ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা-অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ঢাকার সাভার আশুলিয়ার মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিপদজনক এসকল যান। প্রকাশ্যে হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়ে হরহামেশা এসব অবৈধ রিকশা অটোরিকশা চলাচল করলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে দাবী সচেতন মহলের। তবে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো রিকশা অটোরিকশা ধরলেও অর্থের বিনিময়ে তা ছেড়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর হাইওয়ে পুলিশ বলছে এদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আটকসহ মামলা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শত শত ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা-অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করছে। সড়কে এসকল রিকশা অটোরিকশাগুলো জটলা করে মহাসড়ক দখলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ট্রাফিকের দায়িত্বরতদের সামনেই এসব তিন চাকার যান চলাচল এবং দীর্ঘ সময় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
মহাসড়কে তিন চাকার এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা-অটোরিকশা চলাচলের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানিসহ আহতের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
বাইপাইল ত্রিমোড়ে ব্যাটারি চালিত এক রিকশা চালক রফিকুল ইসলাম জানায়, সকাল হলেই রিকশা নিয়ে মহাসড়কে বের হতে হয়। তিনি বলেন, আমিত আর অন্য কোন কাজ জানি না তাই রিকশা নিয়েই বের হতে হয়। মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, সেটা আমরা যারা রিকশা চালাই তারা সকলেই জানি। তবে মাঝে মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ ধরে ফেলে। তখন বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে ছাড়াতে হয়।
কত টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল জানায়, কখনও দুই হাজার, আবার কখনও এক হাজার টাকা দিলেই ছাড়াতে হয়। তবে কখনও টাকার রশিদ দেয় আবার কখনও টাকার কোন রশিদ দেন না।
আশুলিয়ার জিরানী বাজারে অটোরিকশা চালক সেন্টু জানায়, ঈদের আগে তাকে চেতনা নাশক খাইয়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুইজন। তিন চার দিন পরে বাড়িতে আসি এবং খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। সুস্থ হয়ে আবার মাসিক কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনেছি। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে চালাতে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু মহাসড়কে উঠলেই মাঝেমধ্যেই এক হাজার আবার কোন কোন সময় দুই হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই মহাসড়কে আসি। তবে সকালের দিকে পুলিশ তেমন কিছু বলে না। তাই সকালেই অটোরিকশা নিয়ে মহাসড়কে এসেছি। সকালে যাত্রীও বেশী পাওয়া যায়, আবার ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লাসিক পরিবহণের এক চালক জানান, মহাসড়কে এসব অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-অটো রিকশার কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাস চালকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকরা বিব্রতবোধ করে। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের জোর নজরদারি থাকলে এসব বন্ধ হবে অচিরেই।
প্রকাশ্যে এসব নিষিদ্ধ শত শত অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-অটোরিকশা চলাচল করলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। তবে হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মধ্যে রিকশা জব্দ করে রাখে, কাউকে আবার মামলাও দিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছে একাধিক রিকশা চালক।
এব্যাপারে আশুলিয়া থানা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম হোসেন জানান, মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও আমাদের আশুলিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন হওয়ায় মহাসড়কে রিকশা অটোরিকশা উঠছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে প্রায় প্রতিদিনই বাইপাইল, জামগড়া এবং ইপিজেড ট্রাফিক বক্স এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা অটোরিকশা ধরা হয়। এসব রিকশা অটোরিকশা ধরা হলেও চালকদের কাছ থেকে র্যাকার বিল রেখে আবার ছেড়েও দেয়া হয়।
তিনি জানান, মহাসড়কে চলাচলরত নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত রিকশা অটোরিকশা ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কিংবা তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করলে অনেকটাই কমে যেত। তারা মহাসড়কে উঠতে সাহস পেত না এমনটাই প্রশাসনের প্রতি সুপারিশ করেন তিনি।
এব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা খসরু পারভেজ জানান, এটা নিয়ন্ত্রণের ভেতরেই আছে। প্রতিনিয়ত এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়তই আমরা রিকশা, অটোরিকশা ও ভ্যান এগুলো ডাম্পিংয়ে পাঠাচ্ছি। এছাড়া র্যাকার বিল করা হচ্ছে। এভাবেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন