বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ পবিত্র মহরম এর শিক্ষা

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী
ধর্মপ্রেম, দেশপ্রেম, মানবপ্রেমের মহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে বিশ্বে সর্বপ্রথম গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষে আত্মদান ও সপরিবারে ধরীত্রিকে রক্তে রঞ্জিত করার সুমহান শিক্ষা ও পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে বহু ঐতিহাসিক সুখ-দুঃখ বিজড়িত নানা ঘটনাপ্রবাহের অবিস্মরণীয় ঘটনা নিয়ে মহরম আসে আমাদের মাঝে প্রতি বছরই। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত আলি (রা.) ও বিবি ফাতেমার আদরের সন্তান হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও মাবিয়ার পুত্র স্বৈরাচার এজিদকে গণতন্ত্রের মাধ্যমে ও ইসলামিক ভাবধারায় দেশের শাসনভার গ্রহণ এবং পরিচালনার জন্য বলেন। কিন্তু তিনি বাদশাহর পুত্র বাদশাহ হবে এই ভাবধারায় জোরপূর্বক মক্কার শাসনভার গ্রহণ করে নেন এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে থাকেন।
তখন হজরত ইমাম হোসেন (রা.) স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এজিদ শাসকগোষ্ঠীর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হন। এজিদ বাহিনী সম্মুখ সমরে না-গিয়ে ষড়যন্ত্র করে কুফা নামক স্থানে আমন্ত্রণ করে রাস্তায় অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে এবং কারবালার প্রান্তরে তাদের ঘিরে ফেলে ও পানীয় জল বন্ধ করে দেয়। ইমাম হোসেন (রা.)-এর পরিবারসহ অন্যান্য লোকেরা বীর বিক্রমে অগ্রসর হয়ে অনেকেই শত্রুদের হাতে শহিদ হন। ইমাম হোসেন (রা.) যুদ্ধ করে পানি সংগ্রহ করে পান করার সময় দেখেন তার স্বজনগণ শহিদ হয়ে গিয়েছে। তখন তিনি স্বজনহারার বেদনায় পানি হাতে নিয়েও আর পান করেননি। স্বৈরাচারীর সঙ্গে কোনো ধরনের আপস না-করে শহিদ হন। মহরম মাসের ১০ তারিখে বিশ্বের বুকে প্রথম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপসহীন, সংগ্রাম করে আত্মাহুতি দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কারবালার মরুপ্রান্তর রক্তে রঞ্জিত করে পৃথিবীর মানুষকে যুগান্তকারী অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় পথ প্রদর্শন করে গেছেন হজরত ইমাম হোসেন (রা.)। যে কারণে পবিত্র আশুরার এই দিনটি শোকাবহ হলেও এ দিনটি চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে।
হিজরি বর্ষ বা আরবি প্রথম মাসকে বলা হয় মাহে মহরম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যময় ফজিলতের মাস। ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে মাহে মহরমের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসের ১০ তারিখে বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহরম তারিখকে ইয়াওমে আশুরা বলে নামকরণ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, মহান আল্লাহতা’লা বিশ্বে ধরিত্রীকে সৃষ্টির সূচনা শুরু করেন ১০ মহরম তারিখে, আর মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) এই ১০ মহরম তারিখে সৃষ্টি করা হয় এবং দুনিয়াতে নিক্ষেপের দিনটিও ছিল ১০ মহরম দিবস। আদম ও হাওয়া’র (আ.) সুদীর্ঘ সাড়ে তিনশ বছর পর এই দিনেই আরাফতের মাঠে প্রথম মিলন সংঘঠিত হয়। এই দিনেই কেয়ামত বা মহাপ্রলয় অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনেই সর্বপ্রথম দুনিয়াতে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ হয়। এক কথায় আল্লাহতা’লা জগতের সকল বস্তুসামগ্রী সৃষ্টি করে তাঁর আরশে আজিমে সমাসীন হয়ে প্রভু হিসেবে অভিসিক্ত হন ১০ মহরম তারিখে আশুরার দিনে। এ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলতও বহুগুণে বেশি।
মাহে মহরমের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত পৃথিবীর সূচনাকাল থেকেই আছে এবং কেয়ামত বা মহাপ্রলয় কাল পর্যন্ত থাকবে। ইসলামের পূর্বাপরে এ মাসটি অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হিসেবে পরিগণিত হয়। আইয়ামে জাহেলিয়াতে আরববাসীরা এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা রক্ষার্থে কোনো প্রকার অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। মহান আল্লাহতা’লা যে ৪টি মাসকে সম্মানিত করেছেন তা হল জিলক্কদ, জিলহজ, মহরম ও সফর। সেই চারটি মাসের মধ্যে মাহে মহরম অন্যতম ফজিলতপূর্ণ বরকতময় মাস। যার বর্ণনা কোরআন ও হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে।
মাহে মহরমের ১০ তারিখের কিছু ঘটনাবলি যেমন হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি, আদম (আ.)-এর বেহেশত প্রবেশ, বাবা আদম ও মা হাওয়া নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণের ভুলের ফলে দুনিয়াতে নিক্ষিপ্ত হওয়া, ৩৫০ বছর পর বাবা আদম ও মা হাওয়ার (আ.) প্রথম মিলন, আরাফাতের ময়দানে আদম-হাওয়ার দোয়া কবুল এবং মুক্তির সুসংবাদ, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্ম, নমরুদের অগ্নি থেকে মুক্তি, মূসা (আ.) আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন ও নবুওয়াতি এবং তাওরাত কিতাব লাভ। নীলনদ পার হওয়া, ফেরাউন সদলবলে নীলনদে ডুবে মরা, আইয়ূব (আ.) ১৮ বছর রোগে ভোগার পর মুক্তি লাভ, সোলেমান (আ.)-এর বাদশাহি লাভ, দাউদ (আ.)-এর তওবা কবুল, ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফ (আ.) পিতা-পুত্রের মিলন, নুহ (আ.) প্রবল বন্যায় নৌকাতে ৪০ দিন অবস্থানের পর জুদিপাহাড়ে নৌকা ভিড়ানো, ইশা (আ.) সশরীরে ৪র্থ আকাশে গমণ, ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভসহ যাবতীয় ঘটনা ১০ মহররম তথা আশুরার এই দিনে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মাহে মহরমের গুরুত্ব-তাৎপর্য অপরিসীম। সে কারণেই এ মাসটি অধিক মর্যাদাশীল, সম্মানিত ও বরকতময়। শরিয়ত সমর্থিতভাবে এ মাসের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে তার মূল্যায়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত। মহান আল্লাহতা’লা আশুরার দিন ২ হাজার নবী-রাসূলকে দুনিয়াতে পাঠান। আবার এই দিনে ২ হাজার নবী-রাসূলের দোয়া কবুল করেন।
আসুন এই পবিত্র মাসে ধর্মীয় অনুশাসন ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে বিচার-বিশ্লেষণ করে আশুরা উপলক্ষে যেসব অযৌক্তিক কর্ম হয় তা না-করে আশুরার প্রকৃত গুরুত্ব উপলব্ধিপূর্বক হজরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর ধর্ম ও দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবাদত বন্দেগি করে দেশমাতৃকার প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের ও দশের কল্যাণার্থে কাজ করি। পবিত্র মহরমে এই যেন হয় আমাদের লক্ষ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Tohedul ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
এখানে অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়ে, কিন্তু কোরআনুল কারিম থেকে কোনো আয়াত ও হাদীস তুলে ধরা হয়নি! কোআার ও হাদীস থেকে দলিল পেশ করার জন্যঅনুরোধ করছি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন