শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি অক্টোবরে হতে পারে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদলের পাশাপাশি যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা ও আস্থা রাখে বিএনপি। কিন্তু বর্তমান যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব সেই প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে দলটির নীতিনির্ধারনী নেতারা। বিশেষ করে নির্ধারিত তিন বছর মেয়াদ শেষে আরও প্রায় দুই বছর পরও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা, তৃণমূল গোছাতে ব্যর্থতা এবং ইতোমধ্যে ঘোষিত কমিটিগুলোতে স্বজনপ্রীতি, সক্রিয়দের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয়দের রাখা, আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের কারণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নাখোশ হাইকমান্ড। এমন অবস্থায় সামনে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বর্তমান নেতৃত্বের অতীত কর্মকান্ডের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাই নতুন করে এই দুই সংগঠন পুনর্গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তারা বলেন, সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া দুই বছর পরই বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সবকিছু মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সংগঠনকে উজ্জীবিত ও সক্রিয়ভাবে মাঠে চায় শীর্ষ নেতারা। আর এজন্য উভয় সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তনের কথা ভাবছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি ঘোষণার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না জানালেও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল কমিটি গঠনের বাকী কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের। ধারণা করা হচ্ছে কমিটি গঠনের অবিশিষ্ট কাজ শেষ হলেই নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সংগঠনে।

বিষয়টি জানতে চাইলে বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারণী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু তাদের কার্যক্রমে তিনি খুশি হতে পারেননি। দুই সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতারা ইতোমধ্যে বিষয়টি জানেন। তারপরও তাদেরকে কিছু সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এরপর যেকোন সময় তিনি নতুন কমিটির প্রক্রিয়ায় যেতে পারেন। ওই নেতা আরও জানান, এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেশ কয়েকজনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। সেটি কমিটির অংশ কিনা সেটি তিনি নিশ্চিত নন।

নেতৃত্ব পরিবর্তনের গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকেই তাই সম্ভাব্য পদপ্রার্থীরাও শুরু করেছেন ছুটোছুটি। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরছেন নিজের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত, বিগত রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন ভবিষ্যত পরিকল্পনাও। নানা মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও নিজের জন্য লবিং করছেন তারা।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে যুবদলের ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। শীর্ষ ৫-এ জায়গা পেয়েছিলেন- সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি।

নির্ধারিত মেয়াদকালে কমিটির নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিই পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গতবছর ৭ ফেব্রুয়ারি আংশিক ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে যুবদল। তাদের নেতৃত্বে উপজেলা-থানা-পৌর শাখার কমিটি গঠন করতে ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। যুবদলের দফতর জানায়, টিমের তত্ত্বাবধানে সারাদেশের ৯৩৫টি ইউনিটের (উপজেলা-থানা-পৌর) মধ্যে ইতোমধ্যে ৭০০টির বেশি শাখায় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে বাকী আছে ৪টি। যদিও তৃণমূলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যুবদলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন, নানা উপঢৌকন গ্রহণের মাধ্যমে পদায়নের অভিযোগ করা হয়। এজন্য একাধিক কমিটি স্থগিত করারও ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরাজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীকে মনোনীত করা হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সকল পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করার কথা। এর মধ্যে গতবছর জুলাইয়ে শফিউল বারী বাবু ইন্তেকাল করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। মেয়াদ শেষের এক বছর পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর ১৮৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে স্বেচ্ছাসেবক দল।

স্বেচ্ছাসেবক দল পূর্ণাঙ্গ করার পর সক্রিয়দের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি ও নিষ্ক্রিয়দের পদায়নের অভিযোগ ওঠে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় সংগঠনটির নানা কর্মসূচিতে। ১৮৬ সদস্যের কমিটির কর্মসূচিতে ঘুরে ফিরে দেখা যায় ৫০-৬০ জন। তবে কমিটিতে পদ না পেলেও দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় পদপ্রত্যাশীরাই প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের।

আংশিক কমিটির নেতৃবৃন্দকে দিয়ে ১২টি টিম গঠন করে সংগঠনটি। তাদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৯’শ উপজেলা-থানা-পৌর শাখার মধ্যে সাড়ে ৪শ’টিতে নতুন কমিটি করা হয়েছে। আর ৮১টি জেলা কমিটির প্রায় সবকটিই নতুন করা হয়েছে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
যদি এসব কমিটি গঠন করতে গিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। তার নিজ জেলা সিলেটে তার মতামতকে উপেক্ষা করে কমিটি গঠনের জেরে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সহ-সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান। এছাড়া বেশ কয়েকটি কমিটিই ঘোষণার পর বিতর্ক দেখা দিলে আবারও পরিবর্তন করার ঘটনাও ঘটেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের।

স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা যায়, নানা ইস্যুতেই সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের প্রতি নাখোশ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিগত তিন মাস ধরে বার বার সময় চাওয়া হলেও সংগঠনটিকে কোন সময় দিচ্ছেন না তিনি। এই অবস্থায় নতুন কমিটির গুঞ্জনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। এজন্য পদপ্রত্যাশী নেতারাও তৎপর হয়ে চেষ্টা করছেন শীর্ষ পদে আসার জন্য।

আলোচনায় যারা: স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে আসার জন্য প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি। জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ বা আহ্বায়ক যেকোন কমিটি হলেও সভাপতি বা আহ্বায়ক পদের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন- বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. গোলাম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। আর সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে- সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার মো. নুরুজ্জামান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সাবেক সভাপতি রাজিব আহসান।

কমিটি গঠনের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দলের হাইকমান্ড যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোন আলোচনা হয়নি।
যুবদলে- সভাপতি বা আহ্বায়ক পদের দায়িত্ব পেতে চান- বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু। এর বাইরে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে- সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, উত্তরের সাবেক সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, আকরামুল হাসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ইসহাক সরকার।

যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব বলেন, আমরা এখন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং যেসব কমিটি বাকী আছে সেগুলো গঠনের কাজ করছি। নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া, এতে উৎসাহিত, লাফালাফি বা মন খারাপের কিছু নেই। বরং এখন আমাদের যেটা দায়িত্ব আমরা সেটা পালন করে যাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:২৬ এএম says : 0
জরুরি করতে হবে,হতে পারে এই শব্দ ব্যবহার করার দরকার নেই,সময় নাই,পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে বাংলাদেশের সব ঘরে ঘরে 71 সালের মতো মুক্তি সংগঠন করা জরুরি আবার যোদ্ধ করতে হবে,জনগণ এবং দেশের সম্পদ বাঁচাতে সবাই আবার যুদ্ধ করতে হবে,এবং ডান পন্থী দল গুলি জরুরি বৈঠক করে পসতুত হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ জরুরি,তালেবান যেমনে আমেরিকাকে বিদায় দিয়াছে,এই ভাবে এই অবৈধ সরকারের বিদায় দিতে হবে,পদ্মা সেতু মেট্রো রেল এই গুলি দেখাইয়া ক্ষমতায় আসার অবৈধ সরকারের অধিকার নেই,এই সমস্ত টাকা কষ্টের অর্জিত বাংলার বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের টাকা।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন