শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরে সাগরে ইলিশের ছড়াছড়ি এক ট্রলারের ৮৭ মন ইলিশ বিক্রী হল ২৭ লাখ টাকায়

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:৫৫ পিএম

বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরনে টানা ৬৫ দিনের নিশেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরে এখন ইলিশের ব্যপক সমারহ। ঝাকেব ঝাকে ইলিশ উঠে আসছে সাগর ও উপক’লে জেলেদের জালে। দুবলা পয়েন্টের পূর্ব প্রান্ত থেকে ভোলার মনপুরার ভাটিতে ঢালচর ও চর কুকরী-মুকরী পর্যন্ত সাগর উপক’ল ও কিছুটা গভীর এলাকায় জাল বোঝাই করে ইলিশ উঠে আসছে ট্্রালরে। গত সপ্তাহ খানেক ধরে যে হারে ইলিশ ধড়া পড়ছে সাগর উপক’ল ও সংলগ্ন গভীর এলাকায় তা নিকট অতীতে দেখা যায়নি বলে পাথরঘরাটা, গলাচিপা, আলীপুরÑমহীপুর, চর মোন্তাজ ও চরফ্যশনের মৎস আড়তের মালিক-শ্রমিক ছাাড়াে সাগরের জেলেরারা জানিয়েছেন। দুদিন আগে ‘এফবি সাইফ-২’ নামের একটি ট্রলার পাথরঘাটার ভাটিতে বঙ্গোপসাগর থেকে এক টানে ৮৭ মন ইলিশ আহরন করে মোকোমে ফিরে ২৭ লাখ টাকায় বিক্রী করেছে।

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম ও বাজারগুলোও গত সপ্তাহখানেক ধরে সাগরের পাশাপাশি অভ্য্যন্তরীন নদ-নদীর ইলিশে ভরপুর। তবে মধ্যসত্বভোগীদের কারনে একদিকে জেলেরা ইসব মাছের ন্যায্য দাম পায়না, তেমনি ক্রেতারাও অনেক বেশী দামে তা কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
এরফলে ‘ইলিশকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রজনন থেকে শুরু করে বেড়ে উঠতে দিলে তার উৎপাদন যে ক্রমান্বয়ে বাড়বে খুব ধীরে হলেও জেলে সহ মৎস্যজীবীরা বুঝবেন’ বলে আশা করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন। প্রজনন মৌসুমে আহরন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি জাটকা আহরন বন্ধে প্রদক্ষপ গ্রহনের ফলে গত দুই দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হবার ব্যপারে আশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তর। আর এ মাছের ৬৬% উৎপাদিত হচ্ছে বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীন ও উপক’লীয় জলাশয়ে। গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের সম্ভাব্য উৎপাদন ছিল প্রায় ৭০ হাজার টন।
দেশের মৎস্য সম্পদে সামুদ্রিক মাছের অবদান প্রায় ৮ ১০%। বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য সহ চিংড়ির প্রজনন প্রক্রিয়া নিরাপদ ও নিশ্চিত করার পাশাপাশি আহরন প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে, বঙ্গাপসাগরে নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সব ধরনের বানিজ্যিক মাছধরা নৌযানে মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ছিল। মৎস বিজ্ঞানীগন এসময়কে ইলিশ বাদে অন্য মাছের প্রজনন মৌসুম বিবেচনা করেই নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছেন। ইলিশের মূল প্রজনন মৌসুম আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগেÑপড়ের ২২দিন। এসময় বঙ্গোপসাগরের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মৎস আহরন সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকবে।
অপরদিকে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে আরো সমৃদ্ধ করতে ২০১৯ থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে দেশে প্রথম ‘প্রধান প্রজনন মৌসুম’এ ১০ দিন ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
দেশের উপক’লীয় তটরেখা এবং সমুদ্রের ২শ নটিক্যল মাইল পর্যন্ত ‘একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা’র পরিমান ১ লাখ ১৮ হজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। ছোট-বড় নানা আকার-প্রকারের ৪৭৫ প্রজতির মৎস্য সম্পদ ছাড়াও ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ ও ১৩ প্রজাতির প্রবাল সহ বিভিন্ন জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের সমুদ্র এলাকা।
এসম্পদকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষেই মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১৫ সাল থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে এবং ২০১৯ সাল থেকে সব মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রেই ৬৫ দিনের মৎস্য আহরন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশে উৎপাদিত ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টন মাছের মধ্যে সামুদ্রিক জলাশয়ে উৎপাদন ছিল প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। যা পরবর্তি বছরগুলোতে ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
তবে উপক’লের জেলে ও মৎস্যজীবীরা ৬৫ দিনের এ আহরন নিষিদ্ধের বিষয়টিকে ভালভাবে না নিলেও মৎস্য সম্পদের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই তা করা হচ্ছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ধীরে হলেও জেলে ও মৎস্যজীবীগন এ বিষয়টি বুঝবেন বলে অশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। যা আগামী দিনে দেশকে মৎস সম্পদে আরো সমৃদ্ধ করবে বলেও মনে করছেন মহলটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন