মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : কলমের নীরব আর্তনাদ কি?

| প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

উত্তর : শোনো বন্ধু ! এ পৃথিবীতে আমিই সৃজিত হয়েছি সর্বপ্রথম। অতঃপর লিখেছি অনন্তকাল পর্যন্ত সকলের ভাগ্যলিপি। আমাকে দিয়েই লেখা হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল কুরআন। আমার নামেই নাযিল হয়েছে পবিত্র কুরআনে ‘সুরাতুল ক্বলাম’। আমি পেয়েছি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের পবিত্র হাতের পরশ। অর্জন করেছি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত লক্ষ লক্ষ হাদীস লিপির সৌভাগ্য। আমি পেয়েছি ইমামে আজম আবু হানিফাসহ বিশ^বরেণ্য সকল ইমামদের হাতের ছোঁয়া। আমাকে দিয়েই লিখেছেন যুগে যুগে সকল তাফসীরবিদগণ পবিত্র কুরআনের শত-সহস্র তাফসীর গ্রন্থ। আমাকে দিয়েই রচিত হয়েছে পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের সকল অধ্যায়। পৃথিবীতে জন্মেছে যত মহা মনীষী ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঝর্ণাধারা, আমিই দিয়েছি তাঁদের সকল জ্ঞানের দিশা। তাঁদের অনেকে হয়ত আজ মাটির নীচে, কিন্তু তাঁরা অমর হয়ে আছেন সকল মানুষের বুকে এবং থাকবেন চির স্মরণীয় হয়ে চিরদিন সবার মাঝে। নিশ্চয় তাঁদের এ আকাশচুম্বি সফলতা আমারই বদৌলতে।

বন্ধু! তুমিও ভালোবাসো আমাকে। গ্রহণ করো তোমার অন্তরঙ্গ হিসেবে। ব্যবহার করতে শেখো আমাকে। লেখতে থাকো প্রতিদিন যা কিছু শেখো পিতা-মাতা ও গুণীজনদের কাছে, কোন বইয়ের পাতায় বা শিক্ষকের মুখে। যা কিছু দেখো আশ পাশের পরিবেশ বা শিক্ষা সফরে। লিখে দাও যা তোমার হৃদয়ে জাগে অভিজ্ঞতার আলোকে, যা জানতে পারো কুরআন-হাদীসের পরশে। লেখতে থাকো মুসলিম উম্মাহ্র সমূহ সমস্যা ও অধঃপতন থেকে উত্তরণ ও উন্নতির লক্ষ্যে । যুগে যুগে তোমার লেখাই মানুষকে জাগিয়ে তোলবে গাফলতের ঘুম থেকে, সংস্কার করবে মূর্খতা ও কুসংস্কারে আক্রান্ত সমাজকে। মূর্খতার অন্ধকার দূর করে হিদায়াতের আলোর দিশা দিবে। সন্ধান দিবে সরল-সঠিক পথের। এভাবে তোমার লেখাই তোমাকে করবে চির অমর। সকল মানুষ তোমাকে স্মরণ করবে জীবনভর।

পারবে কি বন্ধু! আমাকে তোমার অন্তরঙ্গ বানাতে ? বিশ্বস্ত বন্ধু ভেবে আজীবন কাছে রাখতে ? শোনো শপথ খোদার ! আমি তোমার অতি আপন ও নিকটতম। আমাকে ভালোবাসো, কাছে রাখো। প্রতিদিন তোমার হাতের সোহাগ মাখা কোমল ছোঁয়া আমাকে দাও। তোমাকে সৌভাগ্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।
বন্ধু! তুমি যখন আমাকে ব্যবহার করো এবং কাছে রাখো। আমার খুব ভালো লাগে। তোমার সোহাগ-সৌহার্দে সিক্ত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে উচ্ছ্বসিত শুকরিয়া জ্ঞাপন করি হৃদয়ের গভীর থেকে। কিন্তু কালি ফুরিয়ে গেলে যখন আমাকে ছুঁড়ে ফেলো ডাস্টবিনে, নর্দমায় বা রাস্তার পাশে তখন আমার বর্ণনাতীত কষ্ট হয়। দুঃখ হয় মনে, খুব কান্না পায়। গুমরে কাঁদতে থাকি। কিন্তু বুকের দুঃখ ও কান্না বুকেই চেপে রাখি। শোনাতে পারি না তোমাকে । আমার বিশ্বাস! তুমি যদি আমার জিগর ফাটানো চিৎকার শুনতে, শুনতে আমার আর্তনাদ! তাহলে কখনো আমাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলতে না। বিশ্বাস করো বন্ধু ! যদি অনন্তকাল তোমাকে কালি দিয়ে সাহায্য করার সামর্থ থাকত আমার তাহলে কার্পণ্য করতাম না এক বিন্দুও । আমার মধ্যে থাকে সীমিত কালি। যতদিন পারি তোমাকে কালি দিয়ে সাহায্য করি। আমি হয়ত বিশ্বাস করাতে পারছি না যে, কালি ফুরিয়ে গেলেও আমি তোমারই বন্ধু। তুমিও আমার প্রিয়। অতি আপন ও নিকটতম। আমার কি একটু আশ্রয় হবে না তোমার ঘরে ?
অনুরোধ করছি বন্ধু তোমাকে! কালি ফুরিয়ে গেলে এরূপ নিষ্ঠুর আচরণ করো না আমার সাথে। আমি কিছুই চাই না তোমার কাছে। শুধু একটু আশ্রয়! ফেলে দিয়ো না আমাকে, সংরক্ষণ করে রাখো। আমি দুআ করবো তোমার জন্য। কথা দিচ্ছি, ভুলবো না তোমাকে। যারাই আমাকে দেখবে পরিচয় করিয়ে দিবো তোমার সাথে। তাদের দুআও হয়ত তুমি পাবে। তোমার পরবর্তী প্রজন্ম যখন দেখবে তোমার ব্যবহৃত কলমগুলো তখন শিক্ষা গ্রহণ করবে তারা। তারাও শিখবে কলমের ব্যবহার। ভালোবাসবে কলমকে। লেখবে প্রতিদিন। ছুঁড়ে ফেলবে না কালি ফুরিয়ে গেলেও। সংরক্ষণ করবে তারাও কালি ফুরিয়ে যাওয়া কলমগুলো। তা থেকে শিক্ষা পাবে দেশ ও জাতি অনন্তকাল। এভাবে চিরদিন অক্ষুণ্ণ থাকবে আমার মান-সম্মান। আর এটাই হবে তোমার বংশের সৌভাগ্যের সোপান। মান-মর্যাদায় তোমার বংশ থাকবে সকলের শীর্ষে চিরদিন।
উত্তর দিচ্ছেন : মাওলানা মুহাম্মাদ আমীর হুসাইন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন