শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মেসির অভিষেক রাঙালেন এমবাপ্পে

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

এইতো অল্প কিছুদিন আগের কথা। লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ গুঞ্জণ তখন ‘টক অব দ্য ফুটবল অ্যারিনা’। তবে যখন গুঞ্জণ পরিণত হল সত্য ঘটনায়, তখন দেখা গেল মেসির প্রতি ফরাসিদের ভালোবাসা। ছয়বারের ব্যালন ডির জয়ী তারকাকে স্বাগত জানাতে প্রায় ২০ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল ভক্তরা। ‘মেসি-মেসি’ চিৎকারে তারা মাতিয়ে রেখেছিলেন পিএসজির স্টেডিয়াম পার্ক দে প্রিন্সেসের প্রবেশ পথ ও বিমানবন্দর। সেসব এখন অতীত। কিন্তু সেই অতীতকেই পুণরায় বর্তমান করে তুলেছেন রেসের স্তাদ অগোস্ত-দোলন স্টেডিয়ামের দর্শকরা।
মেসি মাঠে নামবেন বলেই রেস সমর্থকদেরও কী উত্তেজনা! যে রেসের আগের ম্যাচে মেরেকেটে ৯ হাজার দর্শক হয়নি, মেসির কারণেই ২০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের পুরোটাই ভর্তি! শুরুতে বেঞ্চে থাকা মেসি ৫৭ মিনিটে গা গরমের জন্য বেঞ্চ ছেড়ে উঠলেন, রেস সমর্থকদের সে কী আনন্দ তখন! মেসি যে পিএসজির আর পিএসজি যে তাদের প্রতিপক্ষ সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে ‘মেসি’, ‘মেসি’ কোরাস ধরলেন! মেসি ভালোবাসার জবাব দিলেন দুই দলের সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে।
৬৬ মিনিটে নেইমারের বদলি হয়ে মেসি মাঠে নামতেই স্টেডিয়ামে গগনবিদারী উল্লাস। মেসি ফ্রান্সের ফুটবলে প্রথমবার নামছেন বলে কথা! বলে মেসির প্রতিটি স্পর্শেই পিএসজি সমর্থকেরা তো বটেই, রেস সমর্থকেরাও উচ্ছ্বাস দেখালেন। রেস-পিএসজি ভুলে তারা তখন মেসির সমর্থক।
রেসের মাঠে গতপরশু পিএসজির জার্সিতে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন মেসি। বার্সেলোনার অধ্যায় শেষে পিএসজিতে যোগ দেওয়া মেসিকে এই প্রথম ক্লাব ক্যারিয়ারে বার্সা ভিন্ন অন্য কোনো জার্সিতে দেখা গেল। বার্সার জন্য সেটি আফসোসের, কিন্তু পিএসজির জন্য তো আনন্দের। ক্লাব নির্বিশেষে ফ্রান্সের ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও কী নয়?
রেসের সমর্থকেরাই যে মেসির জন্য করতালি দিয়ে গেছেন প্রতিটি মুহূর্তে, বলে মেসির প্রতিটি স্পর্শে। দেখে যে কারও মনে হতেই পারে, ম্যাচটি বুঝি নিজেদের মাঠেই খেলছে পিএসজি! দুই অর্ধে কিলিয়ান এমবাপ্পের দুই গোলে পিএসজি ম্যাচটা ২-০ গোলে জিতেছে। ৬৬ মিনিটে নেইমারের বদলি হয়ে নেমেছেন মেসি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ৬৩ মিনিটে এমবাপ্পে নিজের ও পিএসজির দ্বিতীয় গোলটি করার পরই মেসিকে নামান পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো। নির্ধারিত সময়ের ২৪ মিনিট ও যোগ করা ৬ মিনিট সময় মিলিয়ে ৩০ মিনিট মাঠে ছিলেন মেসি, তেমন কোনো আক্রমণও গড়তে পারেননি।
দু’একবার এমবাপ্পের সঙ্গে সমন্বয় করে রেঁসের বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কখনো মুখে রেঁসের ডিফেন্ডারের হাতের আঘাতে মাটিতে পড়ে গেলেন, কখনো রেঁসের তিন-চার ডিফেন্ডার তাঁকে ঘিরে ধরায় সামনে এগোনোর পথ ছিল না মেসির। তিনি মেসি বলেই হয়তো ওই অবস্থায়ও বেশিরভাগ সময়েই অবশ্য বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছিলেন!
তবে গোলমুখে তেমন ‘মেসি-সুলভ’ কিছু করতে না পারলেও বলে তার প্রতিটি স্পর্শই বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা। প্রথম দিনে সবকিছু হয়তো সাধারণ-সরল-স্বাভাবিকই রাখতে চেয়েছিলেন। মূলত মাঝবৃত্তের আশপাশেই খেলেছেন মেসি। কখনো ভেরাত্তি, কখনো আন্দের এরেরা, কখনো ইদ্রিসা গানা গেয়ের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলেছেন। দারুণ নিয়ন্ত্রিত সব পাসে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাতেই তার যত মনোযোগ ছিল।
এমবাপ্পের সঙ্গেও সমন্বয় করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এতটুকু বোঝা গেছে, এখনো পুরো ৯০ মিনিট খেলার মতো ফিট না হওয়া মেসির সঙ্গে এমবাপ্পের সমন্বয় হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। মানে, গুঞ্জনকে একপাশে রেখে এমবাপ্পে যদি রিয়াল মাদ্রিদে না যান আর কি!
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ৩০ মিনিটে মোট ২১টি পাস দিয়েছেন মেসি, এর মধ্যে ২০টিই সতীর্থকে খুঁজে নিয়েছে। ২৬ বার বলে পা ছুঁইয়ে ছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ৩০ মিনিটেই ফাউলের শিকার হয়েছেন ৩ বার। পিএসজি কোচ পচেত্তিনো ম্যাচ শেষে বললেন, ‘মেসির শুরুর দিনে আমাদের জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ও দলে একটা স্থিরতা নিয়ে আসে। ওর ঝলক, ওর তৎপরতা দলের বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।’
ম্যাচ শেষে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। রেসের খেলোয়াড়েরাও মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে লাইন ধরলেন। গোলকিপার পেদ্রাগ রাইকোভিচ তো শিশু ছেলেকেও নিয়ে এলেন, মেসি শিশুটিকে কোলে তুলে ছবি তুললেন। রেস ডিফেন্ডার অ্যান্ড্রু গ্রাভিয়ন রয়টার্সে বললেন, ‘ও অসাধারণ। গত বছর পর্যন্ত ওকে শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে দেখতাম, এখন ওকে আমাদের লিগে পাচ্ছি। ওর সঙ্গে বলের দখলে নামাও তো দারুণ গর্বের।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন