শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যশোরে আরো জঙ্গি তিন ভাই-বোনের আত্মসমর্পণ

প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমরা হেঁটেছি ভুল পথে
বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর : যশোরে আরো ৩ জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছেন পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমানের কাছে। আত্মসমর্পণকারীরা আপন ভাই-বোন। গতকাল পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এম মনির উজ জামান প্রেস ব্রিফিং করে আত্মসমর্পণকারীদের ব্যাপারে বলেন, তারা স্বেচ্ছায় চরমপন্থী সংগঠন ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছে, তাই তাদের সুযোগ দেয়া হলো। একই সাথে তাদের প্রাপ্য সকল আইনি সহযোগিতাও করা হবে। তাদের পরিবারের ৬ সদস্য জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত হলেও তিনজন আত্মসমর্পণ করেছে। বাকিদেরও আত্মসমর্পণের সুযোগ রয়েছে।
আত্মসমর্পণকারী তিনজন হলেন যশোর শহরের পুরাতন কসবা কদমতলা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে তানজিব আহমেদ ওরফে আশরাফুল, তার ভাই তানজির আহমেদ ও বোন মাছুমা আক্তার। তারা হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তানজিব আহমেদ জানান, ২০১৫ সালে যশোর সরকারি সিটি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে পড়াকালে শহরতলীর ধর্মতলায় চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে যেতেন। সেখানেই পরিচয় হয় হিযবুত তাহরীরের এক নেতার সঙ্গে। তার মাধ্যমে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরে তা অন্য ভাইবোনের সঙ্গে শেয়ার করেন এবং তারাও এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান জানান, হিযবুত তাহরীরের মোশরেফ পদবীর তানজিব ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে হিযবুত তাহরীর নানা বই, লিফলেট, দেশ ও সরকারবিরোধী কাগজপত্র, ল্যাপটপ, মোবাইলফোন সেট জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। এছাড়া ঢাকার খিলগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার করা হয় তাকে। দুটি মামলায় জামিন পেয়ে তিনি পলাতক ছিলেন। তানজিবের বড়বোন মাছুমা আক্তার যশোর পুলিশ লাইন স্কুল থেকে এসএসসি, ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তার স্বামীর নাম নাজমুল হাসান, তারা ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তানজিবের ছোটভাই এবং সংগঠনের তানজির আহমেদ (১৮)। তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে। তার বিরুদ্ধে যশোরের অভয়নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়।
আত্মসমর্পণকারীদের কথা, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি মিডিয়ায় প্রচারের পর আমি ও ভাইবোনরা ভুল বুঝতে পারি। সে কারণে অনুতপ্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্যে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ আত্মসমর্পণ করছি। ডিআইজির প্রেস ব্রিফিংয়ে এডিশনাল ডিআইজি ইকরামুল হাবিব, যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ মো. আবু সরোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর ৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার যশোরে জঙ্গী কানেকশনের তদন্ত রিপোর্ট তুলে ধরেন। একইসঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গীদের ছবিসহ পোস্টার প্রকাশ করেন। তাতে যশোর শহরের পুরাতন কসবা কদমতলা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে তানজিব আহমেদ ওরফে আশরাফুল, তার ভাই তানজির আহমেদ, বোন মাছুমা আক্তার ও মাকসুদা খাতুন, মাকসুদার স্বামী শাকির আহম্মেদ ও মাছুমার স্বামী নাজমুল হাসানের নাম ও ছবি রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়ির মুসাব্বির ওরফে প্রকাশ ওরফে তন্ময় (৩০) এবং ঢাকার আশকোনা দক্ষিণখান ৪০১ কলেজ রোডের হারেজ আলীর (২৭) ছবি ও নামও ছাপা হয় ওই পোস্টারে। সেখানে এসপি ঘোষণা দিয়েছিলেন কোন জঙ্গি রেহাই পাবে না। তবে তাদের একবার আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হবে। এসপির ওই হুংকারে একে একে আত্মসমর্পণ করছে। এ পর্যন্ত পোস্টারে প্রকাশিত মোট ১১ জন জঙ্গির মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে মোট ৭ জন আত্মসমর্পণ করলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন