বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেবায় অজুহাত, লাইসেন্স চায় অপারেটররা

আইআইজি, আইসিএক্স, আইজিডব্লিউ, এনটিটিএনে চোখ

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবার মান অত্যন্ত নাজুক। ধীরগতির ইন্টারনেট, কলড্রপ, মিউট কল, ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণাসহ মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিতে প্রতিমাসে যে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ জমা হয় তার ৯০ শতাংশই মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়ে। এমনকি অপারেটরদের ফেসবুক পেজেও সবচেয়ে বেশি গ্রাহকদের অভিযোগ। কিন্তু এসব অভিযোগে কোন কর্ণপাত নেই মোবাইল ফোন অপারেটরদের। নিম্নমানের সেবার বিপরীতে তাদের রয়েছে নানা অজুহাত। বছরের পর বছর ধরে এই সেবা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিলেও সেবার মান উন্নয়নে নজর নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর। বরং তাদের দৃষ্টি এখন মোবাইল সেবার পাশাপাশি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) সার্ভিস, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইপিটিএসপি), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ), পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন), মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতি। যে সেবা প্রদানের জন্য বিটিআরসি তাদের লাইসেন্স দিয়েছে সেটি উন্নত না করে নতুন নতুন এসব লাইসেন্স চায় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর অজুহাত হিসেবে তুলে ধরছে এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে উন্নত হচ্ছে না মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা। গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত বলেন, মোবাইল সেবা বিষয়টি অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। অন্যান্য দেশে সেবার বিভিন্ন ধাপে লাইসেন্স নেই। আমাদের আইআইজি, আইসিএক্স, আইজিডবিøউ, টাওয়ারসহ ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণে আলাদা আলাদা ব্যবসা রয়েছে, তাই সমস্যাগুলো হচ্ছে। অপারেটরদের এসব লাইসেন্স থাকলে সেবা আরো উন্নত করা যেত।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেটের ধীরগতির বিষয়ে অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে উঁচু ভবন উঠে যাচ্ছে, এসব ভবনের কারণেও সমস্যা হচ্ছে, বিষয়গুলো সমাধানে আমরা সব সময় চেষ্টা করে থাকি।

মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫ তম। পেছনে কেবল আফগানিস্তান ও ভেনিজুয়েলা। ইন্টারনেটের গতি নিয়ে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা প্রতিষ্ঠান ওকলার গত জুন মাসে এ চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ১২ দশমিক ৪৮ এমবিপিএস। আপলোডের গতি ৭ দশমিক ৯৮ এমবিপিএস।

ওকলার তথ্য বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট রয়েছে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। ডাউনলোডের গতি ১৯৩ এমবিপিএসের বেশি। এরপরে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, নরওয়ে ও সাইপ্রাস। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম ৫৮, মালয়েশিয়া ৮৯, কম্বোডিয়া ৯১, নেপাল ১০৫, মিয়ানমার ১০৯, পাকিস্তান ১১৪, ভারত ১২২ এবং শ্রীলঙ্কা ১২৯তম অবস্থানে রয়েছে। দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি যে কম, তা গত মার্চে বিটিআরসির এক জরিপেই উঠে আসে। এতে দেখা যায়, ঢাকার গ্রাহকেরা চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবায় (ফোর-জি) ৩ থেকে ৬ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন। অথচ, বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া মান অনুযায়ী, গ্রাহকদের সর্বনিম্ন ৭ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দিতে হবে।

বিটিআরসি ও ওকলার জরিপে যে তথ্য এসেছে বাস্তবে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা আরও খারাপ। খোদ রাজধানীতেই প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট গ্রাহকরা। জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে তো নামেই ফোরজি ফোরজি সেবা দিচ্ছে তারা।

নেটওয়ার্ক গতির মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেই স্পেকট্রামের দোহাই দেওয়া হয়। অথচ গত মার্চেই অনুষ্ঠিত তরঙ্গ নিলামে ১৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে অপারেটরগুলো। সেসময় বলা হয়েছিল নতুন তরঙ্গ যুক্ত হলে সেবার মান উন্নত হবে। কিন্তু ৫ মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও মান তো উন্নত হয়নি, বরং আরও অবনতি হয়েছে। এখন আবারও অপারেটররা সেই স্পেকট্রামেরই অজুহাত দিচ্ছেন।

এদিকে ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ওকলার ওই প্রতিবেদকে সঠিক মানতে নারাজ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। ব্যবসায়ীক দৃষ্টিকোণ থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠান তিনটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। যদিও ওকলার জরিপে ইতিবাচক দিক থাকলে সেটি ফলাও করে প্রচার করে এসব অপারেটর।

মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেশনস অব বাংলাদেশ (এমটব) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জানতে চাইলে তিন অপারেটরের প্রতিনিধিই দেখিয়েছেন নানা অজুহাত।

এমটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ফরহাদ হোসেন তার প্রেজেন্টেশনে বলেছেন, রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে তারা সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছেন না। একই অজুহাত দেখিয়েছেন রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও একইভাবে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং তারা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন। সেখানে সম্ভব হলে বাংলাদেশে কেন নয়? এ প্রশ্নে অপারেটর প্রতিনিধিরা এড়িয়ে যান। রাজধানীর বাইরে জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে বহুতল ভবন নেই সেখানে কেন নেটওয়ার্ক উন্নত নয়, জানতে চাইলেও কোন উত্তর দেননি রবির শাহেদ আলম। জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে ফোরজি ডিভাইসের স্বল্পতা ও রাজস্বের কথা চিন্তা করেই নেটওয়ার্ক উন্নত করা সম্ভব হয়না বলে জানিয়েছেন বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান।

এছাড়া অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা ঠিক মতো দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে রবি আজিয়াটার শাহেদ আলম বলেন, একই প্যাকেজে সব সময় অব্যবহৃত ডেটা ফেরত দেওয়া হয় আর এসব বিষয়ে সবসময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী অপারেটররা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।”

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বেসরকারি নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবাদাতা (এনটিটিএন) এবং ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) ট্যারিফ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ দুই ক্ষেত্রে ট্যারিফ বেঁধে দেওয়ায় মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমার সম্ভবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে শাহেদ আলম বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় দাম নিয়ে সমস্যার কারণে এসব ট্যারিফ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, আমরা মনে করি মোবাইল খাতে এ ধরণের সমস্যা নেই, তাই ট্যারিফ বেঁধে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন