বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়েছেন শিল্পীরাও

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান শত্রুতা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় ছবিতে পাকিস্তানিদের কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বলিউডের ছবি পাকিস্তানের বড় বড় সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শন বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই যুদ্ধংদেহী প্রতিবেশীর মধ্যে বর্তমান বৈরিতার প্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার্স প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইএমপিপিএ) সম্প্রতি পাকিস্তানি অভিনেতা, গায়ক ও টেকনিশিয়ানদের ভারতীয় সিনেমায় কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খবর ডি ডব্লিউ। অ্যাসোসিয়েশন পাকিস্তানি অভিনেতা ও টেকনিশিয়ানদের পরিস্থিতি শান্ত ও দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানি অভিনেতা ও টেকনিশিয়ানদের নিষিদ্ধ করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং তা যদি যথেষ্ট না হয় সে জন্য মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) এক কড়া নির্দেশ জারি করে পাকিস্তানি অভিনেতাদের ভারত ত্যাগ অন্যথায় তার পরিণতি বরণ করার জন্য হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।
এমএনএস-এর এক নেতা অ্যামে খপকার বলেন, পাকিস্তান যেদিন সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করবে সেদিনই শুধু আমরা বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করব। তিনি বলেন, হামলার পর পাকিস্তানি অভিনেতাদের কেউ তার নিন্দা করেনি। আমরা শিল্প ও সিনেমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি না, আমরা পাকিস্তানি অভিনেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নাজুক পরিস্থিতি
গত দু’মাস ধরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ে আছে। ৮ জুলাই ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরের তরুণ স্বাধীনতাকামী নেতাকে হত্যা করার পর থেকে সেখানে ব্যাপক ভারতবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়।
ভারত বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমন করতে শুরু করলে পাকিস্তান তাদের নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তার পাল্টা জবাবে নয়াদিল্লি কাশ্মীরে ভারতবিরোধী মনোভাব ও বিক্ষোভে উস্কানি দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে। ভারত পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশের বিষয় উত্থাপন করে সে প্রদেশে সন্ত্রাসবাদ ও মানবাধিকার লংঘনের জন্য ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীর সীমান্তের উরিতে একটি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে বিপুল অস্ত্রসজ্জিত ৪ জন সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা চালালে ১৯ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কথা, হামলাকারী বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে ভারতীয় কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করেছিল।
ভারত গত সপ্তাহে এ হামলার জবাব দেয়। ভারত ঘোষণা করে যে, তারা পাকিস্তানের জঙ্গি শিবিরগুলোতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে এবং পাকিস্তান অংশে সন্ত্রাসীদের হামলা শুরুর জায়গাগুলো ধ্বংস করাসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
পাকিস্তান এ ধরনের হামলার কথা অস্বীকার করেছে। আরো কথা হলো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানকে কাশ্মীরের সাথে অবিচ্ছেদ্য বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। এ প্রেক্ষিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরিস্থিতি নাজুক রয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটেই পাকিস্তানি শিল্পীদের প্রতি আইএমপিপিএ-র নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিছু ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এ বর্জনকে সমর্থন করেছেন। যেমন নানা পাটেকর ও রণদীপ হুদা বলেছেন, সবকিছুর আগে দেশ এবং এ ক্রান্তিলগ্নে সাংস্কৃতিক বিনিময় কোনো অর্থ বহন করে না।
২ অক্টোবর নানা পাটেকর বলেন, আমি আমার দেশ ছাড়া আর কিছু জানি না। একটি দেশের কাছে একজন শিল্পী খুবই ক্ষুদ্র বিষয়। যখন দেশের প্রশ্ন আসে তখন শিল্পী হিসেবে আমরা মূল্যহীন।
চলচ্চিত্র প্রযোজক মাধুর ভান্ডারকরও এ নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, আপনি যখন আমাদের সৈন্যদের নিহত হতে দেখছেন এবং সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে.... আমি মনে করি এখানে কর্মরত বহু পাকিস্তানির বছরের পর বছর ধরে ভারতের ওপর হামলার নিন্দা করা উচিত।
শিল্পী, সন্ত্রাসী নয়
কিন্তু কিছু ভারতীয় অভিনেতা খোলাখুলিভাবে পাকিস্তানি অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পীদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন এ যুক্তিতে যে, রাজনীতি ও শিল্পকে মিশিয়ে ফেলা উচিত নয়।
চলচ্চিত্র নির্মাতা করণ জোহর রাখঢাক না করে বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের শিল্পীদের বর্জন করা সন্ত্রাসবাদের কোনো সমাধান নয়। তার আসন্ন ছবি ‘এ দিল হ্যায় মুশকিল’-এর নায়ক পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান। এ ছবিটি এমএনএস-এর বিক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
জোহর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি আমাদের চার পাশ ঘিরে থাকা ক্রোধ ও ক্ষোভ বুঝি। আমি সমব্যথী, নিহতদের জন্য আমার হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কোনো কিছুই সন্ত্রাসের এ ভয়ঙ্কর উপলব্ধিকে যৌক্তিকতা দিতে পারে না। তারপর আপনি এ ধরনের (পাকিস্তানি শিল্পীদের নিষিদ্ধকরণ) পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এটা যদি আসলেই সমাধান হয় তাহলে যে কেউই তা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। আমি তা মনে করি না। বড় শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে হবে। তা মেধা বা শিল্পকে নিষিদ্ধ করে হতে পারে না।
এমনকি সুপারস্টার সালমান খানও এতে জড়িয়েছেন। তিনি বলেন, তারা শিল্পী। আমরা সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছি। শিল্পীরা সন্ত্রাসী নন। এ দু’টি পৃথক বিষয়। তারা ভিসা নিয়েই এ দেশে এসেছে এবং আমাদের সরকার তাদের এ দেশে কাজ করার ওয়ার্ক পারমিট দিয়েছে।
অন্যরা যেমন বিশিষ্ট অভিনেতা সুরেশ ওবেরয় ও চিত্র নির্মাতা মহেশ ভাটও জোর দিয়ে বলেছেন যে, শিল্পীদের সাথে সন্ত্রাসীদের মতো ব্যবহার করা উচিত নয়।
সঙ্গীত অ্যালবাম থেকে প্লেব্যাক গায়ক, কয়েকটি বড় ভারতীয় প্রকল্পে কয়েকজন সুপরিচিত পাকিস্তানি শিল্পী জড়িত রয়েছেন। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রাহাত ফতেহ আলি খান, আলি জাফর ও আতিফ আসলামের মতো কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি।
ভারতীয় গায়ক ও সঙ্গীতজ্ঞ বিদ্যা শাহ ডি ডব্লিউকে বলেন, যে কোনোভাবেই হোক না কেন সঙ্গীত মানুষকে কাছে নিয়ে আসে। শিল্পীদের নিষিদ্ধ করা অর্থহীন।
পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্ক চরমভাবে শীতল হওয়ার পর পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারতে অনুষ্ঠান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছর হিন্দু উগ্রপন্থীরা কোনো পাকিস্তানি শিল্পীর গান গাইতে দেয়ার বিরোধিতা করায় গজলের উস্তাদ গুলাম আলি দু’টি শহরে অনুষ্ঠান করতে পারেননি।
পাকিস্তানের পাল্টা ব্যবস্থা
পাকিস্তান পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানের সিনেমা হলগুলোতে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে। পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশক গ্রুপ এক বিবৃতিতে বলে, আইএমপিপিএ কর্তৃক পাকিস্তানি শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। সে কারণে পাকিস্তান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রধান কর্মকর্তারা স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত ভারতীয় ছবি প্রদর্শন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পাকিস্তানে ভারতীয় সিনেমা অত্যন্ত জনপ্রিয়। বহু ছবির পাইরেটেড সিডি সেখানে বিক্রি হয়। সাম্প্রতিককালে কেবল নেটওয়ার্ক অপারেটররা টিভিতে হিন্দি ছবি প্রদর্শন করছে এবং দু’টি পাকিস্তানি এফএম চ্যানেল প্রতিদিন হিন্দি ছায়াছবির গান প্রচার করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন