শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন অ্যাকর্ড নিয়ে কিছু জানে না বিজিএমইএ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৪ এএম

পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিতে পুরনো বাংলাদেশ অ্যাকার্ডের ধারাবাহিকতায় ‘আন্তর্জাতিক অ্যাকর্ড’ নামে নতুন চুক্তির খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকদের সঙ্গে আগে ‘কোনো যোগাযোগ না করেই’ বিদেশি রিটেইল কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যে নতুন ওই চুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

গতকাল ফারুক হাসান বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কিছু করতে চাইলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বাংলাদেশে এই অ্যাকর্ডের কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। এখানে মালিক-শ্রমিক, ক্রেতা-ব্র্যান্ড প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আরএমজি সাসটেইনেবলিটি কাউন্সিল বা আরএসসি সংস্কার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।

গত বুধবার বাংলাদেশ অ্যাকর্ড কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক রিটেইল ব্র্যান্ড এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে দুই বছর মেয়াদী ওই নতুন চুক্তির খবর জানানো হয়। বলা হয়, নতুন এই চুক্তির নাম হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফর হেলথ অ্যান্ড সেইফটি ইন দ্য টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি’, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি কারখানায় নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে অন্যদেশেও কাজ করার বিষয়ে স্বাক্ষরকারীরা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বলে জানানো হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই চুক্তির ফলে কারখানার কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চুক্তিতে থাকা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে। বুধবার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পোশাক রফতানিকারদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছিলেন, বাংলাদেশের আদালতের নির্দেশে অ্যাকর্ডের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অন্য কোনো নামে অন্য কোনো উদ্যোগ নিয়ে তাদের আর বাংলাদেশে ফিরে আসার সুযোগ নেই।

আর গতকাল বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রয়টার্সে খবর প্রকাশের পর তারা আমাদেরকে ইমেইল করেছিল। আমরা প্রথমেই যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি, তা হচ্ছে, তোমরা আমাদেরকে এ বিষয়ে কিছুই জানাওনি। আমরা জানতে চাই এটা কী? তখন তারা বলেছে, এটা তোমাদের সাথে কিছুই না, আমাদের মধ্যে একটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। এটার সাথে তোমাদের কিছুই না। তবুও ব্র্যান্ড এবং শ্রমিক ইউনিয়নরা কিছু করতে হলে তো গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেই করতে হবে। শরীরটা তো আমাদের। আমার এখানে কোনো অপারেশন করতে হলে, কোনো উদ্যোগ নিতে হলে সেটা তো আমাকে জানতে হবে। তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকান্ড এবং রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে যখন নানামুখি আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপটে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড নামে পরিচিতি পায়।

এরপর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়। দেড় হাজারের বেশি কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা, যেখানে ২০ লাখের মত কর্মী কাজ করে। আগের সেই অ্যাকর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ অগাস্ট। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের অ্যাকর্ডে যে আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলো সই করেছিল, তারা নতুন চুক্তিতেও রয়েছে।

প্রায় ২০০ রিটোইলার ২০১৩ সালের অ্যাকর্ডে সই করেছিল, যাদের মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, ইনডিটেক্স, ইউনিক্ল, হুগো, বস আর অ্যাডিডাসের মত বড় কোম্পানিও ছিল। নতুন চুক্তিতে কারা রয়েছে সেই তালিকা ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে।

নতুন অ্যাকর্ডের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, তাদের (শ্রমিক ইউনিয়ন ও ব্র্যান্ড) মধ্যে আন্ডারস্টান্ডিং। এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য অ্যামস্টার্ডামভিত্তিক যে অ্যাকর্ডটা ছিল সেরকম কিছু নয়। বরং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অন্য সব দেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝতে পারছি। আগের অ্যাকর্ড বন্ধ হয়ে নতুন করে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে এটা শুরু হবে। দেশে আরএসসির অধীনে চলমান সংস্কার কাজে মালিক, শ্রমিক ও ক্রেতা ব্র্যান্ড- তিনপক্ষের প্রতিনিধিই রয়েছে। সেই জায়গায় তারা দুজন যদি আলাদা কিছু করে, তাহলে তারা কী করছে তা আমাদের জানতে হবে। আরএসসির মধ্যে ছয়জন ব্র্যান্ড প্রতিনিধি, ছয়জন ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি রয়েছেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন সেখানে রয়েছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ রয়েছে । তারা যে আমাদের না জানিয়েই নতুন এ কাজটি করেছে, এই বিষয়টা একটু বোঝার প্রয়োজন আছে।

নতুন অ্যাকর্ডের খবরটি পোশাক মালিকদের কাছে ‘অনেকটা নাটকীয়ভাবেই এসেছে’ বলে উল্লেখ করেন ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, নতুন অ্যাকর্ডের যে কর্মসূচিই থাক না কেন, বাংলাদেশে কোনো নামে কারও নতুন করে কিছু করার ‘সুযোগ নেই’। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি, করে যাব। আমরা যেভাবে সংস্কার কাজ করে যাচ্ছি, সারা বিশ্বে কেউ এভাবে করেনি। আমরা সব ইস্যুকে এড্রেস করছি। আমরা এই ভালো কাজটা চালিয়ে নিয়ে যাব। অ্যাকর্ড ইন্টারন্যাশনাল নামে কিছু যদি আলাদা কেউ করে থাকে, সেটা নিয়ে বাংলাদেশে তাদের কোনো অপারেশন থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশে আগের অ্যাকর্ডের অপারেশন তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
আরএসসি হওয়ার পর এর কাজের গতি নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কাজ এতদিন হয়েছে। মাঝখানে কোভিড গেছে, যাচ্ছে। আগামীতে আরও ভালোভবে করব। আগামীতে আরএসসির কভারেজ আরও বাড়বে। সব কারখানা যেন এটার আওতায় আসে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। অ্যাকর্ড থেকে আরএসসিতে আসার সময় কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন অন্যান্য ব্র্যান্ডকেও এর সঙ্গে আমরা যুক্ত করতে চাচ্ছি। বাংলাদেশর সবগুলো গার্মেন্ট কারখানা, ক্রেতা ও ব্র্যান্ড যেন এর সঙ্গে যুক্ত হয়, সেটা দেখা হচ্ছে। আমাদের ক্যাপাসিটি আগামী দিনে আরও বাড়ানো হবে। আরএসসির কাজ হবে ফায়ার, ইলেক্ট্রিকাল এবং স্ট্রাকচারাল সেইফটি নিশ্চিত করা এবং এটা নিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া।

বাংলাদেশে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন কতটা সন্তোষজনক এই প্রশ্নে ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশে যে স্ট্যান্ডার্ডটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, এটা আসলে বিশ্বের টপ স্ট্যান্ডার্ড। আমরা এই প্রক্রিয়া নিয়ে সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট। আরএসসির আন্ডারে যেসব কারখানায় কাজ হচ্ছে, সেখানে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে ৯৬ শতাংশের বেশি কারখানায় সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। এর বাইরে আরও যেসব ফ্যাক্টরি রয়েছে, তাদেরকে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন