খুলনা জেলা কারাগারে সার্বক্ষণিক নামাজ ও ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে সময় কাটছে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের। আজ রোববার একটি মামলায় তিনি খুলনার আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। আগামীকাল (৬ সেপ্টেম্বর) সোমবার সকালে তাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পূনরায় কাসিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হবে। মামলায় হাজিরার কারণে শুক্রবার তাকে ওই কারাগার থেকে খুলনায় আনা হয়। দৈনিক ইনকিলাবকে এ তথ্য জানিয়েছেন খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মাদ ওমর ফারুক।
কারাগার সুপার জানান, মাওলানা মামুনুল হককে কারাগারের বিশেষ সেলে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে তিনি কথা বলছেন না। ওয়াক্ত মত নামাজ পড়ছেন। পুরো সময়টা তিনি ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছেন। আজ রোববার সকালে খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এসএম আশিকুর রহমানের আদালতে কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানায় ২০১৩ সালে দায়ের হওয়া একটি বিস্ফোরক মামলায় তিনি হাজিরা দেন। আদালত এ মামলার চার্জ গঠনের দিন ১০ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন। হাজিরা শেষে বেলা ১২ টার দিকে তাকে কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এদিকে, আদালতে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা জেলা কারাগারের সূত্র জানিয়েছে, মাওলানা মামুনুল হকের জন্য খুলনা জেলা কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাকে সাধারণ বন্দিদের সাথে না রেখে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সেলে রাখা হয়েছে এবং যে সেলে রাখা হয়েছে তার সামনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এছাড়াও কারাগারের প্রধান ফটকের রিজার্ভ গার্ডে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ।
মামলাটির বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌশলী কে এম ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সোয়া চারটার দিকে খুলনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল, গ্রেপ্তারকৃত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি ও সরকার বিরোধী শ্লেগান দিয়ে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামীসহ ১২ দলের প্রায় ৩ হাজার নেতা কর্মী মিছিল বের করে। মিছিলটি নগরীর ডাকবাংলা ও ময়লাপোতা মোড় হয়ে শিববাড়ি মোড়ে গণজাগরণ মঞ্চের দিকে যাচ্ছিল। শিববাড়ি ফুজি কালার ল্যাবের সামনে পৌঁছালে পুলিশী বাঁধার সম্মুখীন হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা মিছিলের মধ্য থেকে পুলিশের ওপর ককটেল বোমা ও গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে সেখান থেকে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। এ ঘটনায় সোনাডাঙ্গা থানায় খুলনা মহানগর ইমাম পরিষদের কয়েকজন নেতা ও হেফাজত ইসলামীর নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ ২৬ জনের নামে ওই দিনই সোনাডাঙ্গা থানার এসআই আলমগীর কবীর বাদী মামলা দায়ের করেন, যার নং ২৩।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার আগের দিন ময়লাপোতা মসজিদ মোড়ে ওয়াজ করার সময় হাফেজ মামুনুল হকসহ অন্যান্যরা সংগঠিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুরসহ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুসারিদের নির্দেশ প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ মোক্তার হোসেন মোট ১০৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মন্তব্য করুন