রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

হান্নান শাহ ছিলেন আপন আলোয় আলোকিত

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ
আবুল হোসেন
মানুষ যে আপন আলোয় আলোকিত হতে পারে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ (অব.) তারই প্রমাণ। তিনি একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব। বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহর (অব.) রাজনৈতিক জীবনও ছিল বর্ণাঢ্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এই নেতা গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফকির আবদুল মান্নান ১৯৬৫-৬৮ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তার ছোট ভাই শাহ আবু নঈম মোমিনুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ছিলেন। বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী আ স ম হান্নান শাহ ১৯৬২ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। এরপর তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিগ্রেড কমান্ডার, চট্টগ্রামের মিলিটারি একাডেমির কমান্ডেন্ট, যশোর স্কুল অব ইনফ্রেন্টি অ্যান্ড টেকটিক্সয়ের প্রধান প্রশিক্ষক, পাকিস্তানের কোয়েটার আর্মি কলেজ অব ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রশিক্ষকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন হান্নান শাহ। ১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনা সদস্যর হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রেসিডেন্টের লাশ ঢাকায় নিয়ে আসেন হান্নান শাহ।
এইচ এম এরশাদ সরকার হান্নান শাহকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। তিনি সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (এপিডি) ও বিএডিসির চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে বিএডিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। রাজনৈতিক জীবনে শুরুতে ১৯৮৩ সালে হান্নান শাহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) এবং ১৯৯৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন।
১/১১ এর কঠিন সময়ে খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আ স ম হান্নান শাহ বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলের সংস্কারপন্থি অংশের ‘কর্মকা-’ ও ‘ষড়যন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সামনে এসে সাহসী কণ্ঠে কথা বলে দেশ-বিদেশে দলের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি। জনসম্মুখে দলীয় কাজ করতে না পারলেও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন। এছাড়া এক এগারোর দুই বছর মিডিয়াতে হান্নান শাহ’র ছিল বিএনপির পক্ষে সরব উপস্থিতি।
একদিকে বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া যখন সংস্কারবাদী হিসেবে দল থেকে আলাদা ধারা তৈরি করেছিলেন তখন হান্নান শাহ মূলত মিডিয়ার মাধ্যমে সংস্কারবাদীদের বিভিন্ন পদক্ষেপের জবাব দিয়ে গেছেন। বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার দিন দলীয় মহাসচিব বদলসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো বেগম জিয়ার পক্ষে জাতির সামনে তুলে ধরেছিলেন হান্নান শাহ। ২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে আ স ম হান্নান শাহ সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ষষ্ঠ কাউন্সিলেও তিনি এই পদে পুননির্বাচিত হন। দুইবার গাজীপুর ৪ আসন (কাপাসিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হান্নান শাহ। খালেদা জিয়ার সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে আ স ম হান্নান শাহ কয়েকবার কারাগারে যান। একইভাবে বর্তমান সরকারের আমলেও তাকে কয়েকবার কারাগারে যেতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি মিথ্যা মামলা রয়েছে। আ স ম হান্নান শাহ’র মৃত্যুতে শোকাহত বিএনপি। তার মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি গভীরভাবে শোকাহত। হান্নান শাহ’র মৃত্যুতে দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোকবার্তায় বলেছেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও আমার বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান। তার এভাবে চলে যাওয়াটা শুধু বিএনপির জন্য ক্ষতি নয় বরং দেশবাসী জাতীয় স্বার্থ রক্ষার একজন নিবেদিত অধিনায়ককে হারালো। জাতি হারালো এক সাহসী সন্তানকে। এ বেদনা ও শোকের কোনো পরিমাপ নেই।’ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অসময়ে হান্নান শাহ’র চলে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনো মাথানত করেননি। মানুষের অধিকার আদায়ে আজীবন লড়াই করে গেছেন।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান জানান, দেশের ক্রান্তিকালে এবং বিএনপির এই কঠিন সময়ে আ স ম হান্নান শাহ ছিলেন বিএনপির নিবেদিত প্রাণ। অকুতোভয় সৈনিক। তার শূন্যস্থান পূরণ করার নয়।
পরিশেষে বলছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আ স ম হান্নান শাহ ছিলেন জাতীয়বাদী প্রতিটি কর্মীর প্রেরণা। দল ও দেশের প্রয়োজনে তার অসীম সাহসী ভূমিকাই তাকে আমাদের মাঝে অমর করে রাখবে।

য় লেখক : সদস্য নির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), সিনিয়র সহ-সভাপতি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও সভাপতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ পরিষদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জুনাইদ হোছাইন ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১:৪৬ পিএম says : 0
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহের মৃত্যূতে জাতি একজন জাতীয়তাবাদী নেতাকে হারালেন। আজ উনার মতো মানুষের বেশি প্রয়োজন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন