বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শন, নেই রক্ষার উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পীরগঞ্জ (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা

রংপুরের পীরগঞ্জে এক সময় উত্তরবঙ্গের দোর্দ- প্রভাবশালী রাজা নীলাম্বরের ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র রাজবাড়ীর ইট-সুরকির ধ্বংসাবশেষ প্রাচীন ইতিহাসের তার সাক্ষ্য বহন করছে। শত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষার উদ্দেশ্যে রাজার খননকৃত নীলদরিয়া নামক পরিখা ক্রমেই ভরাট হয়ে অপরিচ্ছন্ন এক জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজা নীলাম্বরের রাজবাড়ীর সুবিশাল প্রাচীর, রাণীরঘাটসহ কথিত মৃত্যুকূপ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। চুরি হয়ে গেছে অনেক মূল্যবান সম্পদ। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর হতে দক্ষিণে ১৪ কি.মি. দূরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন ধাপেরহাট বন্দর থেকে ১০ কি.মি. পশ্চিমে নীলাম্বর রাজার বসতভিটা ও নীলদরিয়ার অবস্থান। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা নীলাম্বর দ্বাদশ শতকে ঐ রাজভিটায় বসেই দোর্দ- প্রতাপের সাথে এ অঞ্চলের শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী রাজা নীলাম্বর তার রাজভিটাকে মাঝখানে রেখে চারদিকে প্রস্থে ৫শ’ গজ করে পরিখা খনন করেন। যাতে সহজে শত্রুপক্ষ এসে রাজভিটায় আক্রমণ করতে না পারে। তিনি তার নামানুসারে, পরিখাটির নামকরণ করেছিলেন ‘‘নীলদরিয়া’’। পরিখাবেষ্টিত রাজভিটার পাশ ঘেঁষে প্রায় ১ কি.মি. লম্বা ইট-সুরকির ১৪ হাত উচ্চতা ও প্রশস্ত প্রাচীর দ্বারা কঠিন বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল। আজও তার স্মৃতি বিদ্যমান। রাজভিটার পূর্ব-দক্ষিণ পার্শ্বে ছিল রাণীরঘাট। সুন্দর বাঁধানো ঘাটের দু’পার্শ্বে ছিল ২টি হস্তিমূর্তি। কালের চক্রে ঐ ঘাটের হস্তিমূর্তি ২টি কেবা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রাচীর বেষ্টনীতে ব্যবহৃত লক্ষ লক্ষ ইট-সুরকির, সিংহভাগ উঠিয়ে আশপাশের গ্রামবাসীর কেউ কেউ তাদের ইটের তৈরির মাধ্যমে আধাপাকা বাড়ির মালিক বনে গেছে। আজও ধ্বংসকৃত ৩০ ফুট উঁচু প্রাচীরের উপরে উঠে চারদিকে দৃষ্ট্ িদিলে রাজা নীলাম্বরের দোর্দ- প্রতাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইতিহাস ও কিংবদন্তি রয়েছেÑমুসলিম পাঠান সেনাপতি হযরত শাহ ইসমাইল গাজী (রহ.) ইসলামধর্ম প্রচারে এ অঞ্চলে এসে রাজা নীলাম্বরের সাথে সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে রাজা নীলাম্বরের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। যুদ্ধে নীলাম্বর পরাজিত ও বন্দি হন। মুসলমানদের হাতে বন্দি নীলাম্বরকে গৌড়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর নীলাম্বরের কি পরিণতি হয়েছে তা আর ইতিহাসে খুঁজে পওয়া যায় না। নীলাম্বরের প্রতাপের কথা আজও ঐ এলাকার বয়স্কদের মুখে মুখে। একমাত্র যোগাযোগ অব্যবস্থার নীলাম্বরের রাজভিটায় সহসাই পৌঁছাতে পারে না কোনো পর্যটক কিংবা ভ্রমণ বিলাসী মানুষ। আজ পর্যন্ত এ রাজভিটায় গড়ে উঠেনি কোনো ডাকবাংলো। এমনকি প্রতœতত্ত্ব বিভাগের একটা সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই এখানে। ঘড়ির কাটা বন্ধ থাকবে না, চলব্।ে যে হারে নীলাম্বরের স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আগামী প্রজন্ম হয়তো একদিন অনুমানও করতে পারবে না যে কোথায় নীলাম্বরের রাজধানী ছিল? অথচ ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক মনোরম দিক বিবেচনা করলে এখানে পিকনিট স্পট গড়ে তোলা সম্ভব। যা থেকে প্রতি বছর সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বাড়াতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন