শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পর্যটনে যাতায়াত মসৃণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিগত দেড় বছরের অধিক সময় ধরে পর্যটন খাত প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সীমিত ও পূর্ণ লকডাউনের কারণে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো অচল হয়ে পড়েছিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় কক্সবাজার, রাঙামাটি, তিন পাবর্ত্য জেলা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন প্রভৃতি এলাকায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো ফাঁকা অবস্থায় ছিল। লকডাউন উঠে যাওয়ায় ভ্রমণপিয়াসী মানুষ এক দমবন্ধ হওয়া অবস্থা থেকে বের হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচছে। প্রকৃতির কাছে গিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। দেহ-মন সতেজ করতে পারছে। লকডাউন তুলে নেয়ার পরপরই পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ধীরে ধীরে পর্যটকদের ভীড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে গড়ে উঠা বিভিন্ন হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলোতে আগাম বুকিং চলছে। সামনে পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে তাদের প্রস্তুতিও পুরোদমে চলছে। নতুন করে হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, লকডাউনে তাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা আগামী মৌসুমে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে।
উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন পর্যটনকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে, বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাসহ পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তুলছে। চীন পর্যটনকে তার অন্যতম অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে নিয়েছে। পর্যটনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও স্পেনের পর বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে দেশটি। প্রতি বছর দেশটিতে ৫৬.৯ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণে আসে। এ খাত থেকে বছরে দেশটির আয় হয় ১.৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপি’র ১১.০৪ শতাংশ। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয় ২৮.২৫ মিলিয়ন মানুষের। পার্শ্ববর্তী ভারতেও দিন দিন পর্যটনের বিকাশ ঘটছে। দেশটিতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০.৯৩ মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণ করে। এতে বছরে আয় হয় ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটির জিডিপি’র ৯.২ শতাংশ। মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রধানতম খাত পর্যটন। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার ৬০ ভাগ অর্জিত হয় এ খাত থেকে, যা জিডিপি’র শতকরা ২৮ ভাগ। নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পর্যটনের অর্থনৈতিক অর্জনও কম নয়। এদের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাবে পর্যটন খাতে বিশ্বের ১৭৮ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৭। এ খাত থেকে আয়ের সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তবে এ খাতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কর্মে জড়িয়ে আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন পর্যটনকে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হিসেবে নিয়েছে, সেখানে আমরা এখনও এ খাতটির প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করছি। অথচ আমাদের দেশে রয়েছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার মতো বিরল কুয়াকাটাও রয়েছে। রয়েছে সেন্ট মার্টিনের মতো দুর্লভ প্রবাল দ্বীপ এবং বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে আরও দৃষ্টি নন্দন পর্যটন কেন্দ্র ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। বৈচিত্রপূর্ণ এসব পর্যটন কেন্দ্রকে আমরা সঠিকভাবে বিশ্বে তুলে ধরতে না পারার কারণে এ খাতে পিছিয়ে রয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যটন খাতকে পরিপূর্ণ শিল্পখাতে পরিণত এবং তা বেগবান করতে কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। করোনাকালে লকডাউনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় এ খাত সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কক্সবাজারস্থ হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, লকডাউনে বন্ধ থাকায় তাদের দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। লকডাউন উঠে যাওয়ায় তারা পুরো ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারলেও পর্যটক আসায় তারা খুশি। তারা আশা করছে, সামনে করোনা পরিস্থিতির অবনতি না হলে পর্যটন খাতটি পুরোদমে চালু হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পর্যটনসহ অর্থনীতি সচল রাখতে হলে করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। এছাড়া বিকল্প নেই।
দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত হওয়ায় মানুষ এখন সেসব স্থানে ছুটে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে তাদের যাতায়াত, থাকা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক-মহাসড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। পর্যটনকেন্দ্রমুখী সড়কও ভাল অবস্থায় নেই। ফলে পর্যটকদের যাতায়াতে যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সরকারের উচিৎ যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করার ত্বরিৎ উদ্যোগ নেয়া। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে পর্যটনের হাব-এ পরিণত করতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ এবং নিরাপত্তা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের ভীতি, শঙ্কা ও হয়রানির মধ্যে না পড়ে, নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারে, এ জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে ভ্রমণকারীরা যাতে ছবি তুলে তা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত আপলোড করতে পারে, এজন্য ইন্টারনেটের সেবা ও তার গতি বৃদ্ধি করতে হবে। করোনার বিষয়টি মাথায় রেখে যাতে পর্যটকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে ও মাস্ক পরে, সেটা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সম্ভব হলে সেখানে টিকাদানের ব্যবস্থাও করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন