শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস লকডাউন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে চলেছে। সর্বাত্মক লকডাউন ও বিধিনিষেধের মধ্যেও দেশের রফতানি বাণিজ্য ও তৈরী পোশাক খাতের মত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকারখানা খোলা রাখার পাশাপাশি এসব কারখানার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের খাতটির সুরক্ষায় সরকার সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করলেও সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকরা শ্রমিকের কর্মসংস্থান রক্ষায় খুব আন্তরিক ছিল কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইতিমধ্যে দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে। গত সোমবার ঢাকায় আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সেমিনারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি)’র এক জরিপ রিপোর্টে করোনাকালে দেশের গার্মেন্ট সেক্টরে কর্মহারানো শ্রমিকদের ৭০ ভাগ শ্রমিক এখনো কাজ ফিরে পায়নি বলে জানা যায়। ‘বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক: ভবিষ্যৎ চিন্তা’ শীর্ষক আলোচনায় গার্মেন্টস সেক্টরের কর্মহীন শ্রমিকদের নিয়ে সিপিডি পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সিপিডি’র সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৫০০ পোশাক শ্রমিক এবং ১ হাজার ৩৭৯টি পরিবারে জরিপ চালিয়ে সিপিডি যে ফলাফল পেয়েছে, তাতে আমাদের পোশাক শ্রমিক সমাজের বড় ধরণের বিপর্যয়ের চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। তবে দেশের হাজার হাজার কারখানার মধ্যে সীমিত পর্যায়ের জরিপে প্রকৃত ফলাফল উঠে আসে কিনা তা নিয়ে তৈরী পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের আপত্তি রয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়।

ইতিপূর্বে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও পিপিআরসি পরিচালিত জরিপের ফলাফলেও দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে করোনা লকডাউনের কারণে দেশের ১৫ শতাংশ তথা প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে অতি দরিদ্র শ্রেণীর তালিকায় যুক্ত হয়েছে। গত দু’তিন দশকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ফলে দারিদ্র্যের হার যে সংখ্যায় কমেছিল, করোনা লকডাউনের কারণে তা আবারো অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরের মত শ্রমঘন শিল্প করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সত্তে¡ও খোলা রাখা ও হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়ার মূল্য লক্ষ্যই ছিল লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান রক্ষা করা। এসব বেসরকারি সংস্থার জরিপে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে তবে বিজিএমইএ এবং টেক্সটাইল সেক্টরের প্রতিনিধিরা যাই বলুন না কেন, গার্মেন্টস খাতসহ দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক। একদিকে করোনা লকডাউনের কারণে চাকুরিচ্যুত হাজার হাজার শ্রমিক তাদের কাজ ফিরে পায়নি, অন্যদিকে কাজে বহাল থাকা শ্রমিকদের অনেকে আগের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। এ জন্য পোশাক কারখানার মালিকরা ক্রয়াদেশ বাতিল ও কমে যাওয়ার কথা বললেও সে তুলনায় শ্রমিকদের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি।

করোনাকালে তৈরী পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রাখা দ্বিতীয় অবস্থান থেকে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে। তবে তৈরী পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গার্মেন্ট সেক্টরে নতুন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই সেক্টরের আধুনিকায়ণের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। তবে গার্মেন্টস সেক্টরের রফতানি প্রবৃদ্ধি যেন শুধু বিনিয়োগকারিদের স্বার্থ রক্ষার বিষয় হয়ে না দাঁড়ায়, এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র তৈরী পোশাক খাতের উপর গুরুত্ব দিলেই হবে না, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, কৃষি, বাণিজ্যসহ অর্থনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগের হার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর বিপরীতে দেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক ফিরে আসছে। শ্রমশক্তির রফতানিও নি¤œমুখী। ফলে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এদের অনেকে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষকে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি কিভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা যায়, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ও ব্যবসা সহজীকরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, দফতর ও সংস্থাগুলোর ধারাবাহিক ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতির গতি ফিরিয়ে আনতে করোনা মোকাবেলায় ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সফল করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন