শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাল্লা দিয়ে চলছে ভাঙ্গন

রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ৭:০৮ পিএম

ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কাড়নে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নদীর পানি এই বাড়ছে, এই কমছে। পানি কমা-বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙ্গন। পানি বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

বুধবার দুপুর পর্যন্ত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁয়ে পানি প্রবাহিত হয়। দুদিন আগে তা ২০ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানির প্রবল স্রোতের কাড়নে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। বর্তমানে পানি কিছুটা কমলেও আবারও পানি বৃদ্ধির আতঙ্কে আছেন নদী তীরবর্তী মানুষ।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর উভয় তীরের চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে উভয় তীরে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার আমন ধান ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার মানুষ। হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ও পাটিকাপাড়া এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে এ দুটি ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে চর সিন্দুর্না কমিউনিটি ক্লিনিক, সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদরাসা।

হাতীবান্ধা সিন্দুর্না ইউনিয়নের সদস্য মফিজার রহমান জানিয়েছেন, গত ৩ দিনে সিন্দুর্না ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের অন্তত ৫০টি পরিবারে ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৫টি চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নির্মিত বাঁধটি গত মাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় বানের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। লক্ষীটারী ইউনিয়নের কেল্লারপাড় চরে স্বেচ্ছাশ্রমের উপবাঁধটিও ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের ৬/৭ পরিবারের ঘর-বাড়ি ইতিমধ্যে তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। চরম হুমকিতে পড়েছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ। লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ণ, পূর্ব ইচলি, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর, চিলাখাল, খলাইরচরসহ নিম্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার, নোহালীর মিনার বাজার, কচুয়াচর, বৈরাতী বাঁধের ধার, চর নোহালী, বাগডহরা চরের ৫শ, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়াচর, তালপট্টি, আলাল চর, নরসিং চরের ৫শ, গজঘন্টা ইউনিয়নের কালির চর, ছালাপাক, গাউছিয়া বাজার, জয়দেব, মইশাসুর, রামদেব চরে ৫শসহ আলমবিদিতর ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের নিম্ন এলাকার ৫/৬শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজারের বেশী পরিবার ইতিমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গনের ফলে ইতিমধ্যে বিনবিনা চরে ৬/৭টি পরিবারের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, গত ১৫দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি এই বাড়ছে, এই কমছে। পানি কমতে শুরু করলেও হঠাৎ করে আবার বাড়তে শুরু করে। আগে সাধারণত এমনটি হয়নি। পানি কমতে থাকলে সাধারণত কমেই যায়। কিন্তু এবার হচ্ছে ভিন্ন। সকালে কমলে রাতে বাড়ছে। এভাবেই চলছে গত ১৫দিন থেকে। পানি বাড়া-কমার মাঝে চলছে ভয়াবহ ভাঙ্গন। গত মাসে দু’দফা বন্যা হয়ে চলতি মাসের শুরু থেকে তিস্তার পানি কমতে থাকে। এর মাঝেও পানি বেড়েছে। গত শুক্রবার থেকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি। সোমবার দুপুর থেকে পানি স্থির থাকলেও মঙ্গলবার থেকে খুব আস্তে আস্তে কমতে থাকে। কিন্তু ভাঙ্গন কমছে না। কোন কোন স্থানে পানি কমে যাওয়ায় ভাঙ্গন বেশি হচ্ছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বুধবার সকালে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৬০ সেমি.) সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গত সোমবার সকাল থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তা বিপদসীমার ১০ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বর্তমানে পানি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন