সুতরাং পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই যুক্তিযুক্ত।” নবী স: ও খাদ্যের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, কাফির ব্যক্তি খায় সাত পেটে আর মুমিন ব্যক্তি খায় এক পেটে। আর এতে অনেক উপকার বিদ্যমান, যেমন, সুস্থতা সুন্দর বোধশক্তি, প্রখর মুখস্থ শক্তি, অল্প ঘুম হালকা শরীর ইত্যাদি। এজন্যই বিজ্ঞানীরা বলেন সবচেয়ে বড় ঔষুধ হলো পরিমান মত খাদ্য গ্রহন করা। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত পানাহার মানুষকে সম্পদ অপচয়ে বাধ্য করে, তার চিন্তা চেতনা সর্বদাই খাদ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। আলী রা, বলেন “যতটুকু খাদ্য দ্বারা ধনীরা বিলাসিতা করে ততটুক খাদ্যই গরীবের ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। বলা হয়ে থাকে “অতিভোজন বুদ্ধিমত্তাকে লোপ করে দেয়। ওমর রা: বলেন, তোমরা অতিভোজন থেকে বিরত থাকো, কেননা তা সালাতে অলসতা সৃষ্টি করে, শরীরকে অসুস্থ করে দেয় এবং তোমরা পানহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। কেননা তা ক্ষতি থেকে দূরে রাখে, শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধি করে, ইবাদতে শক্তি যোগায়। নিশ্চয় কোন ব্যক্তি তার দীনের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করার পূর্বে তার ধ্বংস হবে না। উমার ইবনু হুবাইরা র, রোমের বাদশাহকে জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের মধ্যে তোমরা আহমক হিসেবে মনে কর? রোমের বাদশাহ উত্তরে বললেন. যে ব্যক্তি সামনে যা পায় তাই দিয়ে পেট পূর্ণ করে। ফারকাদ রহ. তার সাথীদের লক্ষ্য করে বলতেন,তোমরা খাওয়ার সময় লুঙ্গী বেধে বসবে লোকমা ছোট করবে, চিবিয়ে খাবে পানী পান করবে, তোমাদের কেউ যেন লুঙ্গী ঢিলে করে না বসে তাহলে তার পেট বড় হয়ে যাবে, আর তোমরা তোমাদের সামনে থেকে খাবে। এ ব্যাপারে সকল চিকিৎসক এক মত যে, রোগের প্রধান কারণ হলো খাওয়ার উপরে খাওয়া। এজন্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ, তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আত-তিব্ আন-নবাবী ” গ্রন্থে খাদ্যের তিনটি স্থর নির্ধারন করেছেন :
১ম স্তর : প্রয়োজনীয় পরিমান; ২য় স্তর : এমন পরিমান যা যথেষ্ট; ৩য় স্তর : অতিভোজন। কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্য যে, রমযান মাসে আমাদের পরিবারে খরচ বৃদ্ধি পায়। এমনকি এই মাসে অতিভোজনের কারণে অনেকের বদহজমিও হয়। আল- হাসান রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদিন উমর রা. তার ছেলে আব্দুল্লাহ রা.-এর ঘরে প্রবেশ করে তার সামনে কিছু গোশত দেখতে পেলেন। এসময় তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এই গোশত কেন? আবব্দুল্লাহ বললেন, গোশত খেতে মন চেয়েছে, তাই। উমর রা. বললেন, কোন জিনিষের প্রতি আশক্তি হলেই কি তোমাকে তা খেতে হবে? কোন ব্যক্তির জন্য অপচয় করাটা এতটুকু যথেষ্ট যে, তার মন যা চাইবে তাই সে খাবে। নিঃসন্দেহে এই উক্তিটি একটি প্রজ্ঞাবহ অর্থনীতির নিয়ম বহন করে, বিশেষ করে বর্তমান য গে আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, বিভিন্ন বস্তু ক্রয়ের জন্য নানা ভাবে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একজন মনীষী মন্তব্য করেছেন যে, “আমরা সৌর্ন্দযের জন্য যে পরিমান কাপড় ব্যবহার করি তা সারা বিশ্বের উলঙ্গদের জন্য যথেষ্ঠ। আলী গালুম বলেন, “আমাদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে যে, পুরুষের তুলনায় মহিলারা বেশি ব্যয় করে, বিশেষ করে তাদর পোশাকের ক্ষেত্রে। কিন্তু এমন কতক পুরুষ রয়েছে যারা মহিলাদের থেকে বেশি াপচয় করে। সাবাহা মালিকি বলেন ,“মহিলারা অন্যের বাড়ীতে অন্যের গায়ে যে পোশাক, আসবাপত্র দেখে তাই সে কিনতে চায়, যদি ও এগুলো তার প্রয়োজন নেই। এই মহিলাদের প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে অনেক সময় স্বামীর বেতন এর বাইরে কর্জ করতে হয়। এভাবে অর্থনৈতিক অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়ে।”
বিভিন্ন আর্কষনীয় ভঙ্গিমায় বিলসী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ার কারণে মানুষও সেদিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বাস্তব অবস্থাবাদরিয়্যাহ মুতাইরী তুলে ধরেছেন এভাবে যে, অধিকাংশ মহিলা স্বামীর নিকট অনেক প্রয়োজনীয় বিলাসবহুল আসবাপত্র দাবী করে, আর স্বামী স্ত্রীর মন যোগাতে সেসব অনৈতিক দাবী গুলো পূরণ করে। অথচ এগুলো অপচয় ও হারাম। মহিলাদের এই বিলাসিতার জন্য বিজ্ঞাপনী কোহম্পানীগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। পাশ্চাত্যের অনুকরণ ও এর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। আর অন্ধ অনুকরন নিদিষ্ট কেন স্থান বা জাতির মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। বরং সারা পৃথীবিতে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। মানুষের চাহিদা অপূরণীয়. বিশেষ করে বর্তমানে তা অতৃপ্ত,। সে সব কিছুই চায়,তার সবকিছুতেই আসক্তি, সব রঙে সে রঙিন হতে চায়। আমার আল্লাহর নিকট ঐ চক্ষু থেকে আশ্রয় চাই যা কাঁেদ না, ঐ অন্তর থেকে যা ভয় করে না, ঐ নাফস থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না, ঐ উদর থেকে যা পূরণ হয় না, আর ঐ দুয়া থেকে যা কবুল হয় না। অপচয়, অপব্যয়, ধ্বংস, ক্ষয়, সামাজিক অবক্ষয়, মানুষের বদহজম, ভূরি মোটা হওয়া সহ সকল অসুবিধার মূলে হল কেনাকাটার সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করা, খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ইত্যাদি। ডাষ্টবিনগুলোর অবস্থা অনুমেয় হয় দৈনিক আমরা কত খাদ্য অপচয় করছি। আর এভাবেই পশু চরিত্র আমাদের ব্যক্তিতে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্টে, অনুপ্রবেশ করছে। আর গরীব মিসকীনরা হাহাকার করে মরছে। তুচ্ছ জিনিষকে কেন্দ্র করে আমরা যে পরিমান সম্পদ ব্যয় করি তা যাদি একত্রি করি, তাহলে অনেক মানুষের চলার গতি পাবে, পৃথীবি বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে, জীবন সুন্দর হবে। যদি আমরা একটু চিন্তাভাবনা করে খরচ করি তাহরে অপচয় ও দারিদ্রতা নামক পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি সমস্যার অবসান হবে। এভাবে দুটির মধ্যে সমতা বিধান করলে দুই সমস্যা দূরীভূত হবে।
ইসলামের মূল সৌন্দর্যই হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। ইসলাম যেভাবে অপচয়কে নিষেধ করেছে তেমনি কৃপণতাকে ও নিষেধ করে। এজন্য কুরআন সুন্নাহ মুসলিমদের পানাহার, পরিচ্ছদ, বাসস্থান, সেীর্ন্দয, যোগাযোগের মাধ্যম, বিবাহ-শাদীতে সব কিছুতেই চিহ্নিত করে দিয়েছে। এ জন্যই একজহন মুসলিম খরচ করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিধানাবলী পালন করা আবশ্যক : অর্থনৈতিক দিক যেন মুমিনদে কে গ্রাস করে না ফেলে, বরং মুমিন ব্যক্তি তার আক্বীদা ও মুমিনের চরিত্র অনুযায়ী তার অর্থনীতি পরিচালনা করবে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে সম্পদ ব্যয় করা; অহংকার বর্জন করা; হারাম থেকে দূরে থাকা; নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে সম্পদ ব্যয় করা; সচ্ছলতার সময় অসচ্ছল সময়ের জন্য সম্পদ জমা করে রাখা। একজন মুসলমান শরী‘আহ্ প্রণীত সীমারেখার মধ্যেই তার সম্পদ ব্যয় করবে। আর এটা উঠা নামা করবে বৈধ ও হারামের মাঝে। এটি হলো বৈধতার পর্যায়ে। যা অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থান করা। সৌর্ন্দয ও একেবারেই পরহেজগারিতার মধ্যবর্তী অবস্থান কিন্তু অধিকাংশ লোক এই নীতি গ্রহন করে না। তার সৌর্ন্দযের প্রতি ঝুকে পড়ে এক্ষেত্রে অনেকে অপচয় ও করে ফেলে অথচ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা ও আল্লাহর ব্ন্দাদের একটি গুন। আল্লাহ বলেন এবং তারা যখন ব্যয় করে তখন অথতা ব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। নবী স. বলেন, তোমরা খাও পান করো, দান-সদকা করো, তবে অহংকার ও অপচয় ব্যতীত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন