শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হোমিও-ইউনানি ডিগ্রিধারীরা ডাক্তার লিখতে পারবেন না

পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী কোনো ব্যক্তি নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে এসব বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। গতকাল এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ ৭১ পৃষ্ঠার এ রায় দেন। রায়ের আগে এ সংক্রান্ত একটি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে রুলটি খারিজ করে দেন আদালত।

রায়ে বলা হয়, দুঃখজনকভাবে এটি লক্ষ্যণীয় যে, এখানে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার (উৎ.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিগত ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তারিখের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নামের পূর্বে ‘ডাক্তার’ পদবি সংযোজনের অনুমতি দিয়েছে, যা এক কথায় আইনের কর্তৃত্ব বহিভর্‚ত তথা বেআইনি।

এছাড়া বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড কর্তৃক ইংরেজি ২০২০ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদেরকে তাদের নামের পূর্বে পদবি হিসেবে ডাক্তার ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করাও বেআইনি।
রায়ে বলা হয়, বিকল্পধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা নামের আগে ইন্টিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান কমপ্লিমেন্টারি ফিজিশিয়ান, ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন প্র্যাকটিশনার এবং কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন প্রাক্টিশনার পদবি ব্যবহার করতে পারেন। পাশ্ববর্তী ভারতেও বিকল্প ধারার চিকিৎসকরা ‘ডাক্তার’ লিখতে পারে না।

রায়ে হোমিও-ইউনানি তথা বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ৫ হাজার বছরের প্রাচীন। সুতরাং ৫ হাজার বছর ধরে পুরো পৃথিবীতে চলে আসা প্রাচীন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির যথাযথ এবং সঠিকভাবে পঠন এবং প্রশিক্ষণ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি তথা পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া শুরু হয় আজ থেকে ১৬২ বছর আগে। পৃথিবীর প্রথম প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির আইনটির নাম ‘দ্য মেডিকেল অ্যাক্ট, ১৮৫৮’ যা ইংল্যান্ডের সংসদ পাস করেছিল। অর্থাৎ ১৮৫৮ সালের আগে চিকিৎসা ব্যবস্থা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল না। অপরদিকে ৫ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে আসছে।

রায়ে আরও বলা হয়, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে ‘কাজাখাস্তান ঘোষণা’ থেকে ‘আলমাআটা ঘোষণা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় আইন দ্রæত প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরামর্শ দেয়া হলো। সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তথা প্রচলিত এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ‘রোগীকেন্দ্রিক চিকিৎসা সেবা’ নীতিমালা অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হলো। প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির প্রথক মন্ত্রণালয় তথা ‘মিনিস্ট্রি অব আয়ুশ গভর্নম্যান্ট অব ইন্ডিয়া’ এর আদলে বাংলাদেশের একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করার পরামর্শ দেয়া হলো।

প্রসঙ্গত, হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রিধারীরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। এ প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও অ্যাডভোকেট খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। বিবাদীপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রওশন আলী ১৫ আগস্ট, ২০২১, ১০:১৬ এএম says : 0
আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসা গাছ গাছড়া নির্ভর। এটা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ওষুধে কোনো ওষুধ থাকে না। এতে কোনো কাজও হয় না। তারপরও এ পদ্ধতি সীমিত আকারে চলতে দেওয়া যায় যাতে দেশের চিকিৎসক ঘাটতি কিছুটা হলেও তাদের দ্বারা প্লাসিবো ইফেক্টের মাধ্যমে কার্যকর থাকে। জটিল ও কঠিন রোগীকে যেন তারা হাসপাতালে রেফার করে তারও নির্দেশনা থাকা উচিত। ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন