শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তালেবান : গভীর দেশপ্রেম মুক্তমন জাগ্রত ঈমান

ভাষ্যকার | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুসলমানের সংখ্যা যে দেশে শতকরা ৯৯.৭ ভাগ। যেখানে মানুষ নিজেরাই শরীয়া আইন মেনে চলতে আগ্রহী। সেদেশে বারবার বিদেশি দখলদারত্ব আর পরাশক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আলেম ওলামা পীর মাশায়েখের নেতৃত্বে ছাত্র জনতা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে, সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি ও পশ্চিমা তাবেদাররা সরকার পরিচালনার নামে দুঃশাসন, অবিচার, জাতির সম্পদ লুটপাট আর দুর্নীতি করে। এমন একটি দেশে ইসলামী শরীয়া আইন চালুর স্বপ্ন তালেবানকে উদ্বেলিত করেছিল।

যে জাতি আফগানিস্তানে (তাতারী মুঘল বৃটিশ সোভিয়েত ও মার্কিন) এই চার পরাশক্তিকে বিতাড়িত এবং তিনটির কবর রচনা করে। বলা হয়, আফগানিস্তান বিশ্ব পরাশক্তিসমূহের কবরস্তান। গ্রেভইয়ার্ড অব এম্পায়ার্স। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ হয়ে ১৯৯৪ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ আলেম উলামা পীর মাশায়েখের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।

কিন্তু ১৯৮৯ এ সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়ের পর এবং ১৯৯২ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে ৬টি মুসলিম রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পরও আফগানিস্তানে বিদেশের দালাল আর্মি, কমিউনিষ্ট দোস্তাম বাহিনী, বিদেশী মদদপুষ্ট গোত্রীয় সা¤প্রদায়িক নর্দান এলায়েন্স, সমাজতান্ত্রিক গ্রুপ পাসদারানে মিল্লি এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ঘেঁষা কিছু মুসলিম দল মিলে এলায়েন্স করে গদাইলশকরি টাইপের সরকার চালাতে থাকে। স্বাধীনতার সুফল মানুষ পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গভীর দেশপ্রেম, মুক্তমন ও ঈমানী তেজ নিয়ে তখন ময়দানে আসে তাহরিকে তালিবান আফগানিস্তান। সরল বাংলায় অর্থ হয়, আফগানিস্তান ছাত্র আন্দোলন বা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংক্ষেপে তালেবান।

বর্তমান জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, দেওবন্দের মুরব্বি প্রধান শিক্ষক মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মদনী বলেছেন, তালেবান নিয়ে ভারতের বিরূপ আচরণের কোনো কারণ নেই। এদের কারণে দেওবন্দ সম্পর্কেও সমালোচনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জিহাদ আন্দোলনের নেতা শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসানের আদর্শকে সামনে নিয়ে মাঠে নামে। সরাসরি ১৮৩১ সালে বালাকোটের শহীদ সাইয়েদ আহমদ রাইবেরেলভীর পন্থা অবলম্বন করে। এসব হিসাবেই তাদের দেওবন্দী বলা হয়। সাম্রাজ্যবাদ ঔপনিবেশবাদ মোকাবেলায় মূলত তারা দেওবন্দি আলেমগণের দ্বারা অনুপ্রাণিত।

মোল্লা উমর পাকিস্তানের জামিয়া হাক্কানিয়া আকোড়া খাটকের ছাত্র। অবিভক্ত ভারতের যুগে দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র মাওলানা আব্দুল হক হাক্কানী এর প্রতিষ্ঠাতা। তার পুত্র ছিলেন জমিয়ত প্রধান পাক সিনেটর মাওলানা সামিউল হক। তালেবানরা যার নাম দিয়েছে ‘বাবায়ে তালেবান’। তালেবান আন্দোলন মূলত শহীদ সামিউল হকের ব্রেইন চাইল্ড। ইনি নিজ দেশ পাকিস্তানে ছদ্মবেশি মার্কিন মিত্রদের গুলিতে শহীদ হন।

মাওলানা জালালুদ্দিন হাক্কানী থেকে হাক্কানী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মাওলানা সিরাজুদ্দীন হাক্কানী এর প্রধান। তালেবানের মেরুদন্ড সোজা থাকে এই নেটওয়ার্কের কল্যাণে। কাবুলের সুরক্ষার কাজ হাক্কানী নেটওয়ার্ককে দেওয়া হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের অন্যতম মুরব্বি মাওলানা খলিলুর রহমান হাক্কানী। যুদ্ধের সময় আমেরিকা যার মাথার মূল্য নির্ধারণ করে ৫০ লাখ ডলার। কেউ তাকে ধরিয়ে দেয়নি, মার্কিনীরাও কোনো ভাবে খুঁজে পায়নি।

বিজয়ের পর তিনি জনসমক্ষে এসেছেন এবং সশস্ত্র রক্ষী পরিবেষ্টিত অবস্থায় তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলের মসজিদে জুমার খুতবা ও বয়ান করেছেন। পানশিরে আহমদ মাসুদ সমস্যা সমাধানের জিম্মাদারি তিনি নেওয়ায় আলাপ আলোচনা ও কৌশলগত ঘেরাও অবরোধ চলছে। পরাশক্তির আতঙ্ক এ লোকটির নামে হওয়ায় বহু লোককে মার্কিন ও ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ ভ্রমণের সময় এয়ারপোর্টে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।

আজ মার্কিন সৈন্য এমনকি সিআইএ প্রধান আফগানিস্তান থাকলেও মোল্লা খলিলের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। তার মাথার মূল্য নির্ধারণকারীদের মাথা নত করে কাবুল ছেড়ে যেতে হচ্ছে। এটাই আল্লাহর গায়েবী সাহায্য ও অলৌকিক বিজয়ের নিদর্শন।

তালেবানদের অন্যতম তাত্তি¡ক উপদেষ্টা মাওলানা মুফতি তাকি উসমানী। পাকিস্তান হাইকোর্টের শরীয়া বেঞ্চের সাবেক এই বিচারপতি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘বিনা রক্তপাতে তালেবানদের কাবুল দখল আমাদের মক্কা বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নীতি আদর্শ ও ঈমানী শক্তির সামনে যে পরাশক্তি কিছুই নয়, হায়, তালেবানের এই বিস্ময়কর বিজয় যদি দুনিয়ার সব মুসলিম দেশকে এ সত্যটি বোঝাতে সক্ষম হতো’।

তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ ও সামরিক শাখার প্রধান মোল্লা ইয়াকুবকে প্রেরিত এক বার্তায় তিনি পূর্ণাঙ্গ শরীয়া বাস্তবায়ন এবং আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের জ্ঞান গবেষণা ও তাত্তি¡ক সহযোগিতা করার জন্য নিজেকে তালেবানের জন্য নিবেদিত বলে ঘোষণা করেন। যা লোকাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায়ও প্রচারিত হয়।

জাস্টিস মাওলানা তাকির মতে, দুনিয়ার সব স্কলার আলেম বিজ্ঞানী ও পেশাজীবীদের সহযোগিতা থাকলে আধুনিক সময়ে প্রকৃত শরীয়াহ ভিত্তিক আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা রাষ্ট্র বিচার ও শাসন ব্যবস্থার রোল মডেল হতে পারে তালেবান শাসিত আফগানিস্তান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Rabiul Islam Robin ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:২৫ এএম says : 0
মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত আফগান সৈন্যের সংখ্যা তিন লাখের মতো, বিপরীতে তালেবান যোদ্ধা সর্বোচ্চ ৮০ হাজার। সিংহভাগের পায়ে জুতো পর্যন্ত নেই। কিন্তু তাদের চাপে তাসের ঘরের মত ধসে পড়ছে আফগান বাহিনীর প্রতিরোধ ...
Total Reply(0)
Md Al Amin ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:২৫ এএম says : 0
তাদের শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে ঈমান। এই জিনিসটাই তাদের ঠিকিয়ে রেখেছিল এবং আগামীতেও ঠিকিয়ে রাখবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাদের যতই জংগী -জংগী ট্যাগ দিক, কোন সমস্যা নাই।তারা তাদের মাতৃভূমিকে মার্কিন দখলদারি -যুদ্ধবাজদের হাত থেকে রহ্মা করে যাচ্ছে। গত ২/৩ মাস থেকে যা নিউজ দেখছি তাতে মনে হচ্ছে আফগানদের প্রিয় তালিকায় রয়েছে তালেবানরাই।
Total Reply(0)
Md Abu Tahar ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
ওদের মনোবল অনেক শক্ত। আফগান যুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়া খন্ড খন্ড হয়ে গেল। পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিধর মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে। পালাতে বাধ্য হল। আগামীতে কি হয় বেঁচে থাকলে দেখবো।
Total Reply(0)
Ratul Khan ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
তালেবান নিয়ে তো অনেক লিখলেন। আফগানিস্তানে আমেরিকা কতো হাজার নিরিহ মানুষকে হত্যা করল? কত লক্ষ মানুষকে ভিটেমাটি ছারা করল। সেটা নিয়ে তো একটু লিখুন
Total Reply(0)
Aslam Hossan ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
এরাই ইমাম মেহেদীর সঙ্গী খোরাসানের কালো পতাকা বাহি দল হবে ইনশাআল্লাহ্। তালেবানের সাথে আল্লাহর সাহায্য আছে তাই তোমরা দেখতেছো ৮০ হাজার সৈনিক কিন্তু তালেবানের সৈনিক ৮০ হাজার না। তালেবানের সৈনিক ৮০ লক্ষ। কিন্তু তোমরা সধু ৮০ হাজার সৈনিক দেখতে পারতেছো বাকিদে দেখার খমতা তোমাদের নাই। এইভাবে সারা পৃথিবীতে ইলামের বিজয় হবেই একদিন ইনশাআল্লাহ্। তালেবানের শক্তির উৎস জানতে চাও তাহলে যানো তালেবানের শক্তির উৎস হচ্ছে( লাইলাহা ইল্লাল্লহ )
Total Reply(0)
আরিফুর রহমান ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
এটাই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ তায়ালার জমিনে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার সহযোগীতায় যাঁরাই ঈমান ও ইখলাসের সাথে যাঁরা এগিয়ে আসবে মহান আল্লাহ্ তায়ালা অবশ্যই অবশ্যই তাঁদেরকে সাহায্য করবে।যদিও তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র বা সংখ্যা কোনো বাধা নয়।
Total Reply(0)
ওমর ফারুক ২৯ আগস্ট, ২০২১, ৫:৫০ এএম says : 0
جزاكم الله
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১০:২১ এএম says : 0
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক। গত ৪০ বছর যাবৎ যুদ্ধ চলছে দেশটাতে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। সামনে সময় এগিয়ে যাওয়ার।
Total Reply(0)
Firoz Ahmed ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১১:০৮ এএম says : 0
মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত। [সূরা আল মায়িদাহ:-আয়াত ৮]
Total Reply(0)
ডা. এম.এম এ গফফার ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১১:১০ এএম says : 0
ধর্ষণ ,খুন ও চুরি বন্ধে শরিয়া আইনের বিকল্প নেই , পশ্চিমারা যতোই অপপ্রচার করুক তাতে কিছু আসে যায় না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন