শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুসলিমকে হত্যার জন্য যিয়াদ ইয়াছারকে নিয়োগ করে

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্শী : মুসলিম বিন আকীলকে খুঁজে বের করা ও তাকে হত্যা করার জন্য মা’কাল বিন ইয়াছার নামে এক সুচতুর গুপ্তচরকে নিয়োগ করলো ইবনে যিয়াদ। এই মা’কাল অনেক চেষ্টা ও তদ্বিরের পর ইবনে হানীর বাড়িতে ইমাম মুসলিমের দরবারে উপস্থিত হতে সক্ষম হয়। ইমাম মুসলিমের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে প্রতিদিন সে তার খেদমতে হাজির হতে লাগলো। এতে করে সে ইমাম মুসলিম ও তার সমর্থকদের যাবতীয় পরিকল্পনা সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করলো। কিন্তু ইমাম পক্ষীয়গণ তার বাহ্যিক আচার-ব্যবহার ও ভক্তির আধিক্য লক্ষ্য করে কখনো তার প্রতি সন্দেহ পোষণ করেনি। তাছাড়া নতুন সংগঠনের কাজে কর্মীগণ এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, মা’কালের গোপন উদ্দেশ্য সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার মত অবকাশ ও সুযোগ তাদের ছিল না। সুতরাং মা’কাল আপন অভীষ্ট লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায় এবং সমময়মতো সকল তথ্য ইবনে যিয়াদের কাছে প্রেরণ করে। কুফার শারীফ বিন আওয়ার ছিলেন একজন বিখ্যাত নেতা। তিনিও আহলে বাইতের ভক্ত ও অনুরক্ত ছিলেন। ঘটনাক্রমে তিনিও হানীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইবনে যিয়াদ হানীর বাড়িতে শারিফকে দেখার জন্য উপস্থিত হলো। প্রথমত ইমাম মুসলিম ইবনে যিয়াদকে হত্যা করতে মনস্থ করলেও শেষ পর্যন্ত তা করলে না। ইবনে যিয়াদ এভাবে ইমাম মুসলিমের মূল ঘাঁটি সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল হতে পারলো। ইত্যবসরে ইবনে যিয়াদ হানীকে দরবারে নিয়ে আসার জন্য কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচর প্রেরণ করলো। হানী নির্ভিকচিত্তে দরবারে এলেন। কারণ, সত্যাশ্রয়ী মন কখনো ভীতু হতে পারে না। সত্যের উজ্জ্বল আলোকে সর্বদাই তার অন্তর প্রদেশ সমুজ্জ্বল থাকে।
ইবনে যিয়াদ তার কয়েকজন অনুচর হানীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালাতে লাগলো। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হানীর সমর্থকগণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গভর্ণর ভবন আক্রমণ করলো। ইবনে যিয়াদ কোনক্রমে আত্মরক্ষা করতে লাগলো। পরিশেষে কাজী শোরাইহ-এর মধ্যস্থতায় ইবনে যিয়াদ প্রাণে রক্ষা পায়। হানীর দুরবস্থার কথা শুনে ইমাম মুসলিম আর স্থির থাকতে পারলেন না। তার সমস্ত শরীরে প্রবহমান রক্তে জোশ দেখা দিল। তিনি তার সমর্থণকারীদের নিয়ে ইবনে যিয়াদকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন। ইবনে যিয়াদ ইমাম মুসলিমের বাহিনী কর্তৃক পরিবেষ্টিত হলো। কিন্তু কুফার অধিবাসীগণ রাতের অন্ধকারে ইমাম মুসলিমকে পরিত্যাগ করে সবাই পালিয়ে গেল। ইমাম মুসলিম এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়লেন। কুফাবাসীদের বিশ্বসঘাতকতায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হলেন। অবশেষে তিনি তাওয়া নামে এক মহিলার গৃহে আত্মগোপন করেন।
ইবনে যিয়াদের সম্মুখ হতে সকল বেড়াজাল ছিন্ন হয়ে গেল। এবার সে ইমাম মুসলিমের উপর প্রতিশোধ নিতে সংকল্প বন্ধ হলো। সে কুফার সর্বত্র গুপ্তচর প্রেরণ করলো। পরিশেষে তাওয়ার গৃহে ইমাম মুসলিম অবস্থান করছেন, একথা প্রকাশ হয়ে গেল। ইবনে যিয়াদ একদল শিক্ষিত সৈন্যকে প্রেরণ করলো যেন তারা ইমাম মুসলিমকে বন্দী করে নিয়ে আসে। ইমাম মুসলিম অবস্থা আঁচ করতে পেরে তরবারী হাতে শত্রুর সম্মুখীন হলেন। শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে ইমাম মুসলিম একাকী অসি চালনা করতে লাগলেন। তার শাণিত তরবারীর আঘাতে বহু শত্রু সৈন ধরাশায়ী হলো। কিন্তু শত্রু পক্ষের আঘাতে তারা সর্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। তবুও তিনি রক্তাক্ত কলেবরে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি শত্রুদলের কাছে ধরা পড়লেন। তাকে খচ্চরের পিঠে চড়িয়ে ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হলেন। তার চোখে যেন একটি বিদ্যুৎলহমা খেলে বেড়াতে লাগলো। এভাবেই তাকে নিরস্ত্র ও ক্ষতবিক্ষত দেহে ইবনে যিয়াদের সামনে আনা হলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন