শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যা-ভাঙনে অসহায় মানুষ

পরিস্থিতির অবনতি ১৩ জেলা প্লাবিত : ছয় নদ-নদী বিপদসীমার ঊর্ধ্বে খাদ্য খাবার পানির সঙ্কট, বন্যার্তদের পাশে কেউ নেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। অতিবৃষ্টির সাথে ভারতের ঢলে দেশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে আরো নতুন নতুন এলাকা। দেশের ১৩টি জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর এই ১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি নতুন করে রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলার অনেক এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দেয়ায় বানভাসিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ দেয়া হচ্ছে না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল, ভেসে গেছে মাছের ঘের। বন্যাকবলিত লাখো পানিবন্দি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার শেষ নেই। বসতভিটা, ফল-ফসলি জমি, ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট তলিয়ে অসহায় বন্যার্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দেখার কেউ নেই।

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এর আগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে একই উপজেলার সুতালড়ি রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া, চলতি বছর শতাধিক বাড়ি-ঘর, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ইতোমধ্যেই নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে আরো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।

আমাদের সংবাদদাতারা দেশের বন্যা ও নদীভাঙনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তা তুলে ধরা হলো :
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, অন্যতম প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে বাড়ছে পানি। আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও উভয় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আরো অনেক নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বন্যা ও নদীভাঙনের সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি ও মোহনা পর্যন্ত তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। প্লাবিত হচ্ছে চরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চলসহ নদীতীরের অনেক এলাকা।

গতকাল ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ ছয়টি নদ-নদী ১৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে যমুনা নদী ৮টি পয়েন্টেই বিপদসীমার ঊর্ধ্বে বইছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, উত্তর-মধ্যাঞ্চলে জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইল, পাবনা, মধ্য-দক্ষিণে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর এই ১০টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। দেশের নদ-নদী পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানা যায়, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, ধরলা, ধলেশ^রী, আত্রাই এই ৬টি নদ-নদী ১৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৬টি স্থানে হ্রাস ও ৯টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উভয় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মনু ও খোয়াই ব্যতীত প্রধান নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা নদের ৮টি পয়েন্টেই পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পানি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ফুলছড়িতে বিপদসীমার ১৩ সে.মি., বাহাদুরাবাদে ১৭ সে.মি., সারিয়াকান্দি ও কাজীপুরে ৩৩ সে.মি., সিরাজগঞ্জে ৩৬ সে.মি., পোড়াবাড়ীতে ৭, মথুরায় ৫ সে.মি. এবং আরিচায় ৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, যমুনা নদীতে অব্যাহত গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনার নদীর পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার তর্জন-গর্জন আর ভাঙনপাড়ে মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই নদী-তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় গো-খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলার চৌহালী ও এনায়েতপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। একদিনে ভাঙনে চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া থেকে বাগুটিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটারব্যাপী এলাকার বিনানই, চরসলিমাবাদ ও এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রামের অন্তত ২০টি বসতভিটাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা ও ধলেশ^রী নদীর ভাঙনে শতাধিক বসতবাড়ি এবং শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, শ্মাশানঘাট, মাদ্রাসা। নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজন কিংবা সরকারি উঁচু জায়গায়। ইতোমধ্যে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে হরিরামপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কালিগঙ্গা নদীর ভাঙনে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কুশেরচর, নবগ্রাম ও পুটাইল ইউনিয়নের লেমুবাড়ী খেয়াঘাট থেকে কাফাটিয়া শিমুলিয়া খেয়াঘাট পর্যন্ত নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে ১০টি বসতবাড়ি ও ফসলী জমি। যমুনার ভাঙনে শিবালয় উপজেলার দক্ষিণ শিবালয়, ছোট আনুলিয়া ও চরশিবালয়, গঙ্গাপ্রসাদ, আলোকদিয়া, মধ্যনগর গ্রাম নদীভাঙনে একাংশ বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার লোকজন এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ দিকে ঘিওর উপজেলার ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে প্রায় অর্ধশত বসতভিটা, ব্রিজ, কালভার্ট ও ফসলি জমি।

নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, তিস্তা নদীর অববাহিকার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ির দুই নম্বর স্পারটি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। গত ২৯ আগস্ট মধ্য রাতে ধস শুরু হলে ৩০ আগস্ট ভোরে স্পার বাঁধটির অস্তিত্ব বিলীন হয়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। রাতেই স্পার বাঁধটির ধারে বসবাস করা দুইশ’ পরিবার জীবন রক্ষার্থে ভিটে থেকে ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদে সরে গেলেও স্থায়ীভাবে বসবাস করার জায়গা পাচ্ছে না। তিস্তা নদীর ডান তীর প্রধান বাঁধের নিয়ন্ত্রক এই স্পারটি রক্ষায় রোববার সকাল থেকে বালুর বস্তা ফেলা হলেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, জেলার চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার নদী তীরবর্তী হাজারো মানুষ। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি, বসতভিটাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে অবশিষ্ট বসতভিটাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নদীভাঙন রোধে নামমাত্র জিওব্যাগ ফেলা হলেও কোনো কাজে আসছে না। চলতি বছর নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে নদী তীরবর্তী এলাকা, হরিরামপুর, সবুল্লা শিকদারদের ডাঙ্গী, জাকেরের হুরা, চেয়ারম্যান বাড়ির মোড়, সুবি মাতুব্বরের ডাঙ্গী, চর হরিরামপুরসহ অসংখ্য গ্রামের ভিটেবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব কয়েকশ’ মানুষ। প্রতিনিয়ত ভাঙনে ঘরবাড়ি, সড়কসহ নানা স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, নদী-তীরের মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, জেলায় যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাইসহ অনান্য শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে বিভিন্ন শাখা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য স্থাপনা। বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষ নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে অনত্র আশ্রয় নিয়েছে।

যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে তিন শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের কারণে ভাঙনের কবলে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। গত কয়েক দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙনের আতঙ্ক। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানি ইউনিয়নের মন্ডল বাজার সংলগ্ন প্রায় ২শ’ মিটার পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দশ থেকে পনের হাজার মানুষ যাতায়াত করত। এই সড়কটি নদীতে বিলীন হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয়ভাবে প্রবল বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ৬ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখন বিপদসীমার ১৭ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী উড়িয়া, গজারিয়া, ফুলছড়ি, এরেন্ডাবাড়ী ও ফজলুপুর ইউনিয়নে রোপা আমন, পাটসহ নিম্নাঞ্চলের ফসল তলিয়ে গেছে। এদিকে উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের গুনভরি হতে রতনপুর এবং মশামারী হতে ভুষিরভিটা যাওয়ার রাস্তাসহ বেশ কয়েকটি রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।

শরীয়তপুর থেকে মো. হাবিবুর রহমান হাবীব জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্ন এলাকার বাসিন্দারা। পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন, পালেরচর ইউনিয়ন, বিলাশপুর ইউনিয়ন, জাজিরা ইউনিয়ন ও নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে স্রোত বেড়েছে। স্রোতের কারণে জাজিরার পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ও কীর্তিনাশার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে জাজিরার ৩৭টি স্থানে, নড়িয়ার ১২টি স্থানে, ভেদরগঞ্জের ২২টি স্থানে, গোসাইরহাটের ১৪টি স্থানে ও সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর ১৫টি স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হচ্ছে। ওই স্থানগুলোতে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলতে ৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করছে পাউবো।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে মোজাম্মেল হক জানান, জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া বাহিরচর সিদ্দিক কাজীর পাড়া ৪ নং ফেরিঘাট এলাকায় জামে মসজিদসহ ৫টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদীভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে আরো ২০টি পরিবার। হুমকিতে রয়েছে ৪টি ফেরিঘাট, ঘাটের সংযোগ সড়ক, ২ শতাধিক পরিবারসহ বহু স্থাপনা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ভারতের ঢল এবং অবিরাম বৃষ্টিপাতে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে দুধকুমার, সঙ্কোষ, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধরের পানিও। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবছে চর ও নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে এসব এলাকার রোপা আমন, সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। এদিকে অব্যাহত নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে রায়গঞ্জ ইউনিয়নের হাজীরমোড়, বড়বাড়ী, মিনাবাজার, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলিয়ানিরকুটি, বড়মানী, ওয়াপদাঘাট, বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ফান্দেরচর, চরবেরুবাড়ী, বল্লভেরখাস ইউনিয়নের রঘুরভিটা, কৃষ্ণপুর, রাম দত্তসহ বিভিন্ন প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, সুপারি বাগান ও আবাদি জমি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Rahad Sarkar Rasel ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
অথচ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গুলোতে বেশিরভাগই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম বন্যা প্রবণ এলাকাগুলোকে....! উত্তরাঞ্চল অবহেলিতই রয়ে যাচ্ছে যুগের পর যুগ!
Total Reply(0)
Mohammed Kaisar ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
নদীভাঙ্গন নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই এই ভাঙ্গনের কবলে পরছে হাজার হাজার মানুষ। বেকার ও গৃহহীন হচ্ছে এই সকল মানুষ তার চেয়েও ভয়ংকর হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
Total Reply(0)
Ahmad Musa ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
সমস্যা নেই, বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত
Total Reply(0)
সুমন হাওলাদার ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
উত্তরাঞ্চলের বন্যার অবনতির ছবিগুলো খবরে দেখলে সত্যি অনেক কষ্ট হয়। প্রতিবছর একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় হাতেগোনা আট-দশটা জেলার লোকদের। এগুলো থেকে পরিত্রাণের কথা ভাবুন সরকার, ত্রানের কথা নয়!
Total Reply(0)
Mohiuddin Khadha Bokhsha ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন পাশাপাশি সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে আল্লাহ্ সবাইকে হেফাজত করুন
Total Reply(0)
Chowdhury Abdullah ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
এক দিকে নদী ভাঙ্গন, অন্য দিকে করোনা কোথায় যামু?
Total Reply(0)
Utpal Biswas ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
এসব চিত্র দেখার পরেও একদল লোক এ/সি রুমে বসে ভাষন দিয়েই চলেছেন- "দেশে বন্যা পরিস্থিতি ততটা ভয়ানক নয়, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।" এনাদের যে কি করা উচিৎ তাই বুঝে পাই না।
Total Reply(1)
৩১ আগস্ট, ২০২১, ৫:২৯ পিএম says : 0
Rofi Ahmed ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
এসব ছবি ও খবর পড়েও যারাবলে দেশে কোথাও বন্যা নাই তাদেরকে কিবলা যায় ভাষা খুজে পাইনা।
Total Reply(0)
ash ৩১ আগস্ট, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
BANGLADESHER PANIWNNON BOARD ER SHOB PROKOWSHULI R THIKADAR GULO ER JONNY DAYEEEEEE !! EDER SHOBAR A/C SHOMPOTTTI KHOTYE DEKHA WCHITH !!!
Total Reply(0)
নুরুল আমিন ৩১ আগস্ট, ২০২১, ৯:৩৯ এএম says : 0
দোআা করি আল্লাহ যেন তারাতারি পানি কমিয়ে দেন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন