মাওলানা সাদিক আহমদ : সমকালীন বৃহত্তর সিলেটাঞ্চলে যে সকল পীর-বুযুর্গ ও আওলিয়ায়ে কেরাম মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের আত্মশুদ্ধির কাজে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদের অনেকেই ছিলেন- বিশ্ববিখ্যাত বুযুর্গ, কুত্বুল আলম, শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.) -এর প্রত্যক্ষ শাগরিদ, মুরীদ কিংবা খোলাফায়ে কেরাম। তাঁদের মধ্য থেকে উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- হযরত শায়খে বাঘা, শায়খে রেঙ্গা, শায়খে বর্ণভী, শায়খে কৌড়িয়া, শায়খে ফুলবাড়ী, শায়খে কামারগাঁও, শায়খে বানিয়াচঙ্গী, শায়খে মামরখানী, শায়খে রায়পুরী, শায়খে ভেড়াখালী, শায়খে রায়গড়ী, শায়খে ধুলিয়া, শায়খে গাজিনগরী, শায়খে গহরপুরী, শায়খে কাতিয়া ও শায়খে গুনই (রাহ.)সহ আরো অনেকেরই নাম। আমাদের চেনা-জানা এ সকল বুযুর্গানে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগ, কুরবানী ও মুজাহাদা এবং নিঃস্বার্থ ইসলাহী কর্মকা-ের বদৌলতে বৃহত্তর সিলেটের মানুষ অন্যান্য এলাকার তুলনায় আজো ধর্মানুশীলনে এগিয়ে রয়েছেন, তা সর্বজন বিদিত। আল্লাহ্ভূলা মানুষদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনা, আল্লাহ্র কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, দুনিয়ামুখী মানুষদেরকে আখেরাতমুখী করা, দ্বীন ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন লোকদেরকে ধার্মিকতা পালনে উৎসাহিত করা, সর্বোপরি-শিরক, বিদআত, অন্যায়-অনাচার, চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস-দুর্নীতি এবং সর্বপ্রকার অশ্লীলতা বেহায়াপনা, কুসংস্কার ও পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে সমাজের মানুষকে আল্লাহ্ভীরু, সচ্চরিত্রবান ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের এসব আকাবির বুযুর্গদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের লিল্লাহিয়্যাত, ইখলাস, আত্মত্যাগ, বদান্যতা, স্বদেশপ্রেম, স্বজাতিপ্রেম, নিঃস্বার্থ খেদমত ও সুমহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কত অসংখ্য মানুষ আদর্শবান হয়েছে, সচ্চরিত্রবান হয়েছে, মাটির মানুষ হয়েও সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। তাইতো দেখা যায়, আমাদের এসব বুযুর্গানে দ্বীন আমাদের ছেড়ে তাদের পরম প্রিয়পাত্র মাওলায়ে হাকীকীর দরবারে চলে গেছেন সত্য, কিন্তু আমরা আজো তাদের ভুলতে পারিনি, ভুলতে পারবো না কখনো। কেননা তাদের ইখলাস, মেহনত-মোজাহাদা ও আত্মত্যাগের বদৌলতেই আজ আমরা একটি সুন্দর ও সুখী সমাজ নিয়ে তথা ধর্মীয় পরিবেশে বসবাস করতে সক্ষম হয়েছি। তাই যতদিন এ সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা থাকবে, মানুষের মধ্যে ধর্মচর্চা চলতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এসব বুযুর্গানে দ্বীনের অবদান দেশ ও জাতির সামনে স্বর্ণাক্ষরে ভাস্বর হয়ে থাকবে। ধর্মপ্রাণ জনগণ তাদেরকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে। তাদের জীবনীতিহাস থেকে নুতন প্রজন্ম প্রেরণা লাভ করবে এবং নিজেদের জীবনপথের দিকনির্দেশনা খোঁজে পাবে।হযরত শায়খে গুনই (রাহ.)কে দেখেছি, ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে পীর-মুরীদী ও খানকাভিত্তিক তা’লীম তরবিয়তের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন তাফসীর মাহ্ফিলের সভাপতির বক্তব্যে মানুষকে সর্বদাই আল্লাহ্র পথে ডাকতে। “আমরা একদিন এ দুনিয়ায় ছিলাম না, এখন আছি, আবার একদিন থাকবো না। বাড়ি-ঘর, ধন-সম্পদ, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন সবকিছু ছেড়ে আমাদের সবাইকে একদিন চলে যেতেই হবে অনন্ত জীবনের পথে, আখেরাতে। আখেরাতের প্রথম ঘর কবর। এই কবর হয়তো বেহেশতের বাগান কিংবা জাহান্নামের গর্ত হবে। এ দুনিয়ার টাকা-পয়সা, বাড়ি-ঘর, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব পরকালে কোন কিছুই কাজে আসবে না। সেখানে কাজে আসবে শুধুমাত্র ঈমান ও নেক আমল। তাই আমরা দুনিয়ার ধান্ধা ছেড়ে আখেরাতের ফিকির করি, ঈমান-আমল ইস্লাহ করে পরকালের পুঁজি সংগ্রহ করি।” এই ছিল শায়খে গুনইর ওয়াজ-নসীহতের সারকথা। মূলতঃ এ কথাগুলো ছিল দ্বীনেরই সারকথা। আর এ কথাগুলো বুঝানোর জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণের আগমন হয়েছিল এ ধরার বুকে। শেষ যামানায় যেহেতু আর কোন নবী রাসূল জন্মগ্রহণ করবেন না, তাই এ জিম্মাদারী পালনের জন্যই মহান আল্লাহপাক যুগে যুগে দেশে দেশে অসংখ্য হক্কানী উলামায়ে কেরাম ও পীর-বুযুর্গ তৈরি করেছেন এবং কেয়ামত অবধি এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন