শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তাকওয়া অর্জন করতে হবে

খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে। অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে তাকওয়ার ভূমিকা অপরিহার্য। আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।’ গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে মসজিদের খতিব এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলিফারূপে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জমিনে খলিফা সৃষ্টি করব’। সূরা বাকারা : ৩০। এ কথা বলাবাহুল্য যে, যিনি খলিফা হবেন তিনি অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, ‘আমি মানুষ ও জ্বীনকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ মানুষ সৃষ্টি করেই আল্লাহ তায়ালা দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছেন। দায়িত্বের যখন জবাবদিহিতা থাকে, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা সুচারুরূপে ও সঠিকভাবে আদায় করার প্রয়াস চালায়।

জবাবদিহি হ্রাস পেলে মানবজীবনে অধঃপতন নেমে আসে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জমিন ও আসমানের কোনো কিছুই গোপন থাকে না।’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত : ৫)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন দায়িত্ব পালনে সচেতন হব। তেমনি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে হতে হবে প্রত্যয়ী। সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরা সচেষ্ট হব। এছাড়া পরস্পর হিংসাবিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি, মিথ্যা, ধোঁকা, প্রতারণা, এবং গুজব ছড়ানোর মতো দায়িত্বহীন আচরণ হতে আমরা সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকব। একজন দায়িত্বশীল মানুষকে অবশ্যই সচেতনার পরিচয় দিতে হয়।

ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনাররি খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভ‚মিকা পালন করে। খতিব বলেন, তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা বা সতর্ক থাকা। আত্মশুদ্ধি, বেঁচে থাকা, আত্মরক্ষা, সংযত হওয়া, ভয় করা প্রভৃতি। তবে সাধারণভাবে তাকওয়া ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহভীতি’ অর্থে। ইমাম গাযালি বলেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে যাবতীয় অসৎকর্ম বর্জন করে সৎকর্ম সম্পাদনই হলো তাকওয়া।’ তাকওয়া বা খোদভীতির প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা দরকার ঠিক তেমন ভয় করতে থাক এবং পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’ (আলে ইমরান : ১০২)।

আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান ৩ : ৭৬) তাকওয়াবিহীন ইবাদত মূল্যহীন ও কবুলের অযোগ্য। আল্লাহ বলেন- ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা হাজ্জ ২২ : ৩৭) কাজেই ইবাদতের মূলবিষয় হলো তাকওয়া। তাকওয়া ব্যক্তিকে তার সকল দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে। তাকওয়া মানুষকে সুশীল, শোভন ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। যা তাকে সবার ভালোবাসার পাত্রে পরিণত করে। তাকওয়াবান মানুষ অন্যায়, অবিচার, পাপাচারমুক্ত জীবনযাপন করে বলে তাদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। তাকওয়া ব্যক্তিকে কর্তব্যে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে বলে সমাজের উন্নতি সাধিত হয়। তাকওয়া ব্যক্তিকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটি তাকওয়ার অতি নিকটবর্তী।’ (সূরা মায়িদা ৫:৮)। তাকওয়া অবলম্বনকারীর পুরস্কার ও ফজিলত ঘোষণা করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন। তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।’ (আনফাল : ২৯) তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এব প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে তার স্থান হবে জান্নাত।’ (সূরা নাযিআত ৭৯ : ৪০-৪১) সুতরাং তাকওয়া জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা দেয়।
খতিব বলেন, অপরাধমুক্ত ও সুশৃঙ্খল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনেও তাকওয়ার ভ‚মিকা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ আমাদের তাকওয়া অর্জন করার তৌফিক দিন- আমিন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরি বছরের দ্বিতীয় মাস সফর মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। আরবি ‘সফর’ অর্থ শূন্য, খালি, রিক্ত। ক্রিয়াভেদে কেউ কেউ অর্থ করেছেন ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য, হলদেটে, তামাটে, বিবর্ণ ইত্যাদি। সে সময় আরবে সফর মাসে প্রচন্ড খরা হতো। ফলে মঙ্গা, খাদ্যাভাব দেখা দিত। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাতে রক্তশূন্যতা ও ফ্যাকাশে ভাব পরিলক্ষিত হতো। এজন্য অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে তারা এই মাসকে ‘আস সাফারুল মুসাফফার’ অর্থাৎ বিবর্ণ সফর মাস বলতো। জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবরা এই মাসকে দুঃখের মাস মনে করে এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকত। অথচ ইসলামের বিধান হচ্ছে, সময়ের সাথে কোনো কল্যাণ-অকল্যাণ নেই। সব ধরনের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এটাই ঈমান। এর উপর দৃঢ়বিশ্বাস এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। কারণ শিরকযুক্ত ঈমান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে শরিক করে। ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে, সে যেন আল্লাহর প্রতি মারাত্মক অপবাদ আরোপ করল।’ (সুরা-নিসা, আয়াত : ৪৮)। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র শিরককে মহাজুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। খতিব আরও বলেন, শিরকযুক্ত কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। এছাড়া গাইরুল্লাহর নামে মান্নত করা, মাজারে সেজদা দেয়া, পীরের কাছে সন্তান চাওয়াও মারাত্মক শিরক ও কবিরা গোনাহ। আল্লাহ তায়ালা যেন এসব কাজে থেকে আমাদের হেফাজত করেন- আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dadhack ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:৫৩ এএম says : 0
আপনারা সব আলেমরা একসাথে কেন হন না ?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন