়ার নামান্তর। এই ফ্যাশন বেশি আক্রান্ত হয়েছে নারীরা। যেমন নিত্য নতুন গাড়ির চাহিদা, নিত্য নতুন মোবাইল, আরো বিভিন্ন উন্নত আসবাবপত্রের আবিষ্কার হচ্ছে। যার মাধ্যেমে মানুষ অপচয়ের নিমজ্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে ধনী শ্রেনীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তারা প্রতিনিয়ত এসব জিনিস ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পূর্বেই পরিত্যাগ করছে। বস্তুত এগুলো একদিকে অপচয়, অন্যদিকে অবকাঠামো ধ্বংস করা। অপচয় ও অপব্যয়ের যে ক্ষতিকর দিকগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যক্তি, পরিবার. সমাজ, রাষ্ট্র,এমনকি আর্ন্তজাতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে। অযথা খরচ দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাকে যেমন বিশৃঙ্খল করে, তেমন ব্যক্তির আখিরাতকেও নষ্ট করে। নিম্নে অপব্যয় ও অপটয়ের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো, অপচয়ের জন্য মানুষ উপরি ইনকামের প্রতিঝুকে পড়ে। এ জন্য মানুষ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অর্থনৈাতকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নবী স. বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ শরীর যা হারাম দ্বারা গঠিত, তারা জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।
অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ হঠাৎ করে যে কোন কাজ করে বসে, পরিণতির প্রতি চিন্তা করে না। মানুষ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না, আর এর পরিণতি হয় অত্যন্ত ভতয়াবহ, যা মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। আর হিংসাহ বদ্বেষে অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করে এবং তার আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সে মনে মেনও অনেক পাপের বিষয় গোপন করে রাখে, করন মানুষ পেটপুরে খেলেই সেখানে শয়তান অবস্থান গ্রহন করে। এ জন্য নবী স. কলেছেন: আদম সন্তান তার পেটের তুলনায় অন্য কোন খারাপ পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের জন্য তো কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট, যা তার মেরুদন্ড সোজা করে রাখেন। আর যদি একান্তেই প্রয়োজন হয়, তাহলে পাকস্থলীর এক- তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয় আর এক-তৃতীয়াংশ নিশ্বাসের জন্য রাখবে।” পরিবেশের অবক্ষয়ের জন্য অপচয় অন্যতম প্রধান দায়ী। অপচয় বিভিন্ন প্রকার হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব একই, আর তা হল ক্ষেতে-খামারে ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের চরম অধঃপতন। সৌখিনতা মানুষকে বিলাসী করে তোলে, যা মানুষের খারাপ কাজে অগ্রগামী করে। সে সংগ্রামে ও ত্যাগের মানসিকতা সপরিত্যাগ করে। যা মূলত অপচয়ের ফলাফল। অপচয় হল মূলত প্রবৃত্তির অনুসরণ। প্রবৃত্তি যা আদেশ করে সে তাই করে । প্রবৃত্তি যা নিষেদ করে তা সে করে না। এক্ষেত্রে আল্লাহর এই বাণীর অনুসরণেই বুদ্ধিমানে কাজ, আর তুমি অপব্যয় করো না। যে ব্যক্তি এক মাসের খরচ এক দিনে ব্যয় করবে, তাকে করে চলবে সে প্রশান্ত চিত্তে দিনে কাটাতে পারবে। অপচয়ের মাধ্যমে মানুষ অন্যদের প্রতি যত্মহীন হয়ে পড়ে। তবে সে তখনই টের পায় যখন সে সংকীর্ণতার সম্মুখীন হয়। যেমন ইউসুফ আ. থেকে বর্ণিত আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আপনি তো কখনো পরিতৃপ্ত হয়ে খান না? তিনি বললেন, আমি যদি পরিতৃপ্তি হয়ে খাই তাহলে ক্ষুধা কী জ্বালা তা আমি ভুলে যাব। অপচয়কারী তো আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে ভুলে থাকে, সে কিভাবে অন্যদের প্রতি গুরুত্ব দিবে?
মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের পানাহারের বিষয়ের পুরাতন। পানাহার-এর বিষয়ে কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহ্-এর বিধানই মুসলিমদের অনুসরণ করতে হবে। এমনকি ফিকহের কিতাবগুলো খাদ্য ও পানীয়ের জন্য আলাদা করে অধ্যায় রচিত হয়েছে। সেখানে হারাম খাদ্য নিষেদ করা হয়েছে, খাদ্যের আদব রক্ষা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান যুগে পানাহার অতিভোজন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আর এভাবেই খাদ্য পানীয়ের কোম্পানীগুলো অর্থ ধ্বংস করে চলছে। অতিভোজনের জন্য বিভিন্ন হোটেলে রেষ্টুরেন্ট খোলা হচ্ছে। দুদিন পর নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাস্তবাদী ধ্যান-ধারণায় পুষ্ট লোকদের অন্ধ অনুকরনের পিছনে মুসলিমরা ও ছুটে চলছে। অধিকাংশ মানুষের জীবনই অনুষ্টান ও পেক্ষাপটে অপচয় করাটাই অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এমনকি আমাদের অনুষ্ঠানগুলো ব্যয়বহুল আর আমাদের রমজান মাস ইবাদত ও তাহজ্জুদের পরিবর্তে অপচয়ের মৌসুমে পরিণত হয়েছে।
মানুষ তার জীবনে চলার পথে গুরুত্বপূণ দায়িত্বসমূহ পালন করে থাকে। যেমন, আল্লাহর ইবাদত, পৃথীবি বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা ও সেখানে কল্যান ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করা, এজন্যই সে খাদ্যের প্রতি মুখাপেক্ষী। যাতে করে সে বড় হয় জীবন ধারণ করতে পারে চলাফেরা ও কাজ কর্ম করতে পারে। এ জন্য সে পানীর প্রয়োজন বোধ করে। যেহেতু পানী ছাড়া মানুষ বেশি দিন বাচঁতে পারে না সেহেতু বেচেঁ থাকার তাগিদেই সে পানাহারের প্রতি মুখাপেক্ষী। ঠিক তদ্রæপ বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য পরিমান মতো গ্রহন করা মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে শক্তিশালী ও সুস্থতা দান করে। আবার একই খাদ্য গ্রহন করা মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ। এজন্য বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য তাকে গ্রহন করতে হয়। যেমন, পানীয়, সুগার, প্রোটিন, তেল, চর্বি ভিটামিন সহ বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য। সুতরাং মানুষের ক্ষুধা ও পিপাসা নিবারণে যতটুকু পানাহারের প্রয়োাজন ততটুকু গ্রহন করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, আর শরীয়ত তাই অনুমদন দেয়। জনাব মহিউদ্দিন মাস্তু বলেছেন, “অতিভোজন যেমন রোগের জন্ম দেয় ঠিক তেমনি একেবারে খাদ্য গ্রহণ না করা রোগের জন্ম দেয় ও ইবাদতে অলসতা সৃষ্টি করে। আর পানাহারের মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা অন্তরকে শান্তি প্রদান করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন