শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ইসলামে অশ্লীলতা বেহায়াপনা পরকীয়ার কোন স্থান নেই জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২১, ৩:৪৭ পিএম

ইসলামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, যেনা, পরকীয়ার কোন স্থান নেই। ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় নারী-পুরুষের মেলামেশার সুযোগ দিয়েছে। আর পরকীয়া-ব্যভিচারসহ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল। আল্লাহর আযাব থেকে বাচতে হলে সর্ব ধরনের গুনাহ ছাড়তে হবে। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে বাইরে রাস্তার উপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, সর্ব ধরনের আযাব গজব ও বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আল্লাহপাকের সমস্ত নাফরমানি ছাড়তে হবে, গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে, সর্ব ধরনের পাপাচার পরিহার করে জীবন পরিচালনা করতে হবে। বর্তমান সময়ে একদিকে যেমন করোনাভাইরাসের মহামারি চলছে, সেই সাথে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং আমাদের সর্ব ধরনের গুনাহ ছাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞগনের পরামর্শ মেনে চলতে হবে । বিশেষ করে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে পরিষ্কার পরিছন্নতা দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কোথাও যাতে নোংরা পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হাদীস শরীফে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে সুতরাং আমরা সকলেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখবো শারীরিক পরিছন্নতার সাথে সাথে অন্তর আত্মার পরিচ্ছন্নতার জন্য গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আজকের এই বিপযয় আমাদেরই কৃতকর্মের ফল। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে,

মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রূম আয়াত ৪১)। পেশ ইমাম বলেন, কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে , তোমরা প্রকাশ্য পাপ কাজ পরিত্যাগ কর এবং পরিত্যাগ কর গোপনীয় পাপ কাজও। যারা পাপ কাজ করে তাদেরকে অতি সত্ত¡রই তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল দেয়া হবে। (সুরা আনআম আয়াত ১২০)।

বড় পাপ গুলো যেমন ছাড়তে হবে ছোটো পাপথেকেও বেচে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে পাপ যেমনই হোক, তা পাপই। তাকে ছোট মনে করে তা করে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরকালীন শাস্তির কথা ভেবে ক্ষুদ্র পাপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে আয়েশা! তুমি ছোট ছোট গুনাহ থেকেও নিজেকে রক্ষা করো। কেননা সেটা লেখার জন্যও আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন।’ (মিশকাত, হাদিস : ৫৩৫৬) মহানবী (সা.) নেক মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেজগার লোকে খায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২)।

তাছাড়া বিগত সময়ের পাপের জন্য তাওবা করার অভ্যাস করে নিতে হবে। হাদিসে কুদসিতে আছে, ‘হে আদম সস্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরোয়া করব না। আল্লাহপাক আমাদেরকে গুনামুক্ত জীবন-যাপনে তৌফিক দান করুন। আমীন।

ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পরকীয়া। ছোট একটি শব্দ। কিন্তু এর ক্ষতি ও পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ এবং মারাত্মক। এটা বিকৃত মানসিকতার কাজ। সুস্থ মস্তিষ্কের কোন নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। ইসলাম নীতি-আদর্শ এবং মানবিকতার ধর্ম। ইসলামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, যেনা, পরকীয়ার কোন স্থান নেই। ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে বৈধ পন্থায় নারী-পুরুষের মেলামেশার সুযোগ দিয়েছে। আর পরকীয়া-ব্যভিচারসহ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরকীয়া-ব্যভিচারের ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার ছেড়ে দাও। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। তিনটি দুনিয়াতে এবং তিনটি আখেরাতে দেয়া হবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হবে তা হচ্ছে, তার চেহারার উজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সঙ্কীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার জীবনে দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসস্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা. নং ৫৬৪)। হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮)।
খতিব আরও বলেন, আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে পরকীয়া, লিভটুগেদারসহ নানাবিধ হারাম সম্পর্ক গড়ে উঠছে। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে পর্দার অমোঘ বিধান। এজন্য পরপুরুষ বা পরনারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। হযরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাবধান, তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী?’ উত্তরে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য অর্থাৎ তার সাথেও দেখা দেয়া সম্পূর্ণ হারাম।' (মুসলিম : ২৪৪৫)। তাই আসুন, আমরা পরকীয়া এবং যাবতীয় হারামমুক্ত জীবন গড়ি। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে সেই তৌফিক দেন আমীন।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন। আমাদের সকলকে মুত্তাকী হতে হবে। মুত্তাকী হলে আল্লাহ তায়ালা দুইটি পুরষ্কার দিবেন। একটি হল যেকোনো মুসিবতে আল্লাহ তায়ালা তার রাস্তা খুলে দিবেন। দ্বিতীয়টি তার রিজিক অফুরন্ত বেহিসাব হবে। নিশ্চয় মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক সভ্রান্ত। সূরা হুজরাত আয়াত-১৩। অতএব আমাদের সকলকে মুত্তাকী হয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন