বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ইন্টারনেট সেবার মান বাড়াতে হবে

অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

ইন্টারনেট সংযুক্ত করেছে গোটা বিশ্বকে। এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেটের বদৌলতে অনলাইন বিজনেস, অনলাইন ব্যাংকিং, থেকে শুরু করে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকাংশে সহজ হয়ে এসেছে। আগেকার দিনে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে চিঠিপত্রের আদান প্রদান ছিল। যেগুলো দেশের ভিতরেই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগত ৪-৫ দিন। দেশের বাইরে হলে কখনো কখনো সেগুলো এক মাসের ও বেশি সময় লেগে যেত। কিন্তু বর্তমানের নেট দুনিয়ায়, মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের একপ্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ হচ্ছে। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে, বই থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্যাদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়েছে আরও উন্নত, সহজলভ্য ও স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন। ভ্রমণপিয়াসুদের জন্য দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সারাদেশসহ বহির্বিশ্বের আবহাওয়া জানা, হোটেল রিজার্ভ, বিমানের টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। এককথায় ইন্টারনেটের ব্যবহারের ফলে মানুষের শ্রম, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তাছাড়া বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটে সিনেমা দেখা, গান শোনা, খেলা দেখা, দৈনিক পত্রিকা পড়া, শেয়ারবাজার জানা ইত্যাদি ঘরে বসে সম্ভব হচ্ছে। মানুষের যাবতীয় কাজে ইন্টারনেট এনেছে এক অবিশ্বাস্য গতি।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমাদের দেশের ইন্টারনেট সেবার মান খুবই নাজুক। বিশেষ করে শহরের মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ইন্টারনেটের গতির মান নিয়ে সবার ভিতরে অখুশি দেখা যায়। গ্রাম বা মফস্বলে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। ঐ সমস্ত জায়গায় যেখানে মোবাইলে কথা বলাটাই দুরহ সেখানে ইন্টারনেটের গতির মান নিয়ে ভাবাটাই বোকামি। সম্প্রতি ইন্টারনেট অ্যাকসেস ও পারফরম্যান্স অ্যানালাইসিস কোম্পানি ‘ওকলার’ সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগের থেকে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতিতে বাংলাদেশ আগের তুলনায় আরও পিছিয়েছে। স্পিডটেস্ট ডট নেটে ইন্টারনেটের গতির তথ্যে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশে সবার পিছনে। এমনকি মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে বাংলাদেশের চেয়ে সুদান, লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও উগান্ডার মতো দেশও এগিয়ে রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই খারাপ। তবে ব্রডব্যান্ডে তুলনামূলক একটু ভালো অবস্থা রয়েছে।

ব্রডব্যান্ডের গতির মান মোবাইল ইন্টারনেটের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও এই সেবা শহরের বাইরের মানুষের আওতায় নিয়ে আসাটা বেশ সময় সাপেক্ষ। কেননা, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শহর থেকে দূরবর্তী গ্রাম বা মফস্বলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়ে যাওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জের। সেইসাথে ব্রডব্যান্ডের সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। যেমন মানুষ সার্বক্ষণিক ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহারের সুযোগ পায় না। বিভিন্ন কাজে দিনের অধিকাংশ সময় সকলকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীদের বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে চাইলে এই সমস্যা দেশের মুঠোফোন ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলো সমাধান করতে পারে। তাছাড়া মোবাইল ফোন একজন মানুষের সার্বক্ষণিক কাছে থাকে। তাই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট সেবার মানও উন্নত করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, আমাদের দেশের মুঠোফোন ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবসায়ী সুবিধা নিয়ে ভাবে। মানুষের সেবার মান নিয়ে তাদের সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তা আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। তাদের দেওয়া বিভিন্ন লোভনীয় অফারে প্রতিদিনের খবরের কাগজের পাতাগুলো ভরে যায়। টিভি চ্যানেলগুলোতে সারাক্ষণ চলে তাদের বিজ্ঞাপনের মহড়া। কিন্তু বাস্তবে তাদের সেবার মান কতটা বন্ধুসুলভ সেটা দেশের ভুক্তভোগী গ্রাহকরাই ভালো জানেন।

দেশে মোট চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রয়েছে। স¤প্রতি বাংলাদেশ টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি। যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি সেখানে ১৭ কোটি মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা একটু হলেও বেমানান। বেমানান বলছি এই কারণে, গ্রামের অনেক নিরক্ষর মানুষ আছে যাদের মোবাইল ফোন নেই। আবার, শিশুদের কমপক্ষে ১০-১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নেই। তাহলে এই ১৭ কোটি সংখ্যাটা কীভাবে এলো? খুব সহজ হিসাব হতে পারে একই ব্যক্তির নামে একাধিক মোবাইল সিম কার্ড কেনা আছে। বেশিরভাগ গ্রাহকই মোবাইলে দুইটি সিম কার্ড সচল রাখে। আবার কারো কারো একাধিক মোবাইল ফোনও আছে। সেজন্য ১৮ কোটি জনগণের দেশে ১৭ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা হতেই পারে।
এখন প্রশ্ন জাগাটায় স্বাভাবিক, আমাদের দেশের মানুষের কেন এত বেশি সিম কার্ড? এর বেশ কিছু কারন থাকতে পারে। যেমন, মুঠোফোন কোম্পানিগুলো সবসময় তাদের সিম কার্ড বিক্রির জন্য পুরাতন গ্রাহকের চেয়ে নতুন গ্রাহকের বাড়তি অফার দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে তারা সিমকার্ড বিক্রি করে। দেশের মানুষ বিনামূল্যের এই সুযোগ লুফে নিয়ে যতটা পারা যায় সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত সিম কার্ড কিনে রাখে। কিন্তু গ্রাহক তাদের কাক্সিক্ষত সেই অফার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায় না। বেশ কিছু কারণে এমনটা হয়। যেমন, অফারের আওতায় থাকা সুবিধাগুলো ব্যবহারের সময় সীমা খুবই কম থাকে। সেগুলো ব্যবহারেরও দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময় সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে। কিন্তু অফার ব্যবহারের সময় ব্যবহৃত ইন্টারনেটের গতির অবস্থা নাজুক থাকে। অফারগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন হয় যে ১/২ দিনের ভিতর শেষ করতে হবে। গ্রাহকের নিজেদের ক্রয়কৃত বিভিন্ন প্যাকেজে বেঁধে দেওয়া হয় সংকীর্ণ সময়সীমা। যে সময় সীমার ভিতর গ্রাহক ব্যবহার করতে না পারলে সেটি আর কাজে লাগে না। টাকা দিয়ে ইন্টারনেট কিনে পর্যাপ্ত ডাটা থাকা সত্তে¡ও শুধুমাত্র মেয়াদ না থাকার কারণে সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যেগুলো গ্রাহকের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। মাঝেমধ্যে মুঠোফোন কোম্পানির অফারের এসব কান্ড দেখে অনেক গ্রাহক ক্ষিপ্ত হয়েও তাদের হেল্প লাইনে ফোন করে। কিন্তু কোন সমাধান পায় না। আমার মনে হয় মুঠোফোন কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র ফোন কল থেকে বাড়তি অর্থ আয়ের আশায় ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা দিতে নারাজ। কেননা, ইন্টারনেটে ভালো গতি পেলে মানুষ ফোন কল বাদ দিয়ে বিভিন্ন অ্যাপস (মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটঅ্যাপস, উইচ্যাট ইত্যাদি) যোগাযোগ করবে ফলে মোবাইল ফোনে সরাসরি কল দিয়ে কথা বলাটা অনেকাংশে কমে যাবে।

ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতা এবং সাশ্রয়ী প্যাকেজ নিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোর তেমন কোনো সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেই। ভালো মানের সেবা না দিয়ে একের পর এক জনগণের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় অনেক বেহিসাবি অর্থ। বাইরের দেশগুলোতে দেখেছি সবার মোবাইল নাম্বার, তাদের পরিচিতি নাম্বার, ব্যাংক হিসাব সবকিছুই একই সাথে কানেক্টেড। তাই ইচ্ছামত একের অধিক সিম কার্ড কেনার ধারণা কেউ পোষণ করে না। চাইলেই মুঠোফোন কোম্পানিগুলো সেখানে মনগড়া অফার দিতে পারে না। আর সেজন্যই সেসব দেশের ইন্টারনেট সেবা নিয়ে জনগণের অখুশি হতে দেখা যায় না। উন্নত দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি কিন্তু ইন্টারনেট বাবদ প্রতিমাসের ব্যয় অনেক কম। অন্তত পক্ষে আমাদের দেশের তুলনায় বেশ কম। আবার ইন্টারনেটের গতির মান, সার্বিক সুবিধাদি নিয়ে দেশের সাথে তুলনা করা অনেকটা বোকামি হবে। তারপরেও সামান্য একটু তুলে ধরছি। চীনে আসার পরে প্রথমে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছিলাম তখন ওয়াইফাই বাবদ মাসে খরচ হত ২০ ইউয়ান (দেশি টাকায় ২৫০ টাকার মতো)। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের বাইরে ভাড়াকৃত বাসায় ওয়াইফাই বাবদ মাসে খরচ হয় ৫০ ইউয়ান। সেইসাথে মোবাইলে খরচ হয় প্রতিমাসে ২৯ ইউয়ান। যেটা দিয়ে আনলিমিটেড ফোন কল এবং ১০ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। এখানে মোবাইলে ইন্টারনেট থাকলে আলাদাভাবে ওয়াইফাই নেওয়া লাগে না। কিন্তু ল্যাপটপ এবং একাধিক গ্রাহক ব্যাবহারের সুবিধার জন্য বাসাতে ওয়াইফাই নেওয়া। বিগত তিন বছরের মধ্যে আমার বাসার ওয়াইফাই এর সংযোগ একটি বারের জন্যও বিচ্ছিন্ন হয়নি। ওয়াইফাই সংযোগ দেয়ার সময় যাবতীয় খরচ (মডেম, সংযোগের তার) কোম্পানি নিজে বহন করেছে।

চীনের সব জায়গাতেই ‘ফাইভ-জি’ সুবিধা আছে। চীনাদের বেশিরভাগই একটি সিম কার্ড ব্যবহার করে। তবে কেউ কেউ দুইটি সিম কার্ড ও ব্যবহার করে কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য। সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখানে বেশ কিছু নিয়মনীতি আছে। যেমন, সিম চালু রাখতে গ্রাহকের প্রতি মাসে সিমের প্যাকেজের সম পরিমাণ টাকা রিচার্জ করতে হয়। একটানা ২-৩ মাস সিমে রিচার্জ না করলে কোম্পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিম বন্ধ করে দেয় এবং পরবর্তীতে ওই সিম অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। তাই চীনারা একটির বেশি সিম কার্ড ব্যবহার করে না। তাছাড়া এক সিম কার্ড দিয়েই তাদের যাবতীয় দরকার মিটে যায়। আমার জানা মতে, বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার এই দেশে মাত্র তিনটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি আছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর কখনো কোন লোভনীয় অফার চোখে পড়েনি। তবে মাঝেমধ্যে মোবাইলে ম্যাসেজ আসে যদি আমি ছয় মাস বা এক বছরের সমপরিমাণ অর্থ একসাথে রিচার্জ করি তাহলে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম টাকায় হবে।

কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট এদের পুরো বিপরীত। একের অধিক সিম কার্ড থাকায় আমাদের দেশের গ্রাহকরা লাভবান হয়েছে না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে বিষয়ে কারো কোনো তদারকি আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। বরং দেখা গেছে একের অধিক সিম কার্ড থাকায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মাঝেমধ্যে বিঘ্নিত হয়। অনেককে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোনে নানান হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। একের অধিক সিম কার্ড থাকায় সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকান্ডও বহাল তবিয়াতে চলমান রেখেছে। দেশের নাগরিকের একটা জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে ২০টি সিম কার্ড কেনা যায়। কিন্তু ২০টি সিম কার্ড কি একজনের কেনাটা অতি জরুরি নাকি গ্রাহকের সেবার মান নিশ্চিত করাটা জরুরি সেটা অনেকের কাছে প্রশ্ন। বিটিআরসি, বিষয়গুলো নিয়ে খুবই উদাসীন। অধিক সিম কেনার পরে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না লাভবান হচ্ছে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা উচিৎ।

ইন্টারনেটের গতির নাজুক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি গেল এক দেড় বছর ধরে দেশের ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধারের সময়। শুধুমাত্র ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও পর্যাপ্ত গতি না থাকায় অনলাইন ক্লাসের সুফল পায়নি দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। অথচ, অন্যান্য দেশে এই সমস্যা না থাকায় মহামারীর মধ্যেও তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের দেশের মতো এতটা নাজেহাল হয়নি। বিটিআরসি তথ্যমতে দেশের প্রায় ১০ কোটি জনগণ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নিঃসন্দেহে এ সংখ্যাটা গ্রামে অনেক বেশি। কেননা, শহরের তুলনায় গ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম। দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীনসহ মোবাইল অপারেটররা ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ ও মুনাফার বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে চায় না। ফলে গ্রামের মানুষেরা ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সম্প্রতি সরকার গ্রামে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়া নিয়ে ভাবছে। অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে সরকারের, গ্রাহকের প্যাকেজের সাথে প্রাথমিক ইন্সটলেশন খরচ (মডেম, সংযোগ তার) বেঁধে দেওয়া সমীচীন হবে। অন্যথায় সংযোগ প্রদানকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে জনগণের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যাবে।

উন্নত দেশগুলো তথ্য ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। সেসকল দেশের জনগণ শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই দেশগুলোতে এ বাবদ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছ। বাংলাদেশও এ লক্ষ্যে পূর্বের তুলনায় বেশ অনেকখানি এগিয়েছে। তবে তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে ডিজিটালের আওতায় আনার যে লক্ষ্য সেটি পুরোপুরি অর্জনে এখনো সুদূরপরাহত। দেশকে ডিজিটালের আওতায় আনতে গেলে যেমন, সবকিছু অনলাইনের আওতায় আনতে হবে, সেইসাথে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবার হাতেও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে ইন্টারনেটের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পাওয়াটা খুবই জরুরি। সরকারের দায়িত্বশীল বিভাগকে অবশ্যই দেশের সকল জনগণের ইন্টারনেটের সহজ প্রাপ্যতা নিয়ে অধিক গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
ajoymondal325@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন