শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অপরাধীদের নিষ্ফল আর্তনাদ

মাওলানা জুবাইর আহমদ | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইবাদত-বন্দেগী ও দৈনন্দিন জীবন সঠিকভাবে নির্বাহ করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলের মাধ্যমে আমাদের পথনির্দেশ দান করেছেন। যারা আল্লাহ প্রদত্ত এ নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে নিজেদের জীবন পরিচালিত করবে তাদের জন্য মহা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তারাই প্রকৃত সফলকাম। তাদের জন্য রয়েছে শান্তিময় অনন্ত জীবন। সে জীবনে আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার সব উপকরণ অপরিমিতভাবে আপন অধিকারে থাকবে। সর্বোপরি তাদের প্রতি ঝরে পড়বে মহান রবের স্থায়ী সন্তুষ্টি।

অপরদিকে যারা আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশনা ঔদ্ধত্য প্রদর্শনপূর্বক স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে লঙ্ঘন করবে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ক্রোধের পাত্রে পরিণত হবে। তারা আল্লাহ পাকের বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। যেকোনো অপরাধী তার বিপথগামিতার কথা অনুধাবন করতে পেরে যদি সঠিক পথে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ পাক তাকেও সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। সে আপন কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ না করার সংকল্প করে তওবা করলে আল্লাহ গফুরুর রাহীম তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এই সুযোগ থাকবে মৃত্যু অবধি। মৃত্যুর পর দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে অপরাধীদের অনুতপ্ত বা তওবা করার দ্বারা কোনো ফলোদয় হবে না। সে কঠিন মুহূর্তের আফসোস ও হাহুতাশ নিষ্ফল আর্তনাদে পরিণত হবে।

অপরাধীরা মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ে পুনরায় জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানে উঠবে অতিশয় ঘৃণিত ও অপমানজনক অবস্থায়। তারা পা দ্বারা চলার পরিবর্তে মুখ দিয়ে ভর দিয়ে অস্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। (মিশকাত শরীফ : ২/৪৮৪)। প্রথমত, তাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তি কিছুই থাকবে না। বাকশক্তি পাওয়ার পর তারা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে বলবে : ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো পৃথিবীতে ছিলাম চক্ষুষ্মান।’ (সূরা ত্বহা : ১২৫)।

আল্লাহ পাক তখন বলবেন, আমার নির্দেশাবলি দুনিয়ায় তোমার নিকট এসেছিল। তুমি সেগুলো বর্জন করেছিলে এবং ভুলে গিয়েছিলে, সেভাবে আজ তোমার সাথে বিস্মৃতির আচরণ করা হলো, তোমাকে দৃষ্টিশক্তি রহিত করে উত্থিত করা হলো।

হাশরের ময়দানে অপরাধীরা থাকবে ভীত-সন্ত্রস্ত। ভয়-বিহ্বলতায় তাদের চক্ষুদ্বয় হবে নীলবর্ণ, দৃষ্টি হবে নিষ্পলক, চেহারা বিবর্ণ, ফ্যাকাসে ও গ্লাণিময় আচ্ছন্ন এবং হৃদয় আশাশূন্য। এহেন দুর্বিষহ অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা পুনর্বার পৃথিবীতে চলে আসার প্রার্থনা করবে, যা আদৌ সম্ভব নয়। তারা বলবে : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন তুমি আমাদের পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করো, আমরা সৎকর্ম করব, নিশ্চয়ই আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী।’ (সূরা সাজদা : ১২)।

আল্লাহ পাকের নিষিদ্ধ কাজ করা এবং যে কাজ গুরুত্বের সাথে আদেশ করা হয়েছে তা না করাই অপরাধ। এসব অপরাধের বহু শ্রেণি ও প্রকার রয়েছে। স্থান, কাল ও পাত্রভেদেও অপরাধের তারতম্য হয়। এর মধ্যে সর্ববিচারে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ও ভয়াবহ অপরাধ হলো আল্লাহ পাকের সঙ্গে কাউকে শরিক সাব্যস্ত করা। একেই বলা হয় শিরক। আর এ নিকৃষ্টতম অপরাধ যারা করে তাদের বলা হয় মুশরিক। আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘শিরক চরম পর্যায়ের জুলুম।’ (সূরা লোকমান : ১৩)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, ‘একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জানতে চাইলেন, সবচেয়ে বড় অপরাধ কোনটি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, আল্লাহ পাক যিনি তোমার সৃষ্টিকর্তা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক সাব্যস্ত করা।’ (মিশকাত শরীফ : ১/১৬)।

যারা মূর্তিপূজা করে তারা মূলত অভিশপ্ত জিন ও শয়তানেরই পূজা করে থাকে। পূজারীদের ধারণা, মূর্তিগুলো তাদের কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে। এজন্য তারা মূর্তির সামনে আহার্য পানীয় উপস্থিত করে, ফুল চন্দন দ্বারা মূর্তির উদ্দেশে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে এবং গান-বাজনা ও নর্তন-কুর্দন দ্বারা মূর্তির বোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করে। তারা মূর্তির উদ্দেশে নৈবেদ্য ও উপঢৌকন পেশ করে, এগুলোর কাছে ঈপ্সিত বস্তু লাভে সাহায্য প্রার্থনা করে। পরকালে যখন দুরাচার জিন ও তাদের পূজারী মুশরিকদের পাকরাও করা হবে, তখন পূজিত জিন ও শয়তানেরা তা সরাসরি অস্বীকার করে বলবে, ‘তোমরা কখনও আমাদের পূজা করোনি।’ আর মুশরিকরা ভয়-বিহ্বল কণ্ঠে বলবে : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একে অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং তুমি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারিত করেছিলে এখন আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।’ (সূরা আনআম : ১২৮)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md. Mofazzal Hossain ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
ছোট-বড় সব ব্যাপারেই প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে যদি সত্য বলে তাহলে ভালই। আর যদি মিথ্যা বলার বা গোপন করার চেষ্টা করে, তবে হিসাব-নিকাশের দিন তার মুখে মোহর মেরে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রতঙ্গকে কথা বলার জন্য বলা হবে।
Total Reply(0)
Nazrul Islam ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব; তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৬৫)
Total Reply(0)
Ujjal Hasan ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
যার পাপ বেশী হবে, তার শাস্তিও বেশি হবে। আর যার পাপ কম হবে তার শাস্তি কম হবে। আর যার পূণ্য থাকবে তার আজাব হালকা করা হবে কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
Total Reply(0)
Billal Hossain ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
হাশরের ময়দানের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে লাল শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) হাশরের ময়দানের ভূমি সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘(বিচার দিবসে) আল্লাহ জমিনকে এমন সমতল মসৃণ ধূসর ময়দানে পরিণত করবেন যে তুমি তাতে কোনো বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ১০৬-১০৭)
Total Reply(0)
Umme Halima Alo ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
কিয়ামতের বিভীষিকাময় ময়দানে কেউ কারো হবে না। সবাই ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করতে থাকবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন