শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের টাকায় কর্মকর্তাদের প্রমোদ ভ্রমণ

প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিদেশ ভ্রমণের নীতিমালা নেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কোটি কোটি টাকা খরচ করে সারা বছর বিদেশ ভ্রমণ করে আসছেন এক শ্রেণীর ব্যাংক কর্মকর্তা। অফিসিয়াল ভ্রমণের কথা বলে ছুটি নিলেও আসলে যাচ্ছেন ব্যক্তিগত মনোরঞ্জনে। ছুটি থেকে ফিরে জমা দিচ্ছেন না কোন অভিজ্ঞতা প্রতিবেদন। তাদের এসব ভ্রমণকে ‘প্রমোদ ভ্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে কোন নীতিমালা নেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এ কারণেই চাইলেই ছুটি মিলছে মন্ত্রণালয় থেকে, জানিয়েছেন ব্যাংকিং বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এসকল ভ্রমণে কোন অর্থ সহযোগিতা করে না। ব্যাংকের অর্থেই তারা বিদেশে যান। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত। তাই পরিচালনা পরিষদের অনুমতির পর ছুটি দেয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকে না। জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকে গত দু’বছর দুই জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দেবাশীষ চক্রবর্তী ও সদ্য অবসরে যাওয়া খলিলুর রহমান চৌধুরী (এফসিএ)। ব্যাংকিং বিভাগের কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খলিলুর রহমান চৌধুরী সিনিয়র হলেও তিনি মাত্র দু’বার বিদেশ ভ্রমণের ছুটি পেয়েছেন। একবার হজ্বের জন্য, অন্যবার প্রবাসী মেয়েকে দেখতে যাওয়ার জন্য। যা সম্পূর্ণ ছিলো তার নিজ খরচে। অপরদিকে দেবাশীষ চক্রবর্তী এ পর্যন্ত দুই বছরে ছুটি নিয়েছেন ১৬ বার। তার মধ্যে ১৪ বারই হচ্ছে ব্যাংকের খরচে। কিন্তু তিনি কোনবারই ভ্রমণ শেষে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কোন অভিজ্ঞতা প্রতিবেদন জমা দেন নি। তার বিদেশ ভ্রমণে রূপালী ব্যাংকের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক ব্যারিষ্টার জাকির বলেন, ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট যখন কোন ছুটির সুপারিশ পরিচালনা পরিষদে পেশ করে থাকে তখন ঐ কর্মকর্তা বিদেশ গেলে ব্যাংকের কি কি লাভ হবে, সুনাম বাড়বে এ সকল বিষয় উপস্থাপন করে। তাই ব্যাংকের সুনাম বৃদ্ধির স্বার্থে পরিচালনা পরিষদ ছুটির প্রস্তাব পাস করে থাকে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার ছুটির আবেদন কেন বারবার পেশ করা হচ্ছে এবিষয়ে আমি কয়েকবার বোর্ড সভায় জিজ্ঞেস করেছি। কোন সুদত্তর পাইনি। এখানে ব্যাংকের যা ক্ষতি হয়েছে তার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের। পরিচালনা পরিষদের উপর দায় বর্তাবে না। এসকল বিষয়ে কমার্শিয়াল অডিটের কড়া নজরদারি দাবি করেন এই পরিচালক।
ব্যাংকসূত্রে জানা গেছে, গতমাসে ফিজি ভ্রমণ শেষ করে চলতি মাসে দেবাশীষ চক্রবর্তী আবার মালেশিয়া ভ্রমণে যাচ্ছেন। তিনি ছুটি ম্যানেজ করার জন্য ব্যাংকিং বিভাগের উপ-সচিব মিতু মরিয়মকে রূপালী ব্যাংকের একটি গাড়ী সার্বক্ষণিক দিয়ে রেখেছেন। এছাড়া গত এমডি ফরিদ উদ্দিনকে বিদেশ সফরের টোপে ফেলে ছুটি আদায় করেছেন। বর্তমানেও একই পথে আগাচ্ছেন বলে জানা গেছে। রূপালী ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ থাকলেও বিদেশ ভ্রমণ সচল রেখেছেন এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ডিএমডি দেবাশীষ চক্রবর্তীর বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে গত ২০১৫ সালের জুন থেকে ১৬ সালের জুন পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের প্রায় ২৭ জন কর্মচারী ৬ বার ব্যাংকের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যাতে অবশ্য এরকম কোন অভিযোগ নেই। কারণ, তারা বিদেশ ভ্রমণ শেষে তাদের অভিজ্ঞতা প্রতিবেদন ব্যাংকে জমা দিয়েছেন।
একই সময়ে সোনালী ব্যাংকের ৪৫ জন কর্মচারী ৮ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু তারা বিদেশ ভ্রমণের কোন অভিজ্ঞতা পত্র জমা দেন নি।
অগ্রণী ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী এমডি আব্দুল হামিদ ৫ বছরে ৪৭ বার ব্যাংকের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যার অন্যতম সহযাত্রী ছিলেন বরখাস্তকৃত ডিএমডি মিজানুর রহমান। ব্যাংকের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিদেশ ভ্রমণ করেছেন সমানতালে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালিদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংক কর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংকার দুর্নীতি ঢাকতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকিং বিভাগের কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট রাখতে দেশীয় দালালদের মাধ্যমে নিয়মিত সেমিনার আয়োজন করে ব্যাংকের টাকায় প্রমোদ ভ্রমণ করে থাকেন। যা বন্ধ করতে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। এবং ব্যাংকিং বিভাগের উচিত কোন কর্মকর্তা যেন বছরে দু’বারের উপর বিদেশ যেতে না পারে এমন একটি নিয়ম তৈরী করা। এসকল ব্যাংকারদের অতিরিক্ত ভ্রমণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mahamudul Ahsan ১৬ জুলাই, ২০২০, ৫:৫৩ এএম says : 0
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন